গাজায় মানবিক সহায়তা নিয়ে রওনা হওয়া একটি নৌযানের যাত্রীদের প্রতি ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। এই বোটে সুইডিশ জলবায়ু কর্মী গ্রেটা থুনবার্গও উপস্থিত ছিলেন। বোটটিতে থাকা ফরাসি চিকিৎসক বাতিস্ত আঁদ্রে ফ্রান্সে ফিরে সংবাদমাধ্যমকে এই অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী রাজনৈতিক দৈনিক পলিটিকো এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করেছে।
আঁদ্রে জানান, যদিও যাত্রীদের ওপর কোনো শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়নি, তবে ইসরায়েলি সীমান্তরক্ষীরা ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের ঘুমাতে দেননি এবং উপহাস করেছেন। বিশেষ করে গ্রেটা থুনবার্গকে উদ্দেশ্য করে এই ধরনের আচরণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, "যখনই আমরা ঘুমানোর চেষ্টা করতাম, তখনই উচ্চস্বরে গান বাজানো হতো, এমনকি কেউ কেউ নাচতেও শুরু করতো।" আটক থাকাকালীন খাবার ও পানি পেতেও যাত্রীদের যথেষ্ট ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে বলে আঁদ্রে অভিযোগ করেন।
'মাদলিন' নামের এই বোটটি 'ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন'-এর উদ্যোগে গত ১ জুন ইতালি থেকে গাজার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছিল। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার সাধারণ মানুষের কাছে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়া। গত সোমবার ভোরে গাজার উপকূল থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে ইসরায়েলি নৌবাহিনী বোটটি থামিয়ে এর যাত্রীদের আটক করে। মঙ্গলবার বাতিস্ত আঁদ্রে এই ঘটনাকে 'দুর্ব্যবহার' হিসেবে আখ্যায়িত করেন, যদিও তিনি নিজেকে একজন আইনজ্ঞ নন বলে উল্লেখ করেন।
ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের তথ্য অনুযায়ী, থুনবার্গ, আঁদ্রে এবং আরও দুজন যাত্রী দেশে ফেরত যাওয়ার নথিতে স্বাক্ষর করে মঙ্গলবারের মধ্যেই নিজ নিজ দেশে ফিরে গেছেন। তবে, বাকি যাত্রী ও কর্মীরা, যাদের মধ্যে ফরাসি ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সদস্য রিমা হাসানও রয়েছেন, এখনো ইসরায়েলি হেফাজতে আছেন এবং তাদের আদালতে পেশ করা হবে বলে জানা গেছে।
সোমবার একটি পূর্বধারিত ভিডিও বার্তায় গ্রেটা থুনবার্গ জানান, তাদের "ইসরায়েল কর্তৃক আটক ও অপহরণ" করা হয়েছে। তিনি সুইডিশ সরকারের প্রতি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর ওপর চাপ সৃষ্টির আহ্বান জানান। থুনবার্গ এই অভিযানকে ইসরায়েলের গাজা অবরোধ এবং চলমান মানবিক সংকটের বিরুদ্ধে একটি শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ হিসেবে উল্লেখ করেন।
তবে, ইসরায়েলি সরকার এই অভিযানকে 'আইন লঙ্ঘন' হিসেবে আখ্যায়িত করেছে এবং এটিকে একটি 'জনসংযোগের নাটক' বলে অভিহিত করে বোটটিকে 'সেলফি ইয়ট' বলে কটাক্ষ করেছে।