শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১
গল্প

মা ডাহুকের ছটফটানি

বাচ্চাগুলো হয়তো গতকাল সন্ধ্যায় যে ঝড় হয়েছিল তাতে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে মা ডাহুকের সঙ্গে আশপাশের বাড়ির দিকে চলে এসেছে। নতুবা প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য মা ডাহুক পাখি তাদের হাঁটাচলা শেখাচ্ছে।
মো. দিদারুল ইসলাম
  ২১ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
মা ডাহুকের ছটফটানি

দিশা এবার নবম শ্রেণিতে পড়ে। তার বিবাহিত ফুফাতো বোন মিমের প্রথম মেয়ে সন্তানের পর কয়েকদিন হলো আবারও আরেক মেয়ে হয়েছে। আর হাসপাতাল থেকে পিচ্চি মেয়েকে নিয়ে সরাসরি বাপের বাড়িতে উঠেছে অর্থাৎ দিশার ফুফুর বাড়িতে। দিশার আর তার ফুফুর বাড়ি বলতে গেলে একই বাড়ি মাঝখানে কেবল ছোট্ট উঠানখানা পার্থক্য।

আজ সকালবেলা, সময় আনুমানিক সাড়ে ৮টা হবে। মিম চিলস্নাচিলিস্ন করে ডাকছে আর বলছে, দিশা দেখ তো আমাদের খেজুর গাছের নিচে একটা কুচকুচে কালো মুরগির বাচ্চা চেঁচামেচি করছে। কোন বাড়ির মুরগির

বাচ্চা এটি?

দিশা দৌড়ে এসে দেখল ঠিক তা-ই। দিশা কেমন যেন আরও বাচ্চার আওয়াজ শুনতে পেল আর পেছনে তাকিয়েই দেখল আরও দুটো কুচকুচে কালো বাচ্চা। আর সে খুশিতে আত্মহারা হয়ে বলে উঠল, মিম আপু আরও দুটি বাচ্চা। এদিকে মিম আরও একটা বাচ্চা ঝোপের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসতে দেখল। মিমের চোখেমুখেও হাসির ছাপ। সব মিলিয়ে চারটা বাচ্চা। কিন্তু আশপাশে কোনো মা মুরগিকে দেখা যাচ্ছে না এদিকে মিমের তিন-চার বছরের মেয়ে তাকওয়া বাচ্চাগুলোকে দেখে তো মহাখুশি। সে একটা একটা করে বাচ্চা ধরছে আর আদর করছে, আনন্দে লাফালাফি করছে। আর বলছে, দিশা আন্টি, বাচ্চাগুলো আমার। মিরাজ আর সিয়াম মামাকে বাচ্চাগুলো দেব না।

মুহূর্তের মধ্যেই বাড়ির উঠানে একটা সুন্দর বড় ডাহুক পাখি চলে এলো। আর কেমন যেন বারবার ডাকাডাকি করতে লাগল। ডাহুক পাখি এতগুলো মানুষকেও বিন্দু পরিমাণ ভয় পাচ্ছে না। পারে না বাচ্চাগুলোর কাছেই চলে আসে। একবার বাচ্চাদের কাছাকাছি চলে আসে, আরেকবার উড়াল দিয়ে বাড়ির চালে গিয়ে কিম্বা অদূরেই গাছের ডালে গিয়ে বসে। ছটফটাতে থাকে আর 'কোয়াক-কোয়াক' শব্দে ডাকাডাকি করতে থাকে। বুঝতে খুব একটা কষ্ট হলো না যে, এটিই মা ডাহুক পাখি।

দিশার আব্বুর আগের দিন থেকে জ্বর থাকায় সকালেও বিছানায় শুয়ে আছে। সেদিকে দিশার খেয়াল নেই। সে তার আব্বুকে শুয়া থেকে ডেকে উঠালো আর বলল, আব্বু দেখো কি সুন্দর সুন্দর বাচ্চা! দিশার আব্বুও বাচ্চাগুলো দেখে হতভম্ব হয়ে গেল। আর বলল, বাচ্চাগুলো লালন-পালন করে বড় করা যায় না?

পরক্ষণেই দিশার আব্বুরও বুঝতে বাকি রইল না যে, বাচ্চাগুলো ডাহুক পাখির। বাচ্চাগুলো হয়তো গতকাল সন্ধ্যায় যে ঝড় হয়েছিল, তাতে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে মা ডাহুকের সঙ্গে আশপাশের বাড়ির দিকে চলে এসেছে। নতুবা প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য মা ডাহুক পাখি তাদের হাঁটাচলা শেখাচ্ছে।

দিশার আব্বু দিশাকে বলল, বাচ্চাগুলোকে বাড়ির পাশের ডোবার ধারের খোলা জায়গায় নিয়ে যাও। দিশা তা-ই করল। পেছনে পেছনে পিচ্চি তাকওয়াও সঙ্গে গেল। মা ডাহুক মুহূর্তের মধ্যে ডোবার পাশে এসে 'কোয়াক-কোয়াক' ডাকের ঝড় তুলল, আর বাচ্চাগুলোও মা ডাহুকের সঙ্গে কিচিরমিচির করতে করতে ডোবায় থাকা বড় বড় কচুরিপানার ঝোপে ধীরে ধীরে লুকিয়ে গেল আর শুনশান নীরব হয়ে এলো চারপাশ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে