একজন চিকিৎসক রোগীর সাথে কথা বলছেন আর মাথা নিচু করে প্রেসক্রিপশন করছেন। তার চারপাশে প্রচুর রোগীর ভীড়। বেশির ভাগই নারী ও শিশু রোগী। ছোট্ট ওই কক্ষে তীল ধারনের যেন ঠাঁই নেই। মাঝে মধ্যেই কান্না করছে শিশুরা। কার আগে কে ডাক্তার দেখাবে এই নিয়েও আছে কিছুটা হৈচৈ। কিন্তু চিকিৎসক পরম ধৈর্য্য নিয়ে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন।
টানা রোগী দেখেও চিকিৎসকের যেন কোন ক্লান্তি নেই। এমন দৃশ্য ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের। বর্তমানে মাত্র ৫ জন চিকিৎসক দিয়ে চলছে হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা। ফলে রোগী দেখতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকায় দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে ডাক্তার দেখাতে হয় রোগীদের। এতে দূর্ভোগের শিকার হচ্ছেন নারী-শিশুসহ রোগীরা। চিকিৎসা সেবা আরও সহজ করতে আখাউড়া হাসপাতালে দ্রæত চিকিৎসকসহ জনবল বাড়ানোর দাবী রোগীদের।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আখাউড়া উপজেলার ৫ টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভাসহ জেলা সদর উপজেলার বাসুদেব ইউনিয়ন থেকে রোগীরা আখাউড়া হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন। প্রতিদিন আউটডোরে ৩০০/৩৫০ জন রোগীকে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। জরুরী বিভাগে সেবা নেন ৭০/৮০ জন রোগী। অন্ত:বিভাগে প্রতিদিন ৪০/৪৫ জন রোগী ভর্তি থাকে। রোগী অনুযায়ী চিকিসৎক স্বল্পতার কারণে সেবা পেতে কষ্ট করতে হয় রোগীদের। অপরদিকে বাড়তি রোগী সামলাতে হিমশিম খেতে হয় চিকিৎসক ও নার্সদের। এ উপজেলার মানুষের চিকিৎসা সেবা সহজ করতে হাসপাতালে চিকিৎসক বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
বৃহস্পতিবার বেলা ১ টার সময় হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় ডাঃ লুৎফর রহমানের কক্ষে প্রচুর রোগী। ৬৫ বছরের বৃদ্ধা নারী তাহেরা খাতুন বলেন, এক ঘন্টা হয়েছে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। রোগীর ভীড় থাকাও এখনও ডাক্তার দেখাতে পারিনি। খুব কষ্ট হচ্ছে। এই হাসপাতালে আরও চিকিৎসক দরকার।
মারজিয়া বেগম নামে এক নারী তার ১১ মাসের ছেলেকে নিয়ে ডাক্তার দেখেতে হাসপাতালে এসেছেন। তিনি বলেন, ২ দিন ধরে ছেলে প্রচন্ড জ¦র। ২ ঘন্টা ধরে অপেক্ষা করছি। এখনও ডাক্তার দেখাতে পারছি না। হাসপাতালে আরও কয়েকজন চিকিৎসক থাকলে সহজে সেবা পাওয়া যেত। আখাউড়া হাসপাতালে জরুরী চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়ার দাবী জানান তিনি।
এক নারী অভিযোগ করেন ঔষুধ কোম্পানীর লোকজন ডাক্তারের চেম্বারের সামনে ভীড় করে থাকে। তাদের সামনে ডাক্তারকে সব কথা বলা যায় না।
আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ লুৎফর রহমান জানান, প্রতিদিন তিনি ১০০ থেকে ১৫০ জন রোগী দেখেন। এতে তার উপর যেমন চাপ পড়ে। তেমনি রোগীদেরও কষ্ট করে অপেক্ষা করতে হয়।
এ ব্যাপারে আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ হিমেল খান বলেন, হাসপাতালে বর্তমানে ৫ জন চিকিৎসক আছে। সীমিত চিকিৎসক দিয়েই আমরা সেবা দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের আন্তরিকতার কোন ঘাটতি নাই। জনবল সংকটের বিষয়টি উধর্তন কর্তৃপক্ষকে জানানে হয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বরে চিকিৎসকদের বিশেষ বিসিএস পরীক্ষা হবে। আশা করি তখন চিকিৎসক পাওয়া যাবে। পরিপূর্ণ জনবল পাওয়া গেলে আরও ভালো সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।