অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বহুল আলোচিত বৈঠক আজ শুক্রবার। লন্ডনের হোটেল ডোরচেস্টারে স্থানীয় সময় সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত ২ ঘন্টার এই বৈঠকটি হবে ‘ওয়ান টু ওয়ান’।
জানা গেছে, বৈঠকে আগামী জাতীয় নির্বাচনের সময় এগিয়ে নিয়ে আসাসহ অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহীত নানা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা হবে। তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়টিও আসতে পারে আলোচনায়। ড. ইউনূসের সাথে তারেক রহমানের আজকের এই বৈঠকটি নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ কৌতূহল তৈরি হয়েছে। ফলে সবার চোখ এখন লন্ডনের দিকে। আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বৈঠকটিকে বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য একটা বড় টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিএনপিসহ রাজনৈতিক মহল আশা করছে, এই বৈঠকের মধ্য দিয়ে নির্বাচনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে যে রাজনৈতিক মতদ্বৈততা আছে, সেগুলো কেটে যাবে।
চার দিনের সরকারি সফরে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বর্তমানে লন্ডনে রয়েছেন। গত মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকালে সেখানে পৌঁছান তিনি। অন্যদিকে ২০০৮ সাল থেকে সপরিবারে লন্ডনে অবস্থান করছেন তারেক রহমান, যিনি কার্যত এখন বিএনপির মূল নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ড. ইউনূস-তারেক রহমানের এই বৈঠকের সম্ভাবনা নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা হচ্ছিল। এমন অবস্থায় গত সোমবার সরকার ও বিএনপির তরফ থেকে বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। এরপর থেকেই বৈঠকের আলোচ্যসূচি কী হবে, তারেক রহমান কোন কোন বিষয় তুলে ধরবেন- সেটা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানামুখী আলোচনা হতে থাকে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কোন কোন ইস্যুতে আলোচনা করবেন, গত সোমবার অনুষ্ঠিত দলটির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সেই দায়িত্ব পুরোপুরি তারেক রহমানের ওপর অর্পণ করা হয়।
বৈঠকে মূল ফোকাস থাকবে নির্বাচনের ওপর
বিএনপির সূত্রগুলো বলছে, বৈঠকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে মূলত তিনটি ইস্যু প্রাধান্য পেতে পারে। নির্বাচন, সংস্কার এবং বিচার। তবে মূল ফোকাস থাকবে নির্বাচনের ওপর, বিশেষ করে আগামী জাতীয় নির্বাচনের সময় এগিয়ে নিয়ে আসা। ঈদুল আজহার আগের দিন অন্তর্বর্তী সরকার আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচনের যে রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে, সেটিকে যৌক্তিক মনে করছে না বিএনপি। দলটি মনে করে, নির্বাচনের জন্য চলতি বছরের ডিসেম্বরই উপযুক্ত সময়। তবে নির্বাচন আগামী বছরের জানুয়ারি কিংবা ফেব্রুয়ারিতে অর্থাৎ রোজার আগে হলেও দলটির আপত্তি থাকবে না বলে বিএনপির অভ্যন্তরীণ একাধিক সূত্র বলছে। দলটির অভিমত, সর্বোচ্চ এই সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত। ড. ইউনূসের সাথে বহুল আলোচিত আজকের এই বৈঠকে তারেক রহমান সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এই বিষয়টি আরও সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরবেন বলে দলীয় সূত্রগুলো বলছে।
গ্রহণযোগ্য ফয়সালা হওয়ার আশা
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ আজকের বৈঠক প্রসঙ্গে বলেন, বৈঠকটি যেহেতু শীর্ষ পর্যায়ের অর্থাৎ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে, সেখানে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সব বিষয়গুলোই উঠে আসবে, বিশেষ করে আগামী জাতীয় নির্বাচনের সময় এগিয়ে নিয়ে আসার বিষয়টি আসবে। আলোচনায় আসবে সরকারের নিরপেক্ষতা বহাল রাখার বিষয়টিও। এছাড়া দেশে আইনের শাসন ও আদালতের রায় মেনে চলার ওপরও গুরুত্ব দেওয়া হবে। সংস্কারের বিষয়টিও উঠতে পারে। আমরা ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়েই জিনিসগুলো দেখব। আশা করব যে, শীর্ষ পর্যায়ের এই আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে জাতীয় ভিত্তিতে একটা গ্রহণযোগ্য ফয়সালা বা সিদ্ধান্ত ওখানে হবে। এটা আমাদের প্রত্যাশা, জাতিরও প্রত্যাশা তাই।
দলীয় সূত্রগুলো বলছে, বৈঠকে লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়টিও আলোচনায় আসতে পারে। ওয়ান-ইলেভেন সরকারের সময় ২০০৭ সালের ৭ মার্চ তারেক রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরের বছর ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি পেয়ে ১১ সেপ্টেম্বর চিকিৎসার জন্য সপরিবারে লন্ডন যান তিনি। তখন থেকেই লন্ডনে অবস্থান করছেন তারেক রহমান। লন্ডনে থাকাকালে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি মা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দুদকের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে যাওয়ার পর দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন ‘সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান’ তারেক রহমান। এরপর সেখান থেকেই দল পরিচালনা করছেন তিনি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ‘শিগগিরই’ দেশে ফিরবেন বলে সম্প্রতি জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গত মঙ্গলবার গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি আরও বলেন, তারেক রহমান নিশ্চয় দেশে ফিরবেন, অবশ্যই দেশে ফিরবেন।