শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বিশ্বে ৬৭ জনের মধ্যে একজন জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত

ইউএনএইচসিআরের প্রতিবেদন
যাযাদি ডেস্ক
  ১২ জুন ২০২৫, ১৭:৫২
বিশ্বে ৬৭ জনের মধ্যে একজন জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত
বিশ্বজুড়ে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। ফাইল ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। বর্তমানে এ সংখ্যা ১২ কোটি ৩২ লাখে পৌছেছে। যা বৈশ্বিক জনসংখ্যার গড় হিসেবে প্রতি ৬৭ জনে একজন।

আজ বৃহস্পতিবার (১২ জুন) জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

1

প্রতিবেদন মতে, ২০২৩ সালের শেষে এই সংখ্যা ছিল ১১ কোটি ৬২ লাখ। এক বছরের ব্যবধানে আরও ৭০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। যদিও ২০২৫ সালের প্রথম চার মাসে সামান্য হ্রাস পেয়ে এই সংখ্যা এপ্রিল শেষে দাঁড়ায় ১২ কোটি ২১ লাখে।

জাতিসংঘের শরণার্থী হাইকমিশনার ফিলিপো গ্রান্ডি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অস্থিরতা ও সমসাময়িক যুদ্ধ পরিস্থিতি মানব ইতিহাসে এক নতুন দুঃসহ অধ্যায়ের সূচনা করেছে। বাস্তুচ্যুত মানুষের মানবিক দুর্দশা শুধু সংখ্যা নয়, এটি একেকটি ধ্বংস হওয়া জীবন। আমাদের শান্তি প্রতিষ্ঠা ও দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের জন্য দ্বিগুণ চেষ্টা করতে হবে।’

১২ কোটি ৩২ লাখের এই মোট সংখ্যার মধ্যে ৭ কোটি ৩৫ লাখ মানুষ নিজেদের দেশের ভেতরে (ইন্টারনালি ডিসপ্লেসড পারসন বা আইডিপি) বাস্তুচ্যুত হয়েছেন—বিভিন্ন সংঘাত, সহিংসতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ অথবা মানবসৃষ্ট সংকটের কারণে।

জাতিসংঘ মনে করে, গাজায় ইসরাইলি সামরিক হামলার ফলে বিশেষ করে বাস্তুচ্যুতির মাত্রা চরমে পৌঁছেছে।

জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, গাজা উপত্যকার প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ, অর্থাৎ ২০ লাখের বেশি, ঘরছাড়া হয়েছেন। ২০২৪ সালের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে ৪ কোটি ২৭ লাখ মানুষ শরণার্থী হিসেবে রয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৬ লাখ ১৩ হাজার কম। এই সংখ্যায় হ্রাসের পেছনে আফগান ও সিরীয় শরণার্থীদের সংখ্যা সংশোধন এবং ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের পরিসংখ্যান হালনাগাদ করার প্রভাব রয়েছে।

তবে, সুদানের শরণার্থী সংখ্যা এক বছরে ৬ লাখ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১ লাখে২, যা উদ্বেগের বিষয়।

এছাড়া যারা অন্য দেশে রাজনৈতিক নিপীড়ন, সহিংসতা বা জীবনের আশঙ্কায় নিরাপত্তা চায়—তাদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৪ লাখে। যা ২০২৩ সালের তুলনায় ২২ শতাংশ বেশি।

সব মিলে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা এখন বৈশ্বিক জনসংখ্যার প্রতি ৬৭ জনে ১ জনে এসে ঠেকেছে। এটি শুধু মানবিক সংকটই নয়, বিশ্ব ব্যবস্থার এক নির্মম ব্যর্থতার চিত্রও তুলে ধরে।

২০২৪ সালে বিশ্বের বাস্তুচ্যুত মানুষের মধ্যে বড় একটি অংশ এসেছে মাত্র চারটি দেশ থেকে—সুদান (১ কোটি ৪৩ লাখ), সিরিয়া (১ কোটি ৩৫ লাখ), আফগানিস্তান (১ কোটি ৩ লাখ) এবং ইউক্রেন (৮৮ লাখ)।

অন্যদিকে, ২০২৪ সালে প্রায় ১৬ লাখ শরণার্থী তাদের নিজ দেশে ফিরে গেছে। যদিও বেশিরভাগই ফিরে গেছেন আফগানিস্তান, সিরিয়া, দক্ষিণ সুদান বা ইউক্রেনের মতো সংঘাতপূর্ণ এলাকায়, যা অনেকক্ষেত্রে টেকসই ও নিরাপদ প্রত্যাবর্তন নয়।

এছাড়া নিজ দেশের ভেতরে বাস্তুচ্যুত ৮২ লাখ মানুষ নিজ নিজ এলাকায় ফিরে গেছেন। ইউএনএইচসিআরের হিসাব অনুযায়ী, এসব প্রত্যাবর্তনের প্রায় ৯০ শতাংশ ঘটেছে মাত্র আটটি দেশে—আফগানিস্তান, কঙ্গো, ইথিওপিয়া, লেবানন, মিয়ানমার, দক্ষিণ সুদান, সিরিয়া ও ইউক্রেন।

জাতিসংঘের তথ্য কর্মকর্তা ম্যাথিউ সাল্টমার্শ বলেন, ‘অনেকেই যেসব দেশে ফিরে গেছেন, সেখানে এখনো নিরাপত্তা, খাদ্য ও জীবিকার তীব্র সংকট রয়েছে। ফলে এই প্রত্যাবর্তনগুলো স্বল্পমেয়াদী ও ঝুঁকিপূর্ণ।’

তবু জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার হাইকমিশনার ফিলিপো গ্রান্ডি আশার কথা জানিয়ে বলেন, ‘শেষ ছয় মাসে কিছু আশার আলো দেখা গেছে। বিশেষ করে প্রায় ২০ লাখ সিরীয় দীর্ঘ এক দশকের বাস্তুচ্যুতি শেষে দেশে ফিরেছেন। দেশটি এখনো ভঙ্গুর, তবে নতুন করে জীবন গড়ার জন্য আমাদের সহায়তা প্রয়োজন।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে