সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫, ৯ আষাঢ় ১৪৩২

কুলাউড়ায় হয়রানির প্রতিবাদে চা-শ্রমিকদের অনশন!

কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
  ২৩ জুন ২০২৫, ১৭:০১
কুলাউড়ায় হয়রানির প্রতিবাদে চা-শ্রমিকদের অনশন!
ছবি: যায়যায়দিন

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় মামলা দিয়ে হয়রানি করার প্রতিবাদে অনশন শুরু করেন চা-শ্রমিকরা। সোমবার (২৩ জুন) উপজেলার জয়চন্ডী ইউনিয়নে অবস্থিত এনটিসি’র বিজয়া চা-বাগানের শ্রমিকরা সকাল থেকে অনশন শুরু করেন। প্রায় ২ ঘন্টা অনশনের পর বাগান ব্যবস্থাপক তাপস কুন্ডুর আশ্বাসে কাজে ফেরেন শ্রমিকরা।

জানা যায়, বিজয়া চা-বাগানের সুখয় লায়েকের অবাধ্য ছেলে সজল লায়েক (৩৮) দীর্ঘদিন থেকে বাগানের চা-শ্রমিকদের নানাভাবে হয়রানি করে আসছেন। এছাড়াও সে তার বাবা, কাকাসহ আত্মীয়স্বজনদেরকেও হয়রানি করছেন। প্রায় রাতে সজল মাতাল হয়ে সবাইকে গালিগালাজ করেন। তার এসব অন্যায়ের প্রতিবাদ করার ফলে বাগানের সাধারণ শ্রমিকদের নামে কোর্টে গিয়ে মামলা দায়ের করেছে। সজলের বাবা সুখয় ছেলের অত্যাচারের বিষয়ে বাগান পঞ্চায়েতের কাছে বিচার প্রার্থী হলে ক্ষিপ্ত হয়ে সজল তার বাবা ও কাকাদের বিরুদ্ধেও কোর্টে গিয়ে পৃথক অভিযোগ দায়ের করেন। এ নিয়ে বাগানের লোকজনের মধ্যে ক্ষোভ ও উত্তেজনা দেখা দেয়।

সোমবার সকালে সকল শ্রমিকরা কাজে যোগদান না করে বাগান ব্যবস্থাপকের কার্যালয়ের সামনে অনশনে বসেন। এসময় শ্রমিকরা উশৃঙ্খল সজলকে বাগান থেকে বিতাড়িত করার জন্য নানা রকমের স্লোগান দিতে থাকেন। খবর পেয়ে বাগান ব্যবস্থাপক তাপস কুন্ডু ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আইন মোতাবেক সজলের উপযুক্ত বিচার করা হবে মর্মে আশ্বস্থ করলে প্রায় ২ ঘন্টা পর শ্রমিকরা কাজে যোগদান করে।

চা-শ্রমিক লিটন লায়েক, নিজন গোয়ালা, চাম্পা লায়েক, আপন লায়েক, গৌরাঙ্গ লায়েক, ফাতেমা বেগমসহ অনেকেই জানান, এই সজল ও তার স্ত্রীর যন্ত্রণায় তারা অতিষ্ঠ। প্রায় সময় মাতাল হয়ে মানুষকে জালাতন করে। কেউ প্রতিবাদ করলেই আদালতে গিয়ে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে। তাকে বাগান থেকে বিতাড়িত করে আইনের আওতায় না নিলে তারা আগামীতে সব রকমের কাজকর্ম বন্ধ রেখে কঠোর আন্দোলনে নামবেন।

সজলের বাবা সুখয় লায়েক কান্নকণ্ঠে বলেন, তার ছেলে সজল লায়েক মাদকাসক্ত হয়ে একেবারে বে-পথে চলে গেছে। সে বাগানে উশৃঙ্খল আচরণ করে মামলা দিয়ে সাধারণ শ্রমিকদেরকে নানাভাবে হয়রানি করছে। ইতিমধ্যে তিনি ছেলেকে অবাধ্য ঘোষণা করে তার শাস্তির জন্য মৌলভীবাজার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতসহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেছেন।

বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি কিরোণ শুক্ল জানান, সজল ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। তাকে শোধরানোর শত চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। উল্টো সে তার স্ত্রীকে দিয়ে আমার বিরুদ্ধেও হয়রানিমূলক মামলা করবে বলে হুমকি দিচ্ছে। সোমবার শ্রমিকরা ২ ঘন্টা কর্মবিরতী করে আন্দোলন করেছে, সজলের বিচার না হলে আগামীতে শ্রমিকরা বাগানের সকল কাজ বন্ধ রেখে কঠোর আন্দোলন করবে বলে জানিয়েছে।

এব্যাপারে অভিযুক্ত সজল লায়েক জানান, তিনি বাগানের নিয়মিত শ্রমিক না হলেও পৈত্রিক সুবাধে বাগানে বসবাস করছেন। তার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তার বাবা ও বাগানের কয়েকজন মিলে তাকে বাগান থেকে বিতাড়িত করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন। তাই তিনি তাদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দিয়েছেন।

ন্যাশনাল টি কোম্পানির আওতাধিন বিজয়া চা-বাগানের ব্যবস্থাপক তাপস কুন্ডু জানান, সজল লায়েক বাগানের কোন শ্রমিক নয়। তিনি বাইরে কাজ করেন। পিতার সুবাধে তিনি বাগানের জায়গায় বসবাস করছেন। এই সজল লায়েক শান্তিপ্রিয় বাগানে অশান্তি সৃষ্টি করছেন বলে একাধিক অভিযোগ পেয়েছেন। কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং অফিসার ইনচার্জকে তিনি বিষয়টি জানিয়েছেন। সোমবার সকালে শ্রমিকরা সজলের শাস্তির দাবিতে কর্মবিরতি করে অনশনে বসেছিল। ন্যায্য বিচারের আশ্বাসে পরবর্তীতে তারা কাজে যোগদান করেছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে