মঙ্গলবার, ০৩ জুন ২০২৫, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সিলেটে বাড়ছে নদ-নদীর পানি, তিন পর্যটন কেন্দ্র প্লাবিত

যাযাদি ডেস্ক
  ০১ জুন ২০২৫, ১৬:০৪
আপডেট  : ০১ জুন ২০২৫, ১৬:০৬
সিলেটে বাড়ছে নদ-নদীর পানি, তিন পর্যটন কেন্দ্র প্লাবিত
উজানের ঢল ও টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে সিলেটের গোয়াইনঘাট-রাধানগর সড়ক। ছবি: সংগৃহীত

উজানের ঢল এবং টানা বর্ষণের ফলে সিলেটে নদ-নদীর পানি বাড়ছে। ইতোমধ্যে প্লাবিত হয়েছে সাদাপাথর, জাফলং ও বিছনাকান্দি পর্যটন কেন্দ্র। চলমান পরিস্থিতিতে এসব স্থানে ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করেছে স্থানীয় প্রশাসন। এছাড়া তলিয়ে গেছে গোয়াইনঘাট-রাধানগর সড়কের অংশবিশেষ। নগরীর বিভিন্ন এলাকাতেও জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, শনিবার সকাল ৬টা-৯টা পর্যন্ত ১ মিলিমিটার, সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৭ মিলিমিটার এবং দুপুর ১২টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত ১৫৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের পরিমাণ দাঁড়ায় ১৯৮ দশমিক ৬ মিলিমিটারে। এর আগে শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে গতকাল সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ১৩২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

1

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্য অনুযায়ী, সুরমা নদীর পানি কানিশাইল পয়েন্টে বিপৎসীমার মাত্র ৯ সেন্টিমিটার নিচে আর কুশিয়ারা নদীর পানি ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার একেবারে কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।

পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, ‘শনিবার ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে ৪১০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এটাই সতর্কবার্তা। ভারতে বৃষ্টি হলেই পাহাড়ি ঢল সীমান্তের নদ-নদী দিয়ে সিলেটে আসে। ফলে নদ-নদীর পানি বাড়ছে। সারি-গোয়াইন ও ধলাই নদের পানি বিপৎসীমা ছুঁইছুঁই। সিলেটের প্রধান দুই নদী সুরমা, কুশিয়ারাসহ সব নদ-নদীর পানি বাড়ছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে বন্যার আশঙ্কা রয়েছে সিলেটে।’

এদিকে সীমান্তবর্তী উপজেলা গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। গোয়াইনঘাট উপজেলার পর্যটন কেন্দ্র জাফলং ও বিছনাকান্দি এবং কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পর্যটন কেন্দ্র সাদাপাথর পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব স্থানে পর্যটকদের ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।

গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রতন কুমার অধিকারী জানান, উপজেলার গোয়াইনঘাট-রাধানগর সড়কের নিচু অংশের অংশবিশেষ প্লাবিত হয়েছে। পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় কিছু এলাকায় পানি বাড়ছে। ঢলের সময় পর্যটন কেন্দ্রে ভ্রমণ ঝুঁকিপূর্ণ।’

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিজুন্নাহার বলেন, ‘উপজেলায় ৩৫টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তবে এসব কেন্দ্রে এখনো কারো আশ্রয় নেয়ার প্রয়োজন পড়েনি। উজানে বৃষ্টি হচ্ছে, সাদাপাথর দিয়ে ঢল নামাটা স্বাভাবিক। আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’

গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বাঁধন কান্তি সরকার বলেন, ‘নদ-নদীর পানি বাড়লেও আপাতত বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টির কোনো আশঙ্কা নেই। উপজেলার নিম্নাঞ্চলে প্লাবিত হয়ে স্বল্পমেয়াদে বন্যা হতে পারে। বন্যা পরিস্থিতির জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।’

এছাড়া টানা বৃষ্টিতে নগরীর এয়ারপোর্ট রোড, রিকাবিবাজার, আম্বরখানা, ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সড়ক, বাগবাড়ী, উত্তর বাগবাড়ী এলাকা, মিরাবাজার, সুরমা তীরের মহাজনপট্টি, কালিঘাট, কাষ্টঘর, উপশহর-সুবহানী ঘাটসংলগ্ন এলাকা, বিমানবন্দর, চৌকিদেখী, শাহপরাণ, কদমতলীসংলগ্ন এলাকা, কাজিরবাজার, তালতলা, জামতলা ও মাছিমপুর এলাকার রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। ভারি বৃষ্টিতে তলিয়ে গিয়েছিল নগরীর প্রাণ কেন্দ্র জিন্দাবাজার চৌহাট্টা এলাকাও। এ দুই পয়েন্টে ছিল হাঁটুসমান পানি।

বৃষ্টি কিছুটা কমলে জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা পয়েন্ট থেকে পানি নেমে গেলেও অন্যান্য এলাকায় এখনো জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছে নগরবাসী। পরিস্থিতি মোকাবেলায় দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) একটি কন্ট্রোল রুম স্থাপন করেছে।

জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রয়োজনীয় তদারকি এবং জরুরি যোগাযোগের জন্য এ কন্ট্রোল রুম সিটি করপোরেশনের দ্বিতীয় তলায় চালু করা হয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগের দায়িত্বে রয়েছেন নির্বাহী প্রকৌশলী আলী আকবর।

সিলেট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ বলেন, ‘আমরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছি। পর্যটন কেন্দ্রগুলোর দিকে নজর রাখছি।’

তিনি গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিদর্শনে গিয়েছেন বলেও জানান। আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় স্থানীয় প্রশাসনকে প্রস্তুতির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে