স্বল্পপাল্লার একটি ক্ষেপণাস্ত্রের ‘পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ’ সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করার কথা জানিয়েছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। ডন লিখেছে, ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য ৪৫০ কিলোমিটার পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রটির নাম ‘আবদালি’।
দেশটির আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, “এই উৎক্ষেপণের মূল উদ্দেশ্য ছিল সেনাদের অপারেশনাল প্রস্তুতি নিশ্চিত করা এবং ক্ষেপণাস্ত্রটির উন্নত নেভিগেশন সিস্টেম ও উন্নত ম্যানুভারিং ক্ষমতাসহ প্রযুক্তিগত মান যাচাই করা।”
পাকিস্তান সেনাবাহিনী বলছে, শনিবার (৩ মে) ক্ষেপণাস্ত্রের উৎক্ষেপণটি ছিল ‘সিন্ধু মহড়ার’ অংশ। এসময় আর্মি স্ট্র্যাটেজিক ফোর্সেস কমান্ডের (এএফএসসি) কমান্ডার, কৌশলগত পরিকল্পনা বিভাগ, এএফএসসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, কৌশলগত বিভিন্ন সংস্থার বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীরা ছিলেন।
আইএসপিআর সফল উৎক্ষেপণের একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে।
আইএসপিআর জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি, প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ, জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ কমিটির চেয়ারম্যান জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জা ও বাহিনী প্রধানরা সংশ্লিষ্ট সেনা, বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীদের অভিনন্দন জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, গ্রহণযোগ্য প্রতিরোধ নিশ্চিত করতে এবং যেকোনো আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় পাকিস্তানের স্ট্র্যাটেজিক ফোর্সের অপারেশনাল প্রস্তুতি ও প্রযুক্তিগত দক্ষতায় তারা পূর্ণ আস্থা প্রকাশ করেছেন।
গত ২২ এপ্রিল ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। এর মধ্যে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করল পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। এর আগে গত অগাস্টে শাহিন-২ ক্ষেপণাস্ত্রের ‘পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ’ সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করে দেশটি।
পেহেলগাম হামলার জন্য ইসলামাবাদকে দায়ী করে আসছে দিল্লি। তবে পাকিস্তান বলে আসছে, ওই অভিযোগের কোনো প্রমাণ ভারত এখনো দেখাতে পারেনি।
ভারত ইতোমধ্যে পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করেছে, পাকিস্তানিদের দেওয়া ভিসা বাতিল করেছে এবং ওয়াঘা-আটারি সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে।
জবাবে পাকিস্তান সরকার ভারতের কূটনীতিকদের বহিষ্কার করে শিমলা চুক্তি বাতিলের হুমকি দিয়েছে। সাধারণ ভারতীয়দের জন্য ভিসা বন্ধ করে দেওয়ার পাশাপাশি ভারতের সঙ্গে সীমান্তের প্রধান প্রবেশপথটি বন্ধ করে দিয়েছে।
দুই দেশই নিজেদের আকাশে অন্য দেশের উড়োজাহাজ প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। নিয়ন্ত্রণরেখায় দুই দেশের সেনাদের গোলাগুলির খবরও প্রকাশ পেয়েছে। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার নিয়ন্ত্রণরেখা সংলগ্ন এলাকায় পূর্ণমাত্রার সামরিক মহড়া চালায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী। তার পরদিন পাকিস্তান থেকে সব ধরনের পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করেছে ভারত।
পাকিস্তান সরকার বলেছে, ভারত আগামী কয়েক দিনের মধ্যে সামরিক হামলা চালাতে পারে বলে ‘নির্ভরযোগ্য গোয়েন্দা তথ্য’ রয়েছে তাদের কাছে।
অন্যদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মঙ্গলবার ও বুধবার তার নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের নিয়ে টানা বৈঠক করেছেন। ভারতীয় সেনাবাহিনী যাতে প্রয়োজনে হামলা চালাতে পারে, সেজন্য তিনি ‘পূর্ণ স্বাধীনতা’ দিয়েছেন বলেও খবর এসেছে।
পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিবেশীর মধ্যে আরো একটি যুদ্ধ লাগার শঙ্কা তৈরি হওয়ায় পুরো ভারতীয় উপমহাদেশ অস্বস্তিতে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে পরিস্থিতি শান্ত করতে উদ্যোগী হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।