মার্কিন ভিসা স্থগিতাদেশে হাজারো বিদেশি শিক্ষার্থীর স্বপ্ন ভেঙে পড়েছে। হোয়াইট হাউজের নির্দেশনায় সম্প্রতি বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা ইন্টারভিউ আপাতত স্থগিত রাখার সিদ্ধান্তে হতবাক, আতঙ্কিত ও ক্ষুব্ধ তাদের অনেকেই।
এই সিদ্ধান্তের পিছনে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা প্রার্থীদের সোশ্যাল মিডিয়া যাচাই-বাছাই আরও কঠোরভাবে সম্প্রসারণের পরিকল্পনা বলেও জানা গেছে।
অনলাইন সিএনএন এ খবর দিয়ে বলছে, নাইজেরিয়ান সাংবাদিক আদেফেমোলা আকিনটাডে সম্প্রতি কলম্বিয়া জার্নালিজম স্কুলে মাস্টার্সে ভর্তি হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রে ভিসার আবেদন করতে যাচ্ছিলেন ঠিক তখনই জানতে পারেন ভিসা প্রক্রিয়া স্থগিত।
৩১ বছর বয়সী আকিনটাডে বলেন, আমি এখন কী করব বুঝে উঠতে পারছি না। এটা আমার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন। তিনি ইতিমধ্যেই ভর্তি ফি দিয়েছেন এবং আগস্টে নিউ ইয়র্কে ক্লাস শুরু হওয়ার কথা। তিনি বলেন, আমি কোনো ব্যাকআপ পরিকল্পনা রাখিনি। সিএনএনের সঙ্গে কথা বলা আরও অনেক শিক্ষার্থী নিজেদের পরিচয় গোপন রেখে বলেছেন, তারা এখন ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর অনিশ্চয়তায়।
একজন কানাডিয়ান শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন কলম্বিয়ায়। তিনি বলেন- আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে বেছে নিয়েছিলাম মুক্তচিন্তা ও শিক্ষার স্বাধীনতার জন্য। এখন জানি, সোশ্যাল মিডিয়ার নিরীহ পোস্টও হয়তো শিক্ষাজীবনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে।
হার্ভার্ড ল স্কুলে ভর্তি হওয়া আরেক কানাডিয়ান শিক্ষার্থী জানান, একটি প্রাইড প্যারেডে অংশগ্রহণের ছবি পোস্ট করার পর তা মুছে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে দ্বিধায় পড়েছেন।
তিনি বলেন, আমরা ঠিক করেছিলাম পোস্টটা থাকুক, তবে ক্যাপশন পাল্টাই। আমি ট্রান্স পতাকাটা সরিয়ে দিলাম। এটা নিঃসন্দেহে প্রমাণ করে যে এটা ভয় থেকে করেছি এবং এই ভয় সফলভাবে কাজ করছে।
ইউনিভার্সিটি অব নেভাদার ইমিগ্রেশন ক্লিনিকের পরিচালক মাইকেল কাগান বলেন, এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের উদ্বেগ একেবারে যৌক্তিক। উচ্চশিক্ষা ও অভিবাসন দুই ক্ষেত্রেই এটি একধরনের নীরব হামলা। কনরাড কুনাডু একজন বৃটিশ শিক্ষার্থী। তিনি জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করার সুযোগ পেয়েছেন।
তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তার ভাষায়- আমার গবেষণার অনেক সুযোগ হয়তো হারিয়ে যাবে, সেগুলো শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই পাওয়া যেত।
হার্ভার্ড ল স্কুলে ভর্তি হওয়া কানাডিয়ান শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি কৃতজ্ঞ যে হার্ভার্ড এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কথা বলছে। যদি হার্ভার্ডও নতিস্বীকার করে, তবে সমাজব্যবস্থা ধসে পড়বে। সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান যদি হার মানে, বাকিরা তো নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।’
২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ১১ লাখেরও বেশি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করেছেন। এই হঠাৎ পরিবর্তনে হাজারো শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। নাইজেরিয়ান সাংবাদিক আকিনটাডে বলেন, এটা যেন আমার প্রতি একটা বার্তা- ‘আমরা তোমাকে চাই না।’