শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

করোনাকালে প্রযুক্তির বহুমাত্রিক ব্যবহার

করোনাকালে ঘরবন্দিজীবনে মানুষ নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে প্রযুক্তিগত সামগ্রীর ওপর। নানা প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল মানুষের বহুমাত্রিক ব্যবহারে ধীরে ধীরে এতটাই অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে একসময় প্রযুক্তিই মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করবে। বিজ্ঞান মানুষকে দিয়েছে বেগ, কেড়ে নিয়েছে আবেগ। সেই আবেগও এখন প্রযুক্তির মাধ্যমে ভাগ-বাটোয়ারা হচ্ছে। ফেসবুক, টুইটার, ইমো, ওয়াটস অ্যাপ, লিংকদিন এসব তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে নানা কাজে...
এম এ আলম
  ২৮ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০

করোনাকালে ঘরবন্দিজীবনে মানুষ নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে প্রযুক্তিগত সামগ্রীর ওপর। নানারকম প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল মানুষের বহুমাত্রিক ব্যবহারে ধীরে ধীরে এতটাই অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে এক সময় প্রযুক্তিই মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করছে।

বিজ্ঞান মানুষকে দিয়েছে বেগ কেড়ে নিয়েছে আবেগ। সেই আবেগও এখন প্রযুক্তির মাধ্যমে ভাগ-বাটোয়ারা হচ্ছে। ফেসবুক, টুইটার, ইমো, ওয়াটসঅ্যাপ, লিংকদিন এ সব তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে নানা কাজে।

করোনাকালে অনলাইন বিজনেসের উপরে অনেকের ভাগ্য গড়ে উঠেছে। আর এ অনলাইন বিজনেস তথ্যপ্রযুক্তির ওপর ভর করেই এগিয়ে চলেছে বিদু্যৎগতিতে।

ব্যস্ত এ জীবনে আমাদের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় সঙ্গী কোনটি বলতে পারেন? এখনকার দিনে এর উত্তর হবে- 'সেলফোন'। ভাবলেও অবাক লাগে, আজ থেকে বেশ কয়েক বছর আগে যখন এ মোবাইলের চল ছিল না, তখন আমরা সবাই কী দিব্যি জীবনযাপন করতাম, কোনো সমস্যাই ছিল না! কিন্তু যখন এ প্রযুক্তি একবার হাতে এসে ধরা দিয়েছে তখন আমরা তাতে এতই অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি, এখন এ মোবাইল ছাড়া আমাদের একদিনও চলে না। কারও হয়তো এক ঘণ্টাও চলে না। আর এ অতি প্রয়োজনীয় জিনিসটি যদিও সবার ঘরে ঘরে আছে, কিন্তু চাইলেও অনেকে মনের মতো সেট কিনতে পারেন না।

ফেসবুক, টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে সব 'ইমোটিকনস' ব্যবহার করা হয় তা আমাদের মুখোমুখি যোগাযোগের ক্ষেত্রে খুব কমই উপস্থাপন করতে পারে বলেও জানান তারা। আর প্রযুক্তিপণ্যে এগুলো বেশি ব্যবহৃত হওয়ায় শিশুরা অন্যের মুখভঙ্গিসহ অনেক অভিব্যক্তি বুঝতে সমস্যায় পড়ে।

এখন বিভিন্ন ব্র্যান্ডের দামি স্মার্টফোন ছাড়াও রয়েছে স্বল্প দামের চৌকস মোবাইল সেট। অনেকেরই হয়তো দামে মিললেও দেখা যায় হ্যান্ডসেট পছন্দ হয় না। অথবা দেখা যায়, সেটটি পছন্দ হয়, তার সঙ্গে দামের রয়েছে আকাশ-পাতাল তফাৎ। টিনএজারদের তো আরও সমস্যা। এক হ্যান্ডসেটের মধ্যে তাদের চাই রাজ্যের সুযোগ-সুবিধা। বন্ধুর সেটে হয়তো কোনো ফিচার দেখল, তারও ঠিক তেমনই একটা চাই। কিন্তু দেখা যায় কিনতে গেলেই আর ব্যাটে-বলে মেলে না। আর দোকানে কিনতে গেলে হরেক রকমের মোবাইলের মধ্যে খুঁজে পাওয়াটা কিছুটা দুষ্করই বটে। তাই আগে থেকে একটু ধারণা নিয়ে মোবাইল ফোন সেট কিনতে গেলে দাম নিয়েও সমস্যা হয় না আর খুব বেশি খোঁজারও দরকার পড়ে না। এখন তো চালু হয়েছে স্মার্টফোনের যুগ। সবার হাতে হাতে স্মার্টফোন। বেশির ভাগ স্মার্টফোনেরই দাম কিছুটা বেশি। কিন্তু দাম বেশি বলে কি আর শখ বাধা মানে? আর তাই মোবাইল কোম্পানিগুলোও ক্রেতার চাহিদা বুঝে বের করেছে কম দামি সেট। চাইলেই একটু খুঁজে কিনতে পারেন নকিয়া, এইচটিসি, স্যামসাং, সিম্ফনি, ওয়ালটন, সনি এরিকসনের মতো বিভিন্ন ভালো ব্র্যান্ডের মোবাইল হ্যান্ডসেট। নিজের পছন্দ অনুযায়ী বেছে নিতে পারেন স্মার্টফোন। আর যদি পছন্দ করেন কিছুটা স্রোতের বিপরীতে থাকতে, তাহলে বেছে নিতে পারেন আপনার নিজস্ব পছন্দ অনুযায়ী সেট।

বাড়ছে স্মার্টফোন, ট্যাবলেট, ল্যাপটপসহ নানাবিধ প্রযুক্তিপণ্যের ব্যবহার। শুধু বড়রাই নয়, শিশুরাও অহরহ ব্যবহার করছে এ সব পণ্য। গেমিং ছাড়াও এ সব পণ্য শিশু থেকে বড় সবার পড়ালেখাসহ নানাবিধ কাজে লাগছে। প্রযুক্তিপণ্য ব্যবহারে কমে শিশুদের সামাজিক দক্ষতা।

যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল মনোবিজ্ঞানীরা এ সব পণ্য ব্যবহারের কারণে শিশুরা মুখোমুখি যোগাযোগে সময় কম দেওয়ায় তাদের সামাজিক দক্ষতা কমে যাচ্ছে বলে এক গবেষণায় দাবি করেছেন।

গবেষক দলের অন্যতম ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক প্যাট্রিসিয়া গ্রিনফিল্ড বলেন, অনেক মানুষ এ সব ডিজিটাল পণ্যের সুবিধাটুকুই শুধু দেখে, কিন্তু এ সবের নেতিবাচক দিকটি তারা খেয়াল করে না। এ সব পণ্যের অনেক নেতিকবাচক দিকের একটি হলো এগুলো ব্যবহারের ফলে শিশুদের অন্যের আবেগ বুঝতে পারার দক্ষতা কমে যায়।

করোনাকালে মোবাইল ডিভাইসের ব্যবহার তাল মিলিয়ে যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে ই-কমার্সের পরিধিও। ই-কমার্স বিজ্ঞাপনসংশ্ল্নিষ্ট প্রতিষ্ঠান ক্রিশেওর তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ই-কমার্স লেনদেনের ২৭ শতাংশ হয় মোবাইল ডিভাইসে। আর এ হার সময়ের সঙ্গে বাড়ছে। বিশ্বব্যাপী এক বছরের ১৬ হাজার কোটি ডলারের ১৪০ কোটি লেনদেনের ওপর ভিত্তি করে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে ক্রিশেও। প্রতিবেদন অনুযায়ী দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ই-কমার্সের লেনদেনে মোবাইল ডিভাইসের ব্যবহারের হার স্পেন ও ইতালির সমান। যুক্তরাষ্ট্রে এর হার কিছুটা বেশি। ই-কমার্স ও মোবাইল ডিভাইসের মধ্যে সম্পর্কের গভীরতা বোঝাতে বেশ কিছু তথ্য তুলে ধরেছে ক্রিশেও। প্রতিবেদনে জানানো হয়, মোবাইল ডিভাইস সাপোর্ট করে এ ধরনের ই-কমার্স সাইটের সংখ্যা সময়ের সঙ্গে বাড়ছে। ফলে মোবাইল ডিভাইসেই মানুষ এখন কেনাকাটায় প্রয়োজনীয় যে কোনো সাইটের সন্ধান পাচ্ছে। আরও জানানো হয়, ডেস্কটপের চেয়ে মোবাইল ডিভাইসেই ই-কমার্সের লেনদেন বেশি হচ্ছে। ফ্যাশন, লাক্সারি ও ভ্রমণসংক্রান্ত পণ্যই ই-কমার্সে বেশি কেনাকাটা হচ্ছে বলে জানানো হয়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ই-কমার্স খাতে মোবাইল ডিভাইসের ব্যবহার বৃদ্ধি নিয়ে ক্রিশেওর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বিভাগের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইয়োকো সাইতো বলেন, ই-কমার্স খাতে পুরো বিশ্বে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অগ্রগতি সবচেয়ে বেশি। এর পেছনে মূল প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে মোবাইল ডিভাইস। বিশেষ করে ইন্দোনেশিয়া ও ভারতের মতো উন্নয়নশীল বাজারগুলোয় এ প্রবণতা অধিক লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ সব বাজারে মোবাইল ডিভাইসকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। নতুন গ্রাহকরা ডেস্কটপ কেনার আগে মোবাইল ডিভাইস কিনছেন। এতে আগামীতে ই-কমার্স লেনদেনে এ সব ডিভাইসের ব্যবহার বৃদ্ধির সম্ভাবনা বাড়ছে। সাইতো আরও বলেন, উন্নয়নশীল বা উন্নত বাজার সর্বত্রই মোবাইল ডিভাইস ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে। এ কারণে বিশ্বব্যাপী ই-কমার্সের প্রসারে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এবং রাখবে। তাই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর মোবাইলবান্ধব ই-কমার্স সেবা চালুর দিকে মনোনিবেশ বাড়ানো উচিত। এরই মধ্যে বিশ্বের অধিকাংশ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান তাদের মোবাইল সংস্করণ চালু করেছে। শুধু ই-কমার্স নয়, অনলাইনের অনেক সেবাই এখন মোবাইলভিত্তিক হয়ে যাচ্ছে। আগামীতে হয়তো এমন সময় আসবে যখন ইন্টারনেটের সমার্থক হিসেবে মোবাইল ডিভাইসের নামটি ব্যবহৃত হবে। পৃথকভাবে বিবেচনা করতে গেলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে ইন্দোনেশিয়ায় ই-কমার্স খাতে লেনদেনে মোবাইল ডিভাইস ব্যবহৃত হয় ৩১ শতাংশ ক্ষেত্রে। তাইওয়ানে এ হার ৩১ ও সিঙ্গাপুরে ২৯ শতাংশ। প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী ই-কমার্স লেনদেনে মোবাইল ডিভাইসের ব্যবহার বাড়ার সঙ্গে তাল মিলিয়েই বাড়ছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ডিভাইসের এ ধরনের ব্যবহার। ২০২১ সালের শেষ নাগাদ ই-কমার্সে মোবাইল ডিভাইস ব্যবহারের এ হার ৪০ শতাংশে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। মানুষের হাতে ডিভাইসের সংখ্যা সময়ের সঙ্গে বাড়ছে। একই ব্যক্তি ভিন্ন প্রয়োজনে স্মার্টফোন, ট্যাবলেট ও পিসির মতো ডিভাইস ব্যবহার করছেন। দেখা যাচ্ছে একটি লেনদেন সম্পন্ন করতে অর্থাৎ কোনো একটি নির্দিষ্ট পণ্য পছন্দ করা থেকে শুরু করে অর্থ পরিশোধ পর্যন্ত একাধিক ডিভাইস ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ছে। মোট লেনদেনের ৪০ শতাংশ ক্ষেত্রেই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। এ থেকে মোবাইল ডিভাইসের অত্যধিক ব্যবহার বৃদ্ধির বিষয়টিই সামনে আসে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে