শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষাকে জনপ্রিয় করে তুলেছে সায়েন্স বি

বাংলায় বিজ্ঞানচর্চাকে জনপ্রিয় করে তোলাও সায়েন্স বি'র অন্যতম লক্ষ্য। সায়েন্স বি চায় আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে উঠে আসুক ভবিষ্যৎ বিজ্ঞানী, তাই তাদের মধ্য থেকে বিজ্ঞানের প্রতি ভীতি দূর করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন তারা। সায়েন্স বি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জগতের সর্বশেষ তথ্যগুলো নিয়ে চেষ্টা করে বোধগম্য বাংলায় সবার সামনে তুলে ধরতে, যেন সব স্তরের শিক্ষার্থীই বাংলায় বিষয়টি সম্পর্কে পরিষ্কারভাবে শিখতে ও ধারণা লাভ করতে পারে। এই লক্ষ্যে সায়েন্স বি তাদের ফেসবুক কমিউনিটি, ইউটিউব ও ওয়েবসাইটে নিয়মিত নানা রকম বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্য বস্নগ, নিউজ, ভিডিও ও আর্টিকেল আকারে প্রকাশ করে যাচ্ছে।
নতুনধারা
  ১৩ নভেম্বর ২০২১, ০০:০০
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষাকে জনপ্রিয় করে তুলেছে সায়েন্স বি

সায়েন্স বি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞানভিত্তিক এডুকেশনাল পস্ন্যাটফর্ম। ২০১৮ সালের ৩১ মে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মবিন সিকদার পস্ন্যাটফর্মটি প্রতিষ্ঠা করেন। সায়েন্স বি-এর মূল লক্ষ্য হলো বাংলাদেশের প্রান্তিক অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষাকে জনপ্রিয় করে তোলা। শহর এবং গ্রাম ভেদাভেদে যেন কোনো শিক্ষার্থী পিছিয়ে না যায়, তাই তারা চেষ্টা করছে অনলাইনে বিনামূল্যে সবার কাছে নিজেদের সেবা পৌঁছে দিতে, যেন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী যে কেউ, বাংলাদেশ ও দেশের বাইরের যে কোনো স্থান থেকে এই তথ্যভান্ডার ও গাইডলাইনের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। বাংলায় বিজ্ঞানচর্চাকে জনপ্রিয় করে তোলাও সায়েন্স বি'র অন্যতম লক্ষ্য। সায়েন্স বি চায় আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেকে উঠে আসুক ভবিষ্যৎ বিজ্ঞানী, তাই তাদের মধ্য থেকে বিজ্ঞানের প্রতি ভীতি দূর করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন তারা। সায়েন্স বি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জগতের সর্বশেষ তথ্যগুলো নিয়ে চেষ্টা করে বোধগম্য বাংলায় সবার সামনে তুলে ধরতে, যেন সব স্তরের শিক্ষার্থীই বাংলায় বিষয়টি সম্পর্কে পরিষ্কারভাবে শিখতে ও ধারণা লাভ করতে পারে। এই লক্ষ্যে সায়েন্স বি তাদের ফেসবুক কমিউনিটি, ইউটিউব ও ওয়েবসাইটে নিয়মিত নানা রকম বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্য বস্নগ, নিউজ, ভিডিও ও আর্টিকেল আকারে প্রকাশ করে যাচ্ছে। এই নিয়ে লিখেছেন সাজেদুর আবেদীন শান্ত।

সায়েন্স বি শুরুর পিছনের গল্প : সায়েন্স বি'র প্রতিষ্ঠাতা মবিন সিকদারের জন্ম মানিকগঞ্জের ছোট্ট একটি গ্রামে। ছোটবেলা তিনি পড়াশোনা করেছেন নিজের গ্রামের একটি স্কুলে। স্কুল পড়ার সময় থেকেই তার বিজ্ঞানের প্রতি আলাদা একটা টান ছিল। কিন্তু ৯ম শ্রেণিতে ওঠার পর তিনি জানতে পারেন যে তাদের স্কুলে বিজ্ঞান বিভাগ নেই। বিষয়টি তাকে অনেক কষ্ট দেয়। এরপর অনেকটা বাধ্য হয়েই শহরে এসে স্কুলে ভর্তি হন। কলেজজীবনটা তার কেটেছে ঢাকার রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজে। সেখানে পড়া অবস্থাতেই তিনি বুঝতে পারেন আমাদের দেশের শহর এবং গ্রামে শিক্ষা ব্যবস্থায় অনেক পার্থক্য বিদ্যমান।

গ্রামের শিক্ষার্থীরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বিজ্ঞান বিভাগে পড়ার সুযোগ পায় না, আর যদি পায়ও তাহলেও যথাযথ উপকরণ এবং মানসম্মত শিক্ষার অভাবে সেই সুযোগকে খুব একটা কাজে লাগাতে পারে না। আমাদের দেশে যেহেতু সব কিছু ঢাকাকেন্দ্রিক, তাই ঢাকার বাইরের শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে থাকে সব ক্ষেত্রেই। তখনই আসলে চিন্তাটা মাথায় আসে- যদি একটা ওয়েবসাইট করা যায়, যেখান থেকে খুব সহজেই ঢাকা এবং ঢাকার বাইরের শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞানের সব খবর এবং প্রশ্নের উত্তরগুলো পেতে পারে। সেখান থেকেই মূলত সায়েন্স বি'র যাত্রা শুরু। বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষে থাকাকালে ওয়েবসাইট নিয়ে কাজ শুরু করেন মবিন সিকদার। পাশাপাশি গড়ে তোলেন বিজ্ঞানপ্রেমীদের নিয়ে একটি টিম। যেহেতু পূর্ব কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না তাই সব কিছুকেই নতুনভাবে শিখতে হয়েছে। দিন-রাত পরিশ্রম করে বানানো ওয়েবসাইটটি ৪ বার ডিলেট করে আবার শুরু থেকে কাজ করার মতো ঘটনাও ঘটেছে। তবে শেষমেশ সবার সহযোগিতায় ওয়েবসাইটটি দাঁড় করাতে সক্ষম হন তিনি। বর্তমানে ওয়েবসাইটের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও নিজেদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে সায়েন্স বি।

সায়েন্স বি'র ওয়েবসাইট : বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞান শিক্ষার ওয়েবসাইটটি তৈরি করেছে সায়েন্স বি। যেখানে আছে ৩টি আলাদা ও ইউনিক সেকশন, বাংলাদেশের প্রথম বিজ্ঞানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম 'বিজ্ঞান সংবাদ' যেখানে ইতোমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে ৬০০টিরও বেশি নিউজ, আছে নতুন ও উদীয়মান লেখকদের জন্য বি বস্নগ, যেখানে আছে ৩০০-র বেশি তথ্যবহুল বস্নগ। চাইলে যে কোনো শিক্ষার্থী ঘরে বসে ইন্টারনেট ব্যবহার করে এই সাইটে নিজেদের লেখা প্রকাশ করতে পারবে। এ ছাড়া ওয়েবসাইটে রয়েছে দেশের সর্ব বৃহৎ বিজ্ঞানভিত্তিক 'বিজ্ঞান প্রশ্নোত্তর' আর্কাইভ, যেখানে ইতোমধ্যেই সংযুক্ত করা হয়েছে ৬৫০০-র বেশি প্রশ্ন ও ৭০০০-র বেশি উত্তর। এই সাইটে শিক্ষার্থীরা যেমন প্রশ্ন করতে পারে, ঠিক তেমনি উত্তর দিয়ে অন্য শিক্ষার্থীদের সহায়তা করতে পারে? মাস শেষে শিক্ষার্থীদের জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা থাকে। আমরা যে তাদের মধ্যে আসলেই আগ্রহ তৈরি করতে পেরেছি, তা আমরা বুঝতে পারি আমাদের ওয়েবসাইটের কন্টেন্টের প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ দেখে। প্রতিদিনই ১০-১৫ হাজার শিক্ষার্থী আমাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জ্ঞান আহরণ করছে, পাশাপাশি আমাদের ওয়েবসাইটের মাসিক ভিজিটরের সংখ্যা প্রায় ১,৫০,০০০।

সায়েন্স বি'র অন্যান্য কার্যক্রম : শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিজ্ঞান নিয়ে আগ্রহ বজায় রাখতে আমরা নিয়মিত সায়েন্স বি তাদের ওয়েবসাইটের পাশাপাশি ফেসবুক পেজ এবং গ্রম্নপে তথ্যবহুল নানা আর্টিকেল, বস্নগ, নিউজ, ফ্যাক্টস ও ভিডিও প্রকাশ করছে। সায়েন্স বি'র দু'টি বিজ্ঞানভিত্তিক গ্রম্নপ 'ঝপরবহপব ইবব-বিজ্ঞান গ্রম্নপ' এবং 'এই পোস্টে বিজ্ঞান কই' গ্রম্নপ দু'টির মাধ্যমে তাদের সঙ্গে প্রায় ৬,৫০,০০০ শিক্ষার্থী যুক্ত রয়েছে। পাশাপাশি তাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে রয়েছে ২ লাখের বেশি ফলোয়ার।

সায়েন্স বি এখন পর্যন্ত আয়োজন করেছে ১৫টি 'সায়েন্স লাইভ' সেশন, বাংলাদেশের প্রথম বিজ্ঞান টক-শো এটি যেখানে অতিথি হয়ে এসেছেন 'সহায়'-এর প্রতিষ্ঠাতা তাসনিম জারা, লেখক, বক্তা, উপস্থাপক, নির্মাতা ফাতিহা আয়াত, ওয়েব ডেভেলপার ও লেখক ঝংকার মাহবুব, পরিচালক, লেখক, প্রযোজক ওয়াহিদ ইবনে রেজা, সায়েন্স নিউজের সেরা ১০ তরুণ বিজ্ঞানীর একজন তনিমা তাসনিম অন্যরাসহ নিজ নিজ ক্ষেত্রে স্বনামধন্য আরও অনেক ব্যক্তিত্ব, যাদের কাছ থেকে শিক্ষার্থীরা সরাসরিই জেনে নিয়েছে তাদের নানা জিজ্ঞাসা।

সায়েন্স বি ইতোমধ্যেই দু'টি ই-বুক প্রকাশ করেছে, যার একটি রকেট ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে বাংলায় লেখা দেশের প্রথম ই-বুক। শিক্ষার্থীরা ইতোমধ্যে ১০,০০০-এর বেশিবার বইটি ডাউনলোড করেছে, যা তাদের এই বিষয়ে জানার আগ্রহ ও সায়েন্স বি'র তা জানানোর প্রচেষ্টা উভয় ক্ষেত্রেই বড় অর্জন।

পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে সায়েন্স বি অনলাইনে ৪০টির বেশি প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে। এ ছাড়া সর্বশেষ মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ঈধষষ ওঃ ঙঁঃ: ঋরমযঃ উবঢ়ৎবংংরড়হ ক্যাম্পেইনের আয়োজন করেছে যেখানে ১০,০০০-এরও বেশি শিক্ষার্থী সরাসরি অংশগ্রহণ করেছে এবং ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে সায়েন্স বি প্রায় ১,৪২,০০০ শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছাতে পেরেছে।

\হএ ছাড়া সায়েন্স বি'র ইউটিউব চ্যানেলে 'দ্য বি শো' নামক একটি অভিনব সেকশন রয়েছে, যেখানে তারা চেষ্টা করি অভিনয় এবং অ্যানিমেশনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছে বিজ্ঞানের নানা বিষয়গুলো আনন্দময়ভাবে তুলে ধরতে।

সায়েন্স বি'র যত অর্জন : সায়েন্স বি এখন পর্যন্ত দু'টি পুরস্কার অর্জন করেছে। সবার প্রথমে 'ই-লার্নি' সেক্টরে অবদান রাখার জন্য সায়েন্স বিকে 'ওয়াইএসএসই গেস্নাবাল এডুকেশন অ্যাওয়ার্ড' প্রদান করা হয়। এটি একটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা ছিল যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ই-লার্নি এবং এডটেক ইন্ডাস্ট্রিতে অবদার রাখা পস্ন্যাটফর্মগুলো অংশ নিয়েছিল। যেখানে সায়েন্স বি বিজয়ী হওয়ার গৌরব অর্জন করেন।

এরপর সায়েন্স বি অর্জন করেছে 'বিওয়াইএলসি ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড ২০২১। বাংলাদেশের ৭৫টি সংস্থা এই প্রতিযোগিতার জন্য আবেদন করে এবং সায়েন্স বি সেখানে প্রথম স্থান লাভ করে। যার ফলে স্বীকৃতিস্বরূপ সায়েন্স বিকে ২৫,০০০ টাকা, অ্যাওয়ার্ড এবং সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়।

সায়েন্স বি'র প্রতিষ্ঠাতা মবিন সিকদার 'ইয়াং গেস্নাবাল চেঞ্জ মেকারস অ্যাওয়ার্ড ২০২১' অর্জন করেছেন। বিশ্বের ৪৭টি দেশের ৫০০-র বেশি প্রতিযোগী সম্মানসূচক এই আন্তর্জাতিক পুরস্কারটির জন্য আবেদন করেন এবং সারা বিশ্ব থেকে মাত্র ৩ জনকে সর্বোচ্চ সম্মাননা হিসেবে 'এৎধহফ এষড়নধষ ঔঁৎু ঈড়সসবহফধঃরড়হ' ক্যাটাগরিতে অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। এর মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ভূমিকা রাখায় মবিন সিকদারকে এই অ্যাওয়ার্ডটি প্রদান করা হয়?

ভবিষ্যৎ লক্ষ্য : মুখস্থ বিদ্যা থেকে বের হয়ে একজন শিক্ষার্থী যেন নিজে শিখতে শেখে, শিশু-কিশোরদের ছোটবেলার বিজ্ঞানী হওয়ার স্বপ্নটা যেন বড় হতে হতে হারিয়ে না যায়, তাদের মধ্যে সেই স্বপ্ন ও কৌতূহলকে বাঁচিয়ে রাখার কাজটিই করতে চায় সায়েন্স বি। ভবিষ্যতে সায়েন্স বি প্র্যাক্টিকালি বিজ্ঞানের নানা বিষয় পরীক্ষা করে দেখানো, সায়েন্স বি অ্যাপ ডেভেলপ করা, অধিক পরিমাণে সমৃদ্ধ কন্টেন্ট তৈরি, দেশব্যাপী সায়েন্স ফেস্ট, অলিম্পিয়াড এর আয়োজন করে শিক্ষার্থীদের আরও কাছে পৌঁছাতে চায়, যেন এই বিজ্ঞানী হওয়ার যাত্রাটা শুধু ঢাকাকেন্দ্রিক না হয়ে দেশের সব প্রান্তের শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছায়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে