আন্তর্জাতিক

ইরানের রাজধানী তেহরানসহ বিভিন্ন শহরের রাস্তায় এখন এক অস্থিরতা, এক উদ্বেগ। ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলার পরে সাধারণ নাগরিকদের সঙ্গে কথা বললে স্পষ্ট বোঝা যায়—তাদের মনে যেন যুদ্ধের ছায়া ভর করেছে। কয়েক দশকের মধ্যে প্রথমবার, এত বিস্তৃত ও পরিকল্পিত হামলার শিকার হয়েছে দেশটি। এর আগে এমন পরিস্থিতি দেখা গিয়েছিল মূলত ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময়।

জনগণের চোখে যুদ্ধ এখন আর কল্পনা নয়, বাস্তব আশঙ্কা। “মানুষ যেন বিশ্বাস করতে পারছে না, আবারও আমরা যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছি,” বলেন তেহরানের এক বয়োজ্যেষ্ঠ দোকানদার।

“আমরা একদিকে নিষেধাজ্ঞায় পিষ্ট, অপরদিকে শত্রুপক্ষ আমাদের ভূখণ্ডে ঢুকে পড়ছে। আর কত সহ্য করব?”

এই অনুভূতি কেবল তেহরানে সীমাবদ্ধ নয়। ইস্পাহান, কেরমানশাহ এবং কুমসহ বিভিন্ন শহরে মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে। তারা “প্রতিশোধ চাই”, “জবাব দাও ইসরায়েলকে”— এমন স্লোগান দিচ্ছে এবং সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করছে যেন দ্রুত ও কঠিন পদক্ষেপ নেওয়া হয়।

তেহরানে অবস্থানরত সাংবাদিক তোহিদ আসাদি জানিয়েছেন, “এই প্রতিক্রিয়া শুধু এই হামলার নয়। ইরানিরা এটিকে একটি বড় চিত্রের অংশ হিসেবে দেখছে—যেখানে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা, ইসরায়েলি গুপ্তচরবৃত্তি ও বিজ্ঞানীদের হত্যা, এবং ধারাবাহিকভাবে বৈরী মনোভাব প্রতিনিয়ত তাদের দেশকে আক্রমণ করে চলেছে।”

এই পটভূমিতে, এই হামলা যেন একটি বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে, যা বহুদিনের জমে থাকা ক্ষোভকে প্রকাশ করেছে।

সরকারি পদক্ষেপ নিয়ে অসন্তুষ্ট অনেক সাধারণ মানুষ বলছে, শুধুমাত্র কূটনৈতিক প্রতিবাদ বা নিন্দা যথেষ্ট নয়। তারা সরকারের কাছ থেকে প্রত্যাশা করছে, “দৃঢ়, কঠিন এবং দাঁতভাঙা জবাব”। এমনকি অনেকে দাবি করছেন, ইসরায়েলের অভ্যন্তরে পাল্টা হামলা চালাতে হবে।

এদিকে সাধারণ নাগরিকদের মনোজগতে এখন এক ধরনের আতঙ্ক কাজ করছে। রাজধানীতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে, বিভিন্ন স্কুল-কলেজে উপস্থিতি কমেছে, এবং বাজারে পণ্যের দাম দ্রুত বাড়ছে।

এক তরুণী শিক্ষার্থী বলেন, “আমার মা রাতে ঘুমাতে পারেন না। প্রতিদিন ভয় লাগে, যেন আমরা যুদ্ধের মুখে আছি।”

ইরানি জনগণ একদিকে পশ্চিমা চাপ ও নিষেধাজ্ঞায় ক্ষতবিক্ষত, অন্যদিকে ইসরায়েলের সরাসরি সামরিক আগ্রাসনে আতঙ্কিত। তারা এই মুহূর্তকে দ্বিতীয় ইরান-ইরাক যুদ্ধের শুরুর মতোই দেখছে। সরকার কীভাবে এই চাপ সামলাবে, সেটাই এখন জাতির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।