শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
শিশু জায়ান হত্যা মামলায় নতুন মোড়

তদন্তে গৃহকর্মী মর্জিনাকে অব্যাহতি দানের আবেদন

জায়ানের মৃতু্যর সাত দিন পর অর্থাৎ ০৭/০৫/২০২৩ ইং তারিখে কথিত জিনের আছরের গল্প ফাঁদা হয়- যা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট, কল্পিত একটি অভিযোগ- যার স্বপক্ষে কোনো বস্তুগত, চাক্ষুষ কিংবা অকাট্ট প্রমাণ নেই- ফলে মর্জিনাকে অত্র মামলা হতে অব্যাহতি দিতে আইনত কোনো বাধা নেই। এ সময় আদালত দুই পক্ষের কথা শুনেন এবং মামলার বাদী এ বিষয়ে নথিপত্র আদালতে দাখিল করার কথা জানালে তার আবেদনের পরিপ্রক্ষিতে আগামী ৩১ জানুয়ারি শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছেন আদালত
অ্যাডভোকেট এস এম তাসমিরুল ইসলাম উদয়
  ১৬ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

রাজধানীর কলাবাগানে আলোচিত নবজাতক জায়ান হত্যার অভিযোগে করা মামলার তদন্তে গৃহকর্মী মর্জিনা আক্তারের কোনো প্রকার সম্পৃক্ততা পাননি পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তা কলাবাগান থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আরিফ হোসেন। দীর্ঘ আট মাস মামলার তদন্ত কার্যক্রম চলার পর মর্জিনাকে মামলা থেকে অব্যাহতি প্রদানের আবেদন এবং পোস্টমর্টেম রিপোর্ট বিজ্ঞ আদালতে দাখিল করা হয়। বিগত ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৩ ইংরেজি তারিখে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিনের প্রভাষক ডা. ফাহমিদা হক তার রিপোর্টে চূড়ান্ত মতামত প্রকাশ করে জানান, নবজাতক শিশু ইয়াজদান জায়ানের মৃতু্যর সুনির্দিষ্ট কারণ উদঘাটন করা সম্ভব নয়।

এর আগে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গোপনে ও প্রকাশ্যে তদন্ত করে হত্যার অভিযোগের স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ না পাওয়ায় বিগত ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৩ তারিখে মামলার আসামি মর্জিনা আক্তারকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তার তদন্ত প্রতিবেদনটি দাখিল করেন- যা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত নং-২৬ এ সাদ্দাম হোসেনের আদালতে শুনানির জন্য উপস্থাপন করা হয়।

বিগত ১১ জানুয়ারি, ২০২৪ তারিখে পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন এবং পোস্টমর্টেমের চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হলে মামলার বাদী সাইদুল ইসলাম ওই তদন্ত প্রতিবেদনের প্রতি নারাজি দাখিলের জন্য বিজ্ঞ আদালতে সময়ের আবেদন করেন। এ সময় গৃহকর্মী মর্জিনার আইনজীবী হিসেবে আমি এবং আমার সিনিয়র অফা. ঝযধফধঃ ইধঢ়ড়হ ওই তদন্ত প্রতিবেদনটি আদালত কর্তৃক গ্রহণ করে মিথ্যা অভিযোগ থেকে মর্জিনা আক্তারকে অব্যাহতির আবেদন জানিয়ে বিজ্ঞ আদালতে নিবেদন করি যে, 'দিনে-দুপুরে বন্ধ দরজার একটি ঘরে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে থাকা তাদের শিশুর মৃতু্যর বিষয়টি একটি হৃদয় বিদারক ও দুঃখজনক ঘটনা। কিন্তু এখানে নবজাতকের মৃতু্যর জন্য দায়ী প্রকৃত দোষী ব্যক্তিরা দায় এড়ানোর উদ্দেশ্যে বলির পাঠা হিসেবে ব্যবহার করতে চাচ্ছে আজকের অভিযুক্ত আসামি মর্জিনাকে। নবজাতক শিশু ইয়াজদান জায়ান বিগত ১ মে, ২০২৩ ইং তারিখে ভোর ছয় ঘটিকা থেকে নয় ঘটিকার মধ্যে কোনো এক সময়ে মৃতু্যবরণ করে থাকতে পারে, যেই সময়টিতে শিশু জায়ান তার বাবা-মায়ের সঙ্গে একই কক্ষে অবস্থান করছিলেন এবং শিশু জায়ানের মৃতু্যর সাত দিন পর অর্থাৎ ০৭/০৫/২০২৩ ইং তারিখে কথিত জিনের আছরের গল্প ফাঁদা হয়- যা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট, কল্পিত একটি অভিযোগ- যার স্বপক্ষে কোনো বস্তুগত, চাক্ষুষ কিংবা অকাট্ট প্রমাণ নেই- ফলে মর্জিনাকে অত্র মামলা হতে অব্যাহতি দিতে আইনত কোনো বাধা নেই।'

এ সময় আদালত দুই পক্ষের কথা শুনেন এবং মামলার বাদী এ বিষয়ে নথিপত্র আদালতে দাখিল করার কথা জানালে তার আবেদনের পরিপ্রক্ষিতে আগামী ৩১ জানুয়ারি শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছেন আদালত। ওইদিন নথিপত্র হাজিরসহ তদন্ত কর্মকর্তাকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।

অনলাইন ব্যবসায়ী দম্পতির ২৫ দিন বয়সি সন্তানটি কলাবাগানের ১ম লেনের ৩৪/৫০৩বি নং বাসার একটি ফ্ল্যাটে গত পহেলা মে, ২০২৩ সালে মৃতু্যবরণ করেন। মৃতু্যর প্রায় এক সপ্তাহ পরে নিহত বাচ্চাটির মা দাবি করেন অলৌকিকে ভাবে, জিনের আছরের মাধ্যমে, তিনি জানতে পেরেছেন তার বাসার কাজের মেয়ে মর্জিনা তার ২৫ দিন বয়সি সন্তানকে প্রথমে আছাড় দিয়ে, এরপর চামচ দিয়ে মাথার পেছনে আঘাত করে সবশেষে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে। মামলার এজাহারেও এ কথা উলেস্নখ করেন তিনি।

নিহত শিশুর মায়ের কাছে মর্জিনার কনফেশনাল ভিডিও রেকর্ড আছে বলে তিনি দাবি করেন। যার ওপর ভিত্তি করে তিনি মর্জিনার সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করে একাধিক ভিডিও সোস্যাল মিডিয়ায় আপলোপ করেন- যা ইতোমধ্যে ভাইরাল হয়েছে। নিহতের মা দাবি করেছেন তার হ্যান্ডসাম স্বামী আছে যাকে মর্জিনা পেতে চেয়েছে এবং তার অনেক টাকা যেই টাকার লোভ সামলাতে না পেরে মর্জিনা ২৫ দিন বয়সি শিশুকে নির্মমভাবে খুন করেছে। অনেক টাকার খবর শুনে আমার মনে হয়েছে মর্জিনা এখানে অসহায়!

বাংলাদেশের ক্রিমিনাল জাস্টিস সিস্টেমের নাড়ি-নক্ষত্রকে আমরা তাত্ত্বিক ও বাস্তবিক প্রেক্ষাপটে চিনেছি। এই সিস্টেমের ফাংশনের সঙ্গে টাকার সম্পর্কের রহস্য জেনেছি। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে জনমত তৈরি হয়েছে। কিন্তু জনমত দিতে তো আইন চলে না এবং লোকরঞ্জনবাদ দিয়ে বিচার ফাংশন করুক আমরা সেটাও চাইনি। আমরা চেয়েছিলাম ন্যায়বিচার, তার রাস্তা যত বন্ধুর কিংবা কঠিন হোক। তাই বিবেকের দায়বদ্ধতা থেকে মর্জিনার পক্ষে বিনা খরচে মামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমরা খুব করে চেয়েছিলাম সত্য বের হয়ে আসুক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হোক।

হয়তো আরও লম্বা পথ পাড়ি দিতে হবে কিন্তু এইটুকু পথ পাড়ি দিতে যারা সত্যের সঙ্গে ছিলেন তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ।

এস এম তাসমিরুল ইসলাম উদয়, তরুণ আইনজীবী

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে