বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ভেটেরিনারি অনুষদের উদ্যোগে বিশ্ব দুগ্ধ দিবস-২০২৫ পালিত হয়েছে। “আসুন দুগ্ধশিল্পের শক্তি উদযাপন করি”- প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে অনুষদটি প্রথমবারের মতো দিবসটির আয়োজন করেছে।
রবিবার ১ জুন বর্ণাঢ্য আয়োজনের মাধ্যমে দিবসটির আয়োজন করে ভেটেরিনারি অনুষদ। দিবসটি উপলক্ষে ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থীর দুগ্ধ দিবস উপলক্ষে পোস্টার প্রেজেন্টেশন, ভেটেরিনারি অনুষদ ভবন-২ এর সামনে থেকে একটি র্যালি, শিশুদের মাঝে দুগ্ধ বিতরণ ও ভেটেরিনারি অনুষদের কনফারেন্স হলে একটি সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
বাকৃবির মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি বিদ্যালয়ে ৩০০ শিশুকে এবং সুতিয়াখালীর একটি এতিমখানায় ২০০ শিশুকে দুগ্ধ বিতরণ করা হয়। দুগ্ধ দিবস ২০২৫ উপলক্ষে ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থীরা ১৫ টি পোস্টার প্রেজেন্টেশন করে এবং এতে ৫৩জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। ওই প্রতিযোগিতায় তিনটি দল বিজয়ী হয়।
প্রথম স্থান অর্জন করেন স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী তাহমিদ এশাদ রূপাইয়ের দল, দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী মো. মোরসালীনের দল এবং তৃতীয় স্থান অর্জন করে তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জনি মজুমদারের দল।
অনুষ্ঠানে বিশ্ব দুগ্ধ দিবস-২০২৫ আয়োজন কমিটি সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. মুহাঃ ইলিয়াছুর রহমান ভূঁইয়ার সঞ্চালনায় সভাপতিত্ব করেন বাকৃবির ভেটেরিনারি অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক ড. ফরিদা ইয়াসমীন বারি।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্রাক এআই এন্টারপ্রাইজের ব্রিড ডেভেলপমেন্ট ও বুল স্টেশনের এজিএম ডা. মোহাম্মদ আব্দুল লতিফ। এছাড়া ভেটেরিনারি অনুষদের বিভিন্ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, শিক্ষক, শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিশ্ব দুগ্ধ দিবস-২০২৫ আয়োজন কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক ড. মো. মোশাররফ উদ্দীন ভূঞা এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মাইক্রোবায়োলজি এন্ড হাইজিন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোছাঃ মিনারা খাতুন।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বৈশ্বিক খাদ্য হিসেবে দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্যের গুরুত্ব তুলে ধরার লক্ষ্যে ২০০১ সাল থেকে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার উদ্যোগে প্রতিবছর ১ জুন দিবসটি আন্তর্জাতিকভাবে পালিত হয়ে আসছে।
সারা বিশ্বে একযোগে প্রায় ১০০টি দেশে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। বিশ্বের প্রায় ১ বিলিয়ন বা ১০০ কোটি মানুষ জীবিকা নির্বাহের জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দুগ্ধশিল্পের উপর নির্ভরশীল।
বিশ্বের প্রায় ৬০০ কোটি মানুষ দুগ্ধজাত পণ্য খাবার হিসেবে গ্রহণ করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে একজন মানুষের দৈনিক ২৫০ মি.লি দুগ্ধ গ্রহণ করা উচিত। তবে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে বাংলাদেশে জনপ্রতি দুগ্ধ প্রাপ্যতা ২৩৪.৪৫ মি.লি।
বক্তারা আরও বলেন, দুধের এই ঘাটতি পূরণে ভেটেরিনারিয়ানদের কাজ করতে হবে। সুস্থ ও উচ্চ উৎপাদনশীল গাভী উৎপাদন করা সম্ভব না হলে দুধের এই ঘাটতি পূরণ সম্ভব হবে না। ভোক্তাদের জন্য নিরাপদ দুধ উৎপাদন করতে হবে।
নিরাপদ দুধ বলতে বুঝায় ব্যাকটেরিয়া মুক্ত, ভারী ধাতু মুক্ত, অ্যান্টিবায়োটিক রেজিডুমুক্ত দুধ উৎপাদন। খালি দুধ উৎপাদন করলেই হবে না, নিরাপদ দুধ উৎপাদন নিশ্চিত করতে হবে। ভেটেরিনারিয়ানরাই পারে এটি নিশ্চিত করতে।
তারা আরও বলেন, দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত পণ্য ভেটেরিনারিয়ানদের মাধ্যমে সার্টিফাইড করতে হবে। এমনকি ভবিষ্যতে দুগ্ধজাত পণ্য রপ্তানি করার ক্ষেত্রেও এটি জরুরি। নিরাপদ দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত পণ্য রপ্তানি করা সম্ভব হলে দেশ প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারবো এবং দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবো।
ভেটেরিনারি অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক ড. ফরিদা ইয়াসমীন বারি বলেন, ভেটেরিনারি অনুষদ প্রথমবারের মতো দিবসটি পালন করছে। অনুষ্ঠানটি গত বৃহস্পতিবার ছাত্রছাত্রীদের পোস্টার প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল।
আজ সকালে বাচ্চাদের দুগ্ধ বিতরণ ও র্যালি অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজকের এই দিনটি পালনের মাধ্যমে, সারা বিশ্বে যে দিবসটি পালিত হয়, তাদের সাথেও আমরা সম্পৃক্ত হচ্ছি। আমাদের দেশে দুধ উৎপাদন বাড়ছে। আশা করি ভেটেরিনারিয়ানরা সেখানে আরও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
উল্লেখ, বাকৃবির পশুপালন অনুষদের ডেয়রি বিজ্ঞান বিভাগের আয়োজনে প্রতিবছরের ন্যায় এবারেও বর্ণাঢ্যভাবে বিশ্ব দুগ্ধ দিবস ২০২৫ পালিত হয়েছে।