বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে (ডব্লিউএইচও) আগামী পাঁচ বছরে ৫০ কোটি মার্কিন ডলার অনুদান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে চীন।
সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠিত ৭৮ তম বিশ্ব স্বাস্থ্য পরিষদে এই ঘোষণা দেন চীনের উপপ্রধানমন্ত্রী লিউ গোঝোং। আর যুক্তরাষ্ট্র অনুদান বন্ধ করে দেওয়ার পর এই অর্থায়নের মাধ্যমে চীন এখন ডব্লিউএইচওর সর্ববৃহৎ রাষ্ট্রীয় দাতা।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চলতি বছরের বাজেট বরাদ্দ বন্ধ করে ডব্লিউএইচও থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর সংস্থাটি এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে গভীর আর্থিক সংকটে পড়েছে।
এর আগে পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রই ছিল ডব্লিউএইচওর সর্ববৃহৎ দাতা। ওয়াশিংটনের সরে যাওয়ার ফলে সংস্থাটির বাজেটে ৬০ কোটি ডলারের ঘাটতি হয়েছে।
গত মাসে ১৯ থেকে ২৭ তারিখ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত বিশ্ব স্বাস্থ্য পরিষদে অংশ নেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। এর মাধ্যমে দেশটি নিজেদের ৭৬ বছরের ইতিহাস ভাঙল। গত ৭৬ বছরে বিশ্ব স্বাস্থ্য পরিষদের কোনো সম্মেলনে অনুপস্থিত থাকেনি ওয়াশিংটন।
এবারের সম্মেলনে সদস্য রাষ্ট্রগুলো ২০২৬-২৭ সালের জন্য ৪ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের বাজেট অনুমোদন করেছে, যা পূর্বপ্রস্তাবিত ৫ দশমিক ৩ বিলিয়নের তুলনায় ২০ শতাংশ কম। একই সঙ্গে আগামী দুই বছরে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর বাধ্যতামূলক অর্থদানের হার ২০ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়।
সম্মেলনে চীনের উপপ্রধানমন্ত্রী লিউ বলেন, ‘আজকের বিশ্ব একপাক্ষিকতা ও ক্ষমতার রাজনীতির অভিঘাতে আক্রান্ত, যা বৈশ্বিক স্বাস্থ্য নিরাপত্তায় বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সংকট কাটিয়ে ওঠার একমাত্র পথ বহুপক্ষীয় সহযোগিতা।’
ডব্লিউএইচও আরও জানিয়েছে, কাতার ও সুইজারল্যান্ডসহ কয়েকটি দেশ সম্মিলিতভাবে অন্তত ১৭ কোটি ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
তবে আর্থিক সংকট মোকাবিলায় ডব্লিউএইচও ইতিমধ্যে বিশ্বব্যাপী কর্মীসংখ্যা হ্রাস ও বিভিন্ন কর্মসূচি সীমিত করা শুরু করেছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, এতে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা মোকাবিলায় সংস্থার সক্ষমতা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হতে পারে।
আমস্টারডামের জোয়েপ ল্যাঙ ইনস্টিটিউটের গ্লোবাল হেলথ ডিপ্লোমেসি বিভাগের পরিচালক ক্রিস্টোফ বেন বলেন, ‘ডব্লিউএইচওর সংকট এখন শুধু বাজেট ঘাটতি নয়। যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বিশ্বের সবচেয়ে দক্ষদের মধ্যে পড়েন। তাঁদের অভাব অবশ্যই অনুভূত হবে।’
তবে, অনেক পর্যবেক্ষকের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের অনুপস্থিতিই হয়তো দীর্ঘ প্রতীক্ষিত আন্তর্জাতিক মহামারি চুক্তিতে সবাই সম্মত হওয়ার প্রক্রিয়ায় একপ্রকার ‘সহায়ক’ হয়েছে।
গত মঙ্গলবার পরিষদে তিন বছরের আলোচনা শেষে ঐতিহাসিক ‘ডব্লিউএইচও প্যানডেমিক অ্যাগ্রিমেন্ট’ গৃহীত হয়। এতে ১২৪টি দেশ পক্ষে ভোট দেয়, বিপক্ষে কোনো ভোট পড়েনি। তবে, ১১ সদস্য ভোট দেওয়া থেকে বিরত ছিল।
এই চুক্তির মূল লক্ষ্য হলো, ভবিষ্যতে মহামারি মোকাবিলায় সব দেশের মধ্যে সমন্বয় করে কাজ করা এবং আগে থেকেই প্রস্তুতি রাখা। কোভিড-১৯ মহামারির সময় যে বিষয়গুলোতে ঘাটতি দেখা গিয়েছিল—যেমন: টিকা, ওষুধ ও রোগ নির্ণয়ের জন্য দরকারি পরীক্ষা সরঞ্জাম সবার হাতে পৌঁছায়নি—
এই চুক্তির মাধ্যমে তা ঠিক করার চেষ্টা করা হচ্ছে। যেন ভবিষ্যতে এসব জিনিস সব দেশের মানুষ সমানভাবে পেতে পারে।
ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস এ বিষয়ে বলেন,
‘এই চুক্তি দেখিয়ে দিয়েছে জনস্বাস্থ্য, বিজ্ঞান এবং ঐক্যই আসল শক্তি। আন্তর্জাতিক সমাজ বুঝতে পেরেছে, আমাদের মানুষ, সমাজ এবং অর্থনীতিকে কোভিড-১৯-এর মতো বিপর্যয় থেকে বাঁচাতে হলে আগে থেকেই ভালোভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে।’