উপমহাদেশের প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী রুনা লায়লা। সেরা গায়িকা হিসেবে একাধিকবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভ‚ষিত হওয়া বরেণ্য এই সঙ্গীতশিল্পী কয়েক বছর আগে সুরকার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। স্বামী চিত্রনায়ক আলমগীরের পরিচালনায় ‘একটি সিনেমার গল্প’ সিনেমার মাধ্যমে যাত্রা শুরু করেই সেরা সুরকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন তিনি।
গানের পাশাপাশি সিনেমায় অভিনয় ও বিজ্ঞাপনচিত্রে মডেলিং করার দক্ষতাও রয়েছে বহুমুখী এই প্রতিভার। প্রয়াত পরিচালক চাষী নজরুল ইসলামের পরিচালনায় ‘শিল্পী’ চলচ্চিত্রে নাম ভ‚মিকায় অভিনয় করেন রুনা লায়লা। এতে তার বিপরীতে অভিনয় করেন চিত্রনায়ক আলমগীর। মূলত এই সিনেমায় অভিনয়ের সুবাদেই নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক গাঢ় হয় রুনা লায়লা ও আলমগীরের মধ্যে। একপর্যায়ে এই পরিণয়ে রূপ নেয় তাদের এই প্রণয়। শিল্পী সিনেমাটি মূলত ইংরেজি সিনেমা ‘দ্য বডিগার্ড’-এর ছায়া অবলম্বনে নির্মিত হয়। এতে রুনা লায়লার বডিগার্ড হিসেবে অভিনয় করেন আলমগীর।
এছাড়া অনেক সিনেমার পর্দায় গান গাইতেও দেখা গেছে তবে এরপর রুনা লায়লাকে আর কখনো অভিনয়ে দেখা যায়নি। নিজের গানের বাইরে রুনা লায়লাকে আর কোনো সিনেমাতে পারফর্ম করতেও দেখা যায়নি। যদিও শিল্পী ছবির পর মাঝে-মধ্যেই অভিনয়ের প্রস্তাব পান সঙ্গীতাঙ্গনের জীবন্ত এই কিংবদন্তি, তবে সেসব প্রস্তাব বিনয়ের সঙ্গে ফিরিয়ে দেন তিনি। তাহলে আর কি কোনো সিনেমায় অভিনয় করবেন না এমন প্রশ্নের জবাবে একবাক্যে ‘না’ বলে দিলেন রুনা লায়লা। বললেন, ‘না না , আর কখনো অভিনয় করা সম্ভব নয়। তবে সুর করার ইচ্ছে আছে। অনেক ভালো ভালো কিছু সুর সৃষ্টি করে যেতে চাই। আল্লাহ যেন সুস্থ রাখেন, ভালো রাখেন এই দোয়া চাই।
আরেকটা কথা বিশেষভাবে বলতে চাই, আমাদের দেশে কিন্তু মেধাবী অনেক শিল্পী আছে। কিন্তু তাদেরকে যথাযথভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে না। তাদেরকে কাজে লাগানো হচ্ছে না বলেই তাদের মেধার বিকাশ ঘটছে না। তারপরও কেউ কেউ আছেন নিজেদের মেধা বিকাশের জন্য নিজের মতো করেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তাদের সাধুবাদ জানাতেই হয়। তবে আমি বিশ^াস করি যেসব মেধাবী শিল্পী আছে তারা ভালো সুযোগ পেলে নিজেদের মেধা প্রকাশ করতে পারবে। একজন ভালো ইনভেস্টর প্রয়োজন। আবার এটাও সত্যি যে এই প্রজন্মের শিল্পীদের মৌলিক গানের খুব অভাব। যে কারণে তাদের নির্দিষ্ট কয়েকটি গানের বাইরে আমাদের গানগুলোই সাধারণত গেয়ে থাকে। এটাকে খারাপ বলছি না আমি। কিন্তু তারপরও নিজেদের মৌলিক গানের সংখ্যা বাড়াতে হবে। নিজেদেরকে যথাযথভাবে তৈরি করেই মৌলিক গানের সংখ্যা বাড়াতে হবে।’
নিজের কণ্ঠ দিয়ে, গান দিয়ে সারা পৃথিবীর মানুষের ভালোবাসা পেয়েছেন তিনি। রুনা লায়লা বলেন, ‘এক জীবনে আমি পৃথিবীব্যাপী মানুষের যে শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, সম্মান পেয়েছি এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি বা চাওয়ার আর কিছু থাকতে পারে না। মানুষের ভালোবাসাই আমার সবচেয়ে বড় উপহার। এই উপহার নিয়েই আমি সুস্থ আছি, ভালো আছি। এটাই অনেক বড় সুখ আমার। পৃথিবীব্যাপী মানুষ আমাকে আমার গানকে ভালোবাসছে, এই ভালোবাসাটাই থাকুক আমার জীবনজুড়ে। সঙ্গীত জগতকে ঘিরে আমার মাঝে কোনো অপূর্ণতা নেই। এক জীবনে আল্লাহর অশেষ রহমতে সত্যিই অনেক কিছুই পেয়েছি আমি। মনে প্রাণে মানুষের ভালোবাসা, দোয়ায় আমি পরিপূর্ণ। এখানে আমার অপূর্ণ কিছু নেই। আমি মনে করি এখন আমার আসলে দেবার সময়। যতদিন বাঁচি আমাদের দেশের সঙ্গীতাঙ্গনকে ভালো কিছু দিয়ে যেতে চাই।’
বর্তমানে রুনা লায়লা চ্যানেল আইতে প্রচার চলতি রিয়েলিটি শো ‘সেরাকণ্ঠ ২০২৩’ এর বিশেষ বিচারক হিসেবে কাজ করছেন। রুনা লায়লার কণ্ঠে শেষ প্রকাশিত মৌলিক গান হচ্ছে গাজী মাজহারুল আনোয়ারের লেখা ‘যদি প্রশ্ন করো’ গানটি। এটি সুর করেছিলেন শফিক তুহিন।
উল্লেখ্য, রুনা লায়লা পপ ও আধুনিক গানের মাধ্যমে দ্যুতি ছড়িয়েছেন উপমহাদেশের সঙ্গীত পিপাসুদের মনে। তবে বাংলাদেশের বাইরে গজল শিল্পী হিসেবে ও দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে সুনাম রয়েছে তার। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে থেকেই তিনি প্লে-ব্যাক সিঙ্গার হিসেবে কাজ শুরু করেন। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতীয় এবং পাকিস্তানি চলচ্চিত্রের অনেক গানে তিনি কণ্ঠ দিয়েছেন। রুনা লায়লা বাংলা, উর্দু, পাঞ্জাবি, হিন্দি, সিন্ধি, গুজরাটি, বেলুচি, পশতু, ফার্সি, আরবি, মালয়, নেপালি, জাপানি, স্পেনীয়, ফরাসি, লাতিন ও ইংরেজি ভাষাসহ মোট ১৮টি ভাষায় ১০ হাজারেরও বেশি গান করেছেন। পাকিস্তানে তার গান দমাদম মাস্ত কালান্দার অত্যন্ত জনপ্রিয়। এমনকি ভারতের বিভিন্ন গান কিংবা নাচের অনুষ্ঠানগুলোতেও এই গানটি ব্যবহার করা হয় হরহামেশা।
যাযাদি/ এসএম