শনিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ১১ কার্তিক ১৪৩১

গানের ডন আসিফ আকবর আসছেন নতুন রূপে

বিনোদন রিপোর্ট
  ১১ জুন ২০২৪, ১১:১৬
ছবি-যায়যায়দিন

স্যুট-প্যান্টের সঙ্গে টাই। ব্লেজারের পকেটে বড় আকারের একটি গোলাপ ফুল। চোখে সানগ্লাস। চুলগুলো জেল দিয়ে পরিপাটি করে রাখা। হাতে ভারী অস্ত্র। পরিপাটিতে যেন গানের যুবরাজ। কণ্ঠশিল্পী আসিফ আকবর এমন ডনরূপে হাজির হচ্ছেন একটি মিউজিক্যাল ফিল্মে। গানটির শিরোনাম ‘দ্য লাস্ট ডন’। এটি গাওয়ার পাশাপাশি অভিনয় করেছেন তিনি।

গত শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসিফ লিখেছেন, ‘একজন গায়ক গান গায়, আনন্দের জীবন। তার চোখে ধরা পড়তে থাকে যাপিত জীবনের নিকৃষ্ট অংশগুলো। সে নিজেও সেই নোংরা সমাজের একটি অংশ। বিচারের বাণী কাঁদছে নিভৃতে, ডন আইন তুলে নেয় নিজের হাতে। শিশু ধর্ষণ ও পাচার, তাদের অঙ্গ কর্তন করে ভিক্ষাবৃত্তিতে বাধ্য করা এবং নারীপাচারসহ মানবপাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে আমরা তৈরি করেছি ‘দ্য লাস্ট ডন’! গায়ক হিসেবে আমি সর্বোচ্চ ন্যায়বিচার চাইতে পারি কথা, সুরে ও গানে।’

আসিফের বিবরণে এটা স্পষ্ট যে, ডন হলেও অন্যায়ের প্রতিবাদকারী একটি চরিত্র রূপায়ণ করেছেন তিনি। গল্প ভাবনা তারই। সম্প্রতি ঢাকার বিভিন্ন লোকেশনে এর শুটিং হয়েছে। এটি নির্মাণ করেছেন সৈকত নাসির। আগামী ১৭ জুন ঈদের দিন বিকাল ৪টায় আসিফ আকবরের ইউটিউব চ্যানেলে অবমুক্ত হবে মিউজিক্যাল ফিল্ম ‘দ্য লাস্ট ডন’। গানটি লিখেছেন সুহৃদ সুফিয়ান। সঙ্গীত পরিচালনায় জাভেদ আহমেদ কিসলু।

২০১৭ সালে আসিফ আকবরকে মডেল হিসেবে তুলে ধরে তারই গাওয়া ‘আগুন’ গানের ভিডিও নির্মাণ করেন সৈকত নাসির। তার মতে, এটি ভিডিওর নতুন বাজার তৈরিতে সহায়ক হয়েছিল। নতুন মিউজিক্যাল ফিল্ম আরেকটি উদাহরণ স্থাপন করবে বলে তিনি আশাবাদী।

গান পাগল আসিফ আকবরের জীবনের অনেক গল্পই জানেন তার ভক্তরা। ২০০১ সালে প্রথম অ্যালবাম ‘ও প্রিয়া তুমি কোথায়’ প্রকাশ করেই রাতারাতি তারকা বনে যান আসিফ আকবর। তার এই অ্যালবামটি দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিক্রিত অ্যালবাম বলে স্বীকৃত। সে সময় সর্বত্রই মানুষের মুখে ফিরত আসিফের এ অ্যালবামের গান। বিশেষ করে জনপ্রিয়তা পেয়েছিল ‘ও প্রিয়া তুমি কোথায়’, ‘চোখেরই জলে লেখা’, ‘ক্ষমা করে দিও আমাকে’, ‘জ্বালা জ্বালা এই অন্তরে’ শিরোনামের গানগুলো। এখনো মানুষের মুখে মুখে ফেরে সেসব গান।

এই অ্যালবামের সাফল্যের পর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি আসিফ আকবরকে। একের পর এক গানের একক, মিক্সড চলচ্চিত্র যেখানেই গান করেছেন আসিফ সেখানেই তার গান লুফে নিয়েছেন শ্রোতারা। কয়েক বছর থেকে সমান তালে গানের ভিডিও প্রকাশ করে যাচ্ছেন তিনি। মিউজিক ভিডিওতেও নানা চরিত্রে অভিনয় করে তাক লাগিয়েছেন আসিফ আকবর।

বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে গান গেয়েও নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন ক্রিকেট পাগল এই গায়ক। তার ‘বেশ বেশ বেশ-সাবাশ বাংলাদেশ’ গানটি জনপ্রিয়তার বিচারে বাংলাদেশ ক্রিকেটের অঘোষিত থিম সং-এ পরিণত হয়েছে। পৃথিবীর যে প্রান্তেই খেলা হোক, সেখানে বাংলাদেশিরা থাকলে আসিফের এই গানটি বাজতে শোনা যায়। ক্যারিয়ারে অসংখ্য স্বীকৃতি তিনি অর্জন করেছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সেরা শিল্পী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ বিভিন্ন পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। তবে প্লে-ব্যাকের ক্ষেত্রে বলা চলে হঠাৎই যেন পিছিয়ে পড়েছেন তিনি। অথচ গানে যে টপ ফর্মে ছিলেন তিনি তাতে করে এই সময়ে একগাদা জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়ার মতো প্লে-ব্যাক করতে পারতেন। তারপর পরবর্তী যেসব প্লে-ব্যাক শিল্পী আসেন তাদের অধিকাংশই না আছে মেলোডি না আছে গীতল কথা। অথচ তারাই নিয়ে যাচ্ছেন প্লে-ব্যাকের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। বলার অপেক্ষা রাখে না বিগত কয়েক বছরে প্লে-ব্যাক শিল্পটি একেবারে যাচ্ছেতাই হয়ে গেছে। এখন যেমন সুরকার তেমন গায়ক মিলে বেসুরো হয়ে সেই আলাউদ্দিন আলী, আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল, সুবীর নন্দী, এন্ড্রু কিশোরের প্লে-ব্যাক ইন্ড্রাস্ট্রিটি একেবারে নেই করে দিয়েছে সব।

তাই ‘বিভক্তি আর বিভাজনের আগ্রাসনে’ দেশের সঙ্গীত এখন ‘কোমায়’ চলে গেছে বলে মনে হচ্ছে শিল্পী আসিফ আকবরের কাছে; সঙ্গীত ও শিল্পীকে বাঁচিয়ে রাখতে রাষ্ট্রের সহযোহিতা চেয়েছেন তিনি।

কিছু দিন আগে অস্কার জয়ী ভারতীয় সুরকার এ আর রহমানের মুম্বাইয়ের স্টুডিওতে গান রেকর্ড করেছেন আসিফ। এ আর রহমানের ‘কে এম’ স্টুডিওতে গান রেকর্ডের পর ভারত ও বাংলাদেশের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির পার্থক্য তুলে ধরে তিনি ফেইসবুকে এক পোস্টে ওই আবেদন রেখেছেন।

ফেসবুকে আসিফ লিখেছেন, ‘মুম্বাই এসেছি কিছু রেকর্ডিংয়ের কাজে। দুটো গানের ভয়েস দিলাম শ্রদ্ধেয় এ আর রেহমান স্যারের স্টুডিওতে। কমপক্ষে পনেরো হাজার স্কয়ার ফিটের সুবিশাল স্টুডিও। ভিতরে ঢুকেই মনটা ভালো হয়ে গেল, কি চমৎকার পরিবেশ! ‘যারা উনার কাছে মিউজিক ক্লাস করেন, তাদের জন্য ছাদে শেড দেওয়া সুন্দর খোলামেলা স্কুল। উনার ব্যক্তিগত স্টুডিওতে গাওয়ার অনুমতি পেয়েছি, এটা পরম সৌভাগ্য আমার জন্য। ভয়েস রুমের টেম্পারেচার কেমন হওয়া উচিত সেটার অভিজ্ঞতাও পেলাম।’ বাংলাদেশের গান রেকর্ডিংয়ের স্টুডিওগুলোর বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আক্ষেপ ঝরেছে আসিফের কথায়।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে পেশাদার রেকর্ডিং স্টুডিওগুলো সব বন্ধ হয়ে গেছে। সেখানে তৈরি হয়েছে সুউচ্চ বিল্ডিং। বাসাবাড়িতে বা ছোট খুপরির মতো সব স্টুডিও বানিয়ে মাটি কামড়ে মিউজিক করছে মিউজিশিয়ানরা।’ এই শিল্পীর কথা হল, যেখানে ইন্ডাস্ট্রি দিনে দিনে আরো বড় হওয়ার কথা, সেখানে সঙ্কুচিত হয়েছে। আসিফের মনে হয়েছে, ভারতে শিল্পী-সুরকারদের পেশাগত নিরাপত্তার চমৎকার সুরক্ষা তৈরি করে রাখা হয়েছে, যার ধারে কাছে নেই বাংলাদেশ।

‘রাষ্ট্রীয় কিছু উদ্যোগ থাকলেও চামচিকা আর উলু খেয়ে ফেলে সব। সমিতি আর নির্বাচনী কাবাডি খেলা নিয়ে ব্যস্ত সবাই। আস্তে আস্তে ক্ষয়ে গেছে সব প্রতিষ্ঠান। আমারও খুব একটা কিছু করার সক্ষমতা নেই। বিভক্তি বিভাজনের করাল গ্রাসে কোমায় চলে গেছে ইন্ডাস্ট্রি। সঙ্গীতকে ভালবেসে ফেলেছি, তাই টিকে থাকার সংগ্রামে আছি।’

সম্প্রতি ভারতের নন্দিত গায়িকা অনুরাধা পাড়োয়ালের সঙ্গে একটি দ্বৈত গান শ্রোতাদের উপহার দিয়েছেন আসিফ। এর শিরোনাম ‘চিরদিনের জীবনসঙ্গিনী’। এটি লিখেছেন কবির বকুল, সুর ও সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন যুক্তরাজ্যের বাসিন্দা রাজা কাশেফ। ফ্রান্স ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান বিলিভ মিউজিক থেকে এর মিউজিক ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে। এটি নির্মাণ করেছেন সৌমিত্র ঘোষ ইমন। এতে আসিফের সঙ্গে মডেল হয়েছেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী সাবা বশির।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে