সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫, ৮ আষাঢ় ১৪৩২

নারী-পুরুষের মধ্যে ‘শুধুই বন্ধুত্ব’- আসলে কতটা সম্ভব?

যাযাদি ডেস্ক
  ২২ জুন ২০২৫, ২৩:৩৫
নারী-পুরুষের মধ্যে ‘শুধুই বন্ধুত্ব’- আসলে কতটা সম্ভব?
‘তুমি কি বলতে চাও, একজন নারী আর একজন পুরুষ শুধুই বন্ধু হতে পারে?’-

‘তুমি কি বলতে চাও, একজন নারী আর একজন পুরুষ শুধুই বন্ধু হতে পারে?’- এই প্রশ্নটি ছুড়ে দিয়েছিল হ্যারি। ১৯৮৯ সালের হলিউড ছবি When Harry Met Sally তখন পর্দা কাঁপাচ্ছে। চারদিক জুড়ে আলোচনার ঝড়- ‘নারী-পুরুষ কি সত্যিই কেবল বন্ধু হয়ে থাকতে পারে?’

সেই বিতর্ক এখনো জীবন্ত। বরং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নতুন যুক্তি, নতুন গবেষণা আর ধর্মীয় ব্যাখ্যা যোগ হয়েছে- রঙ ছড়িয়েছে, আবার জটও বেঁধেছে।

সম্প্রতি তুরস্কের ধর্মীয় দপ্তর ৯০ হাজার মসজিদে ঘোষণা দিয়েছে, নারী-পুরুষের বন্ধুত্ব শুরুতে নিরীহ মনে হলেও শেষমেশ তা ব্যাভিচারে গিয়ে ঠেকে।

এই ঘোষণার রেশ পড়েছে সমাজে। ধর্মীয় অনুশাসনের ছায়ায় আবারও ফিরে এসেছে পুরোনো প্রশ্ন- বন্ধুত্বের চাদরে লুকিয়ে থাকে কি সত্যিই লালসার মুখ?

যুক্তরাষ্ট্রের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, নারী-পুরুষ বন্ধুত্বে সাধারণত পুরুষরাই যৌন আকর্ষণ বেশি অনুভব করেন।

তাদের অনেকেই মনে করেন, নারী বন্ধুর মনেও নাকি একই আকর্ষণ কাজ করছে।

তবে গবেষকেরা এটাও বলছেন, এখান থেকেই এই বন্ধুত্বের মৃত্যু ঘোষণা করা যাবে না। কারণ, বেশিরভাগ মানুষ জানেন- আবেগ নিয়ন্ত্রণের নামই সভ্যতা।

মেটা ও নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা বিশ্লেষণ করেছেন ১৮০ কোটি ফেসবুক ব্যবহারকারীর বন্ধু তালিকা। মজার ছলে তৈরি করেছেন ‘হ্যারি-মেট-স্যালি ইনডেক্স’ (WHMSI)।

যার স্কোর ০- তার বিপরীত লিঙ্গের বন্ধু নেই। স্কোর ১- বন্ধুদের মধ্যে লিঙ্গের ভারসাম্য। আর ১ এর বেশি হলে বোঝা যায়- বিপরীত লিঙ্গের বন্ধু বেশি।

কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়- ফেসবুকে ‘বন্ধু’ হওয়া আর বাস্তবে বন্ধুত্ব এক জিনিস নয়। অনেকেই সেখানে আছেন, যাদের জীবনে কখনো দেখা হয়নি।

ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক রক্ষণশীল সমাজ- যেমন লিবিয়া, ইরাক, মিসর- সেখানে প্রতি ১০টি বন্ধুত্বের মধ্যে মাত্র একটি হয় নারী-পুরুষের মধ্যে। অন্যদিকে দক্ষিণ আমেরিকা, ক্যারিবীয় বা পশ্চিম আফ্রিকায় বিপরীত লিঙ্গের বন্ধুত্ব অনেক বেশি। কারণ, সেসব সমাজে যৌনতা ও সম্পর্ক নিয়ে খোলামেলা ভাবনা রয়েছে।

নাইজেরিয়ায়, যেখানে নারী-পুরুষ প্রায় সমান হারে কাজ করেন, সেখানে WHMSI স্কোর ০.৬৭। আর ভারতে যেখানে মাত্র ৪৩% নারী কাজ করেন, স্কোর নেমে আসে ০.৩৪-এ। অর্থাৎ, সমান অংশগ্রহণ মানেই বন্ধুত্বের সম্ভাবনা বাড়ে।

কিংস কলেজ লন্ডনের অধ্যাপক অ্যালিস ইভান্স বলেন, যেখানে নারীর আচরণেই পরিবারের সম্মান, সেখানে পুরুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব প্রায় কল্পনার মতো। তুরস্কের সমাজে এমন অনেক নারী আছেন, যারা এখনো স্বামী বা পিতার অনুমতি ছাড়া অফিস যেতে পারেন না। ফলে তারা বঞ্চিত থাকেন অফিসের সেই ‘পুরুষদের চায়ের আড্ডা’ থেকেও।

এভাবেই সমাজে গড়ে ওঠে সূক্ষ্ম, কিন্তু ভয়ংকর এক লিঙ্গবৈষম্য।

অক্সফোর্ডের গবেষক ডেভিড ক্রেচমার বলেন, ছেলেরা যখন মেয়েদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে, তখন তারা সমান আচরণ শিখে- কারণ তারা প্রেম করতে চায়! আর ভালোবাসা পেতে হলে শিখতে হয় সমান দৃষ্টিভঙ্গি।

আরিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষণায়ও উঠে এসেছে বিস্ময়কর তথ্য- ছোটদের যখন মেয়েদের সঙ্গে কাজ করতে বলা হয়, কিছু মাসের মধ্যেই তারা আগ্রহী হয়ে ওঠে মিশতে, বন্ধুত্ব করতে।

নারী-পুরুষের বন্ধুত্ব আসলেই সম্ভব- তবে তাতে থাকতে হবে আত্মসংযম, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সামাজিক সমতা। না হলে, ‘শুধুই বন্ধুত্ব’- শুধুই থেকে যাবে একটি প্রশ্নবোধক বাক্য হয়ে।

সূত্র : দ্য ইকোনমিস্ট

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে