গভীর রাতে হঠাৎ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কেঁপে উঠেছে পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর। মঙ্গলবার রাতে ২৫ মিনিট ধরে নয়টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে ভারত, যেগুলোকে ‘সন্ত্রাসীদের আস্তানা’ বলছে দেশটি।
প্রতিবাদে পাকিস্তানও গোলাবর্ষণসহ সামরিক জবাব দিয়েছে। কাশ্মীরের পেহেলগামে সাম্প্রতিক হামলায় ২৬ জনের প্রাণহানির ঘটনার জেরে যুদ্ধের দামামা বেজে উঠেছে পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী দুই দেশে।
‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে যে জায়গাগুলোতে আক্রমণের দাবি করেছে ভারত, সে সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
মারকাজ তৈয়বা ক্যাম্প
ভারত বলছে, ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে এই ক্যাম্প। এটি লস্কর-ই-তৈয়বার সদরদপ্তর ছিল। গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার ঘটনার সঙ্গে এ ক্যাম্পের সংযোগ রয়েছে বলে মনে করা হয়।
এই ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন আজমল কাসাব, যিনি ২০০৮ সালে মুম্বাই হামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ওই ঘটনায় ১৬০ জনেরও বেশি মানুষের প্রাণ গিয়েছিল।
মারকাজ সুবহান ক্যাম্প
সীমান্ত থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে এই ক্যাম্প। এটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী জইশ-ই-মুহাম্মদের প্রধান দপ্তর ছিল, যেখানে সদস্য নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হত।
মেহমুনা জয়া ক্যাম্প
ভারতের হামলার লক্ষ্যবস্তুর একটি মেহমুনা জয়া ক্যাম্প। দেশটি বলছে, সীমান্ত থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে এ ক্যাম্পটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিজবুল মুজাহিদীনের। পেহেলগামে হামলার পরিকল্পনা ও হামলা চালানো হয় এই ক্যাম্প থেকে। এর আগে ২০১৬ সালে ভারতের বিমান ঘাঁটিতে হামলার সঙ্গেও এই ক্যাম্পের সংযোগ রয়েছে ভারত দাবি করেছে।
গুলপুর ক্যাম্প
সীমান্ত থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে গুলপুর ক্যাম্প লস্কর-ই-তৈয়বার ঘাঁটি। ভারতের দাবি, কাশ্মীরের পুঞ্চ অঞ্চলে গত জুনে তীর্থযাত্রীদের ওপর একটি হামলায় নয়জনের প্রাণ গিয়েছিল। ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্ত্রাসীরা গুলপুর ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলার পরিকল্পনাকারী জাকি-উর-রহমান লাখভি এ ক্যাম্পে মাঝেমধ্যে আসা-যাওয়া করতেন।
সরজল ক্যাম্প
ভারতনিয়ন্ত্রিত জম্মু কাশ্মীরে গত মার্চে একটি হামলায় চার পুলিশ সদস্য নিহতের ঘটনায় জড়িতরা এ ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। সীমান্ত থেকে পাকিস্তানের ৬ কিলোমিটার ভেতরে এ ক্যাম্প থেকেই ওই হামলা চালানো হয়েছিল বলে ভারতের দাবি।
আব্বাস ক্যাম্প
ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরের এই ক্যাম্প লস্কর-ই-তৈয়বার আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীদের ‘প্রধান কেন্দ্র’, দাবি ভারতের।
সাইয়েদেনা বেলাল ক্যাম্প
ভারত বলছে, সাইয়েদেনা বেলাল ক্যাম্প জইশ-ই-মুহাম্মদের একটি আস্তানা। অস্ত্র ও বিস্ফোরক চালনার প্রশিক্ষণ এবং সন্ত্রাসীদের টিকে থাকার যাবতীয় প্রশিক্ষণ সেখানে দেওয়া হয়।
সাওয়াই নালা ক্যাম্প
ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে সাওয়াই নালা ক্যাম্প লস্কর-ই-তৈয়বার একটি প্রশিক্ষণ আস্তানা, দাবি ভারতের।
বারনালা ক্যাম্প
ভারত বলছে, এই ক্যাম্পটি সন্ত্রাসীদের অস্ত্র পরিচালনা, বিস্ফোরক দ্রব্য বা বোমা তৈরি ও জঙ্গলে টিকে থাকার কৌশল শেখানোর কাজে ব্যবহৃত হয়।
বিবিসি লিখেছে, ভারত যে নয়টি স্থানে হামলার কথা বলছে, সেগুলো সন্ত্রাসীদের অবকাঠামো। এসব জায়গা থেকে সন্ত্রাসীরা হামলার পরিকল্পনা ও আক্রমণ চালাত। ভারত বলছে, তারা পাকিস্তানি কোনো সামরিক স্থাপনায় আক্রমণ চালায়নি।
তবে পাকিস্তানের দাবি, তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা কাশ্মীরের মুজাফ্ফরাবাদ ও কোটলি এবং পাঞ্জাবের বাহাওয়ালপুরে ভারত আক্রমণ চালিয়েছে।
জিওটিভিকে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেন, ভারত বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা চালিয়েছে। ভারত হামলার লক্ষ্যবস্তুগুলোকে ‘সন্ত্রাসী আস্তানা’ বলে যে দাবি করেছে তা মিথ্যা।
মঙ্গলবার রাতের পাল্টাপাল্টি হামলায় পাকিস্তানে অন্তত ২৬ জন এবং ভারতে ১০ জন মারা গেছে। যদিও ২৪টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে অন্তত ৭০ জনকে হত্যা করার দাবি করেছে ভারত।