শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ফের ফণা তুলছে করোনা

কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে এখনই স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত সব জায়গায় দুই শতাংশ পেরিয়েছে শনাক্তের হার
লাইজুল ইসলাম
  ১৫ জুন ২০২২, ০০:০০
আপডেট  : ১৫ জুন ২০২২, ০৯:৩৩

দেশে ধীরে ধীরে করোনার রোগী বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু এই বৃদ্ধির হার এতটাই কম যে সাধারণের চোখে পড়ছে না। এক সপ্তাহ আগেও দেশে করোনা সংক্রমণের হার ছিল এক শতাংশের নিচে। কিন্তু এক সপ্তাহের ব্যবধানে সংক্রমণ লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে দুই শতাংশ ছুঁয়েছে। গত চার দিনে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা একশ'র ঘর পেরিয়েছে। যদিও এ পরিস্থিতিতেও সচেতনতা বৃদ্ধি বা স্বাস্থ্যবিধি মানাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোনো কার্যক্রম নেই বললেই চলে। এদিকে সংক্রমণ বৃদ্ধির বিষয়টি ভালো চোখে দেখছেন না জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ। তারা বলছেন, করোনা বৃদ্ধির এই আশঙ্কা বহুদিন ধরেই চলছে। কিন্তু মানুষের মধ্যে এক ধরনের ভ্রান্ত ধারণা তৈরি হয়েছে এজন্য কেউ স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। সবাই মনে করছেন, ভ্যাকসিন নিয়ে নিলেই আর কোনো সমস্যা হবে না। কিংবা করোনা হলেও কিছু হবে না। এই ভ্রান্ত ধারণা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরই মানুষের মনে ঢুকিয়েছে। এখন আবার বাড়ছে করোনা। এটা চতুর্থ ঢেউও হতে পারে বলে ধারণা করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সূত্র বলছে, এই মুহূর্তে অধিদপ্তর ব্যস্ত রয়েছে তাদের নতুন নতুন পরিকল্পনা নিয়ে। বিভিন্ন বিভাগে বড় বড় হাসপাতাল হচ্ছে। ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালের বর্ধিতাংশের কাজ চলছে। দেশের ভেতরে সব ধরনের অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করা হচ্ছে। গেল দুই বছর করোনার কারণে অধিদপ্তরের অনেক কাজ আটকে আছে। সেগুলো শেষ করার দিকে নজর দিয়েছেন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। বিভিন্ন রোগের বিষয়ে সচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারণা আপাতত বন্ধ রয়েছে বলেও জানায় সূত্রটি। তবে এসব অভিযোগ মানতে নারাজ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। চলতি বছরের মার্চ মাসের ৯ তারিখ করোনা শনাক্তের হার ছিল ১ দশমিক ৯৭ শতাংশ। এরপর ধীরে ধীরে শনাক্তের হার একের নিচে চলে আসে। কিন্তু গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে করোনা শনাক্তের হার বৃদ্ধি পেতে থাকে। বর্তমানে করোনা শনাক্তের হার ২ দশমিক ৬ শতাংশ। তিন মাস পর দুই শতাংশের ওপরে উঠল করোনা শনাক্তের হার। এদিকে, আক্রান্তের দিক থেকেও একশ' অতিক্রম করেছে প্রায় আড়াই মাস পর। গত ২৫ মার্চ ১০২ জন আক্রান্ত হন। এরপর আর শতকের ঘর পার করেনি করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। ভাইরোলজিস্ট ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, এখন যে পরিস্থিতি তাতে মেসাকার হওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে করোনাভাইরাস যদি এগুলো সুযোগ পায় তবে যে শক্তি প্রথমদিকে ছিল সেই শক্তি নিয়েই আমার সবাইকে আক্রান্ত করতে পারে। যদি আমরা স্বাস্থ্যবিধি না মানি তাহলে সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা আছে। ইতোমধ্যে দেশের সর্বত্র দেখা যাচ্ছে, মানুষ কোনো ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। এটাই আমাদের জন্য বড় ধরনের কাল হয়ে আসতে পারে। তিনি আরো বলেন, এখন হঠাৎ করে করোনা বৃদ্ধির বিষয়টি চিন্তার। বিদ্যমান করোনাভাইরাসে এত দ্রম্নত ছড়িয়ে পড়ার কথা না। তারপরও হতে পারে। যেহেতু এই ভাইরাসটি নিয়ে আমাদের তেমন কোনো গবেষণা নেই। আবার এমনও হতে পারে বাইরে থেকে বা দেশের ভেতরেই করোনার নতুন ধরন তৈরি হয়েছে? এটাও গবেষণার বিষয়। তাই এখনই বলা যাবে না, করোনার নতুন আরেকটি ঢেউ আসছে। তবে যদি দ্রম্নতহারে রোগী বাড়তে থাকে তাহলে ধরেই নিতে হবে করোনার চতুর্থ ঢেউ আসছে। এদিকে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, করোনা শনাক্তের হার আবার বাড়ছে। কয়েকদিন আগেও দেশে ৩০ থেকে ৩৫ জন আক্রান্ত হতেন। এখন একশ'র ওপর আক্রান্ত হচ্ছেন। করোনায় শনাক্তের হার একের নিচে ছিল গত সপ্তাহেও। এক সপ্তাহের ব্যবধানে দুই ছাড়িয়েছে। যারা এখনো টিকা নেননি তাদের দ্রম্নত সময়ের মধ্যে টিকা নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। মন্ত্রী বলেন, আমাদের এখন সতর্ক হতে হবে। তা না হলে করোনা আবার বাড়তে পারে। আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। নিজেদের ভালোর জন্যই স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। একটা স্বাভাবিক অবস্থায় আছি। আমরা আর মৃতু্য দেখতে চাই না। সারাবিশ্বে যে কয়টি দেশ করোনা নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে তার মধ্যে বাংলাদেশ পঞ্চম। আর এশিয়ার মধ্যে প্রথম দেশ বাংলাদেশ, যে দেশ করোনা নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে। করোনা নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে বলেই এখন দেশের সব কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়েছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. আবু জামিল ফয়সাল বলেন, এখন করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা খুবই কম। কিন্তু হার অনেক বেশি। তার মানে কম পরীক্ষা হচ্ছে আর বেশি শনাক্ত হচ্ছে। এটা কিন্তু ভয়ংকর বিষয়। যদি এমনই চলতে থাকে তাহলে ধীরে ধীরে করোনা আয়ত্তের বাইরে চলে যাবে। তখন আর কিছুই করার থাকবে না। মৃতু্য আর মৃতু্য দেখতে হবে। সবাই ভাবে এখনতো করোনার টিকা নিয়েই নিয়েছি তাই আর কিছু হবে না। কিন্তু কেউ জানে না সামনে কোন ভ্যারিয়েন্ট আসছে। সেটাতে কি হবে? তিনি আরো বলেন, চতুর্থ ঢেউয়ের আশঙ্কা এখনই করা যাবে না। তবে যদি হুট করে বাড়তে থাকে তবে কিন্তু আক্রান্তের চূড়ায় উঠতে বেশি সময় নেবে না। ম্যাসিভ আকারে করোনা ছড়ানোর আগেই সবাইকে সাবধান হতে হবে। চতুর্থ ঢেউ হতেও পারে যদি আমরা সাবধান না হই। এসব বিষয়ে অধিদপ্তরের কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। এখন দেশের কোথাও করোনা সচেতনতা নেই। সবাই যে যার মতো করে ঘুড়ে বেড়াচ্ছেন। এটা দ্রম্নত সময়ের মধ্যে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। এই জনস্বাস্থ্যবিদ মনে করেন, এই অবস্থার জন্য দায়ী স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্টরা। তাদের অতি কথনেই এমন ঘটনা ঘটেছে। মানুষের কাছে একটা মেসেজ দেওয়া হয়েছে টিকা নিলে সিভিয়ারিটি কম। এই তথ্যটি দেওয়া যে কত বড় ভুল হয়েছে, তা বুঝবে যদি চতুর্থ ঢেউ আসে ও মৃতু্যর সব রেকর্ড ভেঙে যায়। কেউ চান না করোনা আরও বৃদ্ধি পাক। সাধারণ মানুষও কোনো ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। এটা থেকে সবাইকে সরে আসতে হবে। তা না হলে এমন ভালো পরিবেশ ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে