সেই কবেই শিল্পী চলে গেছেন আর না ফেরার দেশে।
তার গান রয়ে গেছে এ বাংলার মাটি ও মানুষের প্রাণে-প্রাণে। ‘আমার এ দুটি চোখ’, ‘বন্ধু হতে চেয়ে’, ‘আমি বৃষ্টির কাছ থেকে কাঁদতে শিখেছি’, ‘চাঁদের কলঙ্ক আছে’, ‘দিন যায় কথা থাকে’, ‘একটা ছিল সোনার কন্যা’, ‘হাজার মনের কাছে’, ‘কত যে তোমাকে বেসেছি ভালো’, পাহাড়ের কান্নাসহ অসংখ্য জনপ্রিয় গান তিনি রেখে গেছেন শ্রোতাদের জন্য। প্রেমে-বেদনায় তার গান ফিরে ফিরে বাজে মানুষের মুখে।
কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী সুবীর নন্দীর ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০১৯ সালের ৭ মে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
সুবীর নন্দী ১৯৫৩ সালের ১৯ নভেম্বর হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং থানায় নন্দীপাড়া নামক মহল্লা এক সংগীত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি ভাই-বোনদের সঙ্গে শাস্ত্রীয় সংগীতে তালিম নিতে শুরু করেন ওস্তাদ বাবর আলী খানের কাছে। তবে সংগীতে তার হাতেখড়ি মায়ের কাছেই।
১৯৭০ সালে সুবীর নন্দী গানের জগতে আসেন ঢাকা রেডিওতে প্রথম রেকর্ডিং এর মধ্য দিয়ে। প্রথম গান ‘যদি কেউ ধূপ জ্বেলে দেয়’। গানটির গীত রচনা করেন মোহাম্মদ মুজাক্কের এবং সুরারোপ করেন ওস্তাদ মীর কাসেম।
৪০ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে সুবীর নন্দী গেয়েছেন আড়াই হাজারেরও বেশি গান। বেতার থেকে টেলিভিশন, তারপর চলচ্চিত্রে গেয়েছেন অসংখ্য জনপ্রিয় গান।
১৯৭৬ সালে আব্দুস সামাদ পরিচালিত ‘সূর্যগ্রহণ’ দিয়ে প্রথম চলচ্চিত্রে গান করেন তিনি।
চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দিয়েছেন তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য- মা, অশিক্ষিত, দিন যায় কথা থাকে, বন্ধু, বদলা, আমির ফকির, মাটির মানুষ, অংশিদার, প্রতিজ্ঞা, রাজার রাজা, দেবদাস, রাম রহিম জন, মহানায়ক, চন্দ্রনাথ, শুভরাত্রি, শুভদা, কাজললতা, লাল গোলাপ, পরিণীতা, রাজলক্ষী শ্রীকান্ত, আলী বাবা ৪০ চোর, সুদ-আসল, রাঙাভাবী, বিরাজ বৌ, স্বাক্ষী, পদ্মা মেঘনা যমুনা, স্নেহ, বিক্ষোভ, মায়ের অধিকার, আনন্দ অশ্রু, শ্রাবণ মেঘের দিন, চন্দ্রকথা, মেঘের পরে মেঘ, শ্যামল ছায়া, হাজার বছর ধরে ইত্যাদি।
সুবীর নন্দীর গাওয়া কালজয়ী জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে আছে- ‘দিন যায় কথা থাকে’, ‘আমার এ দুটি চোখ পাথর তো নয়’, ‘পৃথিবীতে প্রেম বলে কিছু নেই’, ‘আমি বৃষ্টির কাছ থেকে কাঁদতে শিখেছি’, ‘হাজার মনের কাছে প্রশ্ন রেখে’, জীবনের গল্প এতো ছোট নয়’, ঐ রাত ডাকে ঐ চাঁদ ডাকে তুমি কোথায়’, ‘মনরে সুখ পাখি তোর হইলো না আপন’, ‘তুমি এমনই জাল পেতেছ সংসারে’, ‘বন্ধু হতে চেয়ে তোমার শত্রু বলে গণ্য হলাম’, ‘কতো যে তোমাকে বেসেছি ভালো’, আহা কাঙ্খে কলসী, গাঁয়ের রূপসী’, ‘এই দুনিয়ার রাস্তাঘাটে কত মানুষ দিনে রাতে’, ‘কেন ভালোবাসা হারিয়ে যায়’, ‘মন দিলাম প্রাণ দিলাম আর কি দিবোরে’, ‘সুরের ভূবনে আমি আজো পথচারী’, ‘একটা ছিল সোনার কন্যা’, ‘ও আমার উড়াল পঙ্খীরে’, ‘পাহাড়ের কান্না দেখে তোমরা তাকে ঝর্ণা বলো’, ‘অবুঝ নদীর দুই কিনার’, ‘আশা ছিল মনে মনে’, বধূ তোমার আমার এই যে পীরিতি’, ‘মাস্টারসাব আমি নাম দস্তখত শিখতে চাই’ ইত্যাদি।
সুবীর নন্দী তাঁর কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পাঁচবার পেয়েছেন, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। ১৯৮৪ সালে, শ্রেষ্ঠ পুরুষ কন্ঠশিল্পী ‘মহানায়ক’ ছবিতে, ১৯৮৬ সালে শ্রেষ্ঠ পুরুষ কন্ঠশিল্পী ‘শুভদা’ ছবিতে, ১৯৯৯ সালে শ্রেষ্ঠ পুরুষ কন্ঠশিল্পী ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ ছবিতে, ২০০৪ সালে শ্রেষ্ঠ পুরুষ কন্ঠশিল্পী ‘মেঘের পরে মেঘ’ ছবিতে, ২০১৫ সালে শ্রেষ্ঠ পুরুষ কন্ঠশিল্পী ‘মহুয়া সুন্দরী’ ছবিতে।
শিল্পকলায় অবদানের জন্য ২০১৯ সালে পেয়েছেন ‘একুশে পদক’। এছাড়াও বাচসাস চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ আরো পেয়েছেন নানাধরণের পদক, ক্রেস্ট ও সম্মাননা।
বাংলা গানের অতি জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী সুবীর নন্দী, গান গাওয়ার পাশাপাশি দীর্ঘদিন ব্যাংকে চাকরি করেছেন।
যাযাদি/আর