বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১
ওকালতি কচড়া

আইনজীবীর চোখ আপনি এড়াতে পারবেন না

দেলাওয়ার জাহান
  ০২ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
আইনজীবীর চোখ আপনি এড়াতে পারবেন না

ওকালতি শুরু করেছিলাম ৮ বছর আগে আলী ভাইয়ের চেম্বারে। একদম নবিশ হিসেবে দিকদারি অবস্থা হলো কাজের ধরন বুঝতে। লেবার ল'য়ের প্রচুর কাজ হতো ওখানে, সেগুলো দ্রম্নত বুঝে গেলাম জাফরুল ভাইয়ের কাছে। কিন্তু আলী ভাইয়ের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে মোগলের হাতে পড়লাম।

বিরক্ত হয়ে যেতাম অনেক সময়, কিন্তু কিছুদিন পর চাপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। ফলাফল, আলী ভাই গুরুত্বপূর্ণ কাজে এনগেজ করতে লাগলেন। তিনি কাজপাগল লোক। ব্রিলিয়ান্ট আইনজীবী। একটা সময় বলতে লাগলেন, তিনি ক্যালিফোর্নিয়া বারে প্র্যাক্টিস করবেন, আমিও সেখানে যাব। পড়াশোনা শুরুও হলো একটু একটু। কিন্তু সারাদিন ওকালতি করে এসব ছাইপাশ পড়া হতো না তেমন।

ওকালতি করতে করতে বার-এট-ল' করা যেমন টাফ। আলী ভাইয়ের চেম্বারে একটা সমস্যা হচ্ছিলো যে, তারা ভালো পে করলেও যেদিন মামলা থাকতো না, কোর্টে আসার ব্যাপারে নিরৎসাহিত করতেন। খুব স্বাভাবিক।

যাহোক, হাইকোর্টে পারমিশন পেলাম ২০১৭ সালের শুরুতে। আলী ভাইকে বললাম ভালস্নাগছে না আর কাজ করতে, টায়ার্ড। তিনি বললেন কত টাকা লাগবে, দেব। বলতেন, একটু কষ্ট কর, সব হয়ে যাবে দ্রম্নত। এত পজিটিভ মানুষ খুব কম দেখিছি।

যাহোক, ২০১৭ সালের মাঝামাঝি চেম্বার ছেড়ে দিলাম। এরপর এক বছর নিজের মতো করে কাটালাম। আলী ভাই বারবার ডেকেছে কাজ করার জন্য, যাইনি। যাইনি, কারণ তাদের শিডিউলে কুলাতে পারতাম না। সেই সকালে শুরু, কোর্ট, এরপর সেখান থেকে চেম্বার। সিনিয়ররা বাসায় গিয়ে বিকালে ঘুমিয়ে রাত ৮টায় চেম্বারে এসে ১২টা অব্দি কাজ করতে চায়, আমি পারতাম না লোড নিতে।

২০১৯ সালের ১২ এপ্রিল জয়েন করি সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার শামীম খালেদ আহমেদ স্যারের চেম্বারে। একজন ভালো আইনজীবী হওয়া ছাড়া কিছু ভাবি না।

তো, আলী ভাইয়ের অনেক কথাই সে সময় মনে হতো হম্বিতম্বি। এখন মনে হয় আলী ভাই ঠিক ছিলেন। একজন সদ্য এলএলবি এলএলএম করা জুনিয়র আদতে সিনিয়রকে এসিস্ট করতে পারে না শুরুতে। একজন নাদানের সঙ্গে বিজ্ঞ আইনজীবী যে দুটো কথা বলে, মনে হয় সেটা অনেক। আপনি বিজ্ঞ হওয়ার পর কমন লোকজনকে সহ্য করতে না পারা স্বাভাবিক। মক্কেলদের সহ্য হয় কারণ তারা পে করে!

আইনজীবীদের অনেকে বিনা কারণে খারাপ বলে, এর কারণ সাইকোলজিক্যাল। যে লোক আইন জানে, তার চোখে আপনার উল্টাপাল্টা ধরা পড়ে। সেটা নিয়ে আইনজীবী কিছু না বললেও আপনার চোরের মন পুলিশ পুলিশ আত্মাটা খচখচ করে, আর বিজ্ঞ আইনজীবীকে গেলার সুযোগ বা ক্ষমতা যেহেতু আপনার নেই, আপনি তাকে হিংসা করাই স্বাভাবিক! আরও অনেক কারণ আছে। ফি ছাড়া আপনার সঙ্গে আলাপ করতেও তো বিরক্ত লাগার কথা!

দেলাওয়ার জাহান: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে