রাশিয়ার ছোড়া ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ইউক্রেনের রাজধানী কিইভ ও এর আশপাশের অঞ্চলে এক শিশুসহ ১০ জন নিহত হয়েছেন।
গতকাল সোমবার ইউক্রেনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাতভর এসব হামলায় আরও অন্তত ৫০ জন আহত হওয়ার পাশাপাশি আবাসিক এলাকায় আগুন ধরে যায় এবং বোম্ব শেল্টার হিসেবে ব্যবহৃত একটি মেট্রো স্টেশনের প্রবেশপথ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
হামলায় কিইভ শহরের ব্যস্ত শেভচেনকিভস্কি এলাকায় একটি বহুতল অ্যাপার্টমেন্ট ব্লক ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মার্কিন দূতাবাস থেকে এক কিলোমিটারেরও কম দূরত্বের এই এই ব্লকটির ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে বেশ কয়েকটি মৃতদেহ বের করে এনেছেন উদ্ধারকর্মীরা।
এখানে ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ৯ জন প্রাণ হারিয়েছেন, জানিয়েছে ইউক্রেইনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
নির্মাণশ্রমিক ভ্যালেরি মানকুটা (৩৩) রয়টার্সকে জানান, হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত একটি ভবনের তিনতলার জানালা বেয়ে নিচে নেমে প্রাণ বাঁচান তিনি।
ভ্যালেরি বলেন, ‘চোখ খুলে দেখি চারপাশে ধ্বংস, শরীরজুড়ে ইট-পাথর। মনে হচ্ছিল নরক থেকে উঠে এলাম।’
ইউক্রেনের জরুরি পরিষেবা জানায়, শেভচেনকিভস্কি এলাকায় হামলায় অন্তত ৩৪ জন আহত হয়েছেন, তাদের মধ্যে চারজন শিশু।
ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইহোর ক্লিমেনকো জানিয়েছেন, রাতভর চালানো হামলায় কিইভ নগরীর ১০টি প্রধান অঞ্চলের মধ্যে ছয়টি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নগরীটির সিভিয়াতোশিনস্কি এলাকায় মেট্রো স্টেশনের প্রবেশপথ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কিইভের ভূগর্ভের গভীরে অবস্থিত মেট্রো স্টেশনগুলো পুরো যুদ্ধজুড়েই অন্যতম নিরাপদ বোম্ব শেল্টার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাজধানীর চারদিকে ঘিরে থাকা বৃহত্তর কিইভ অঞ্চলে হামলায় ৬৮ বছর বয়সী এক নারী নিহত হয়েছেন এবং আরও ৮ জন আহত হয়েছেন।
রাতভর বিস্ফোরণের শব্দ ও আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার পাল্টা গোলাগুলিতে কেঁপে ওঠে কিইভ। ইউক্রেইনের বিমানবাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়া এ রাতে ইউক্রেইনের চারটি অঞ্চলে ৩৫২টি ড্রোন ও ১৬টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে; এর মধ্যে তারা ৩৩৯টি ড্রোন ও ১৫টি ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করেছে।
দক্ষিণাঞ্চলীয় কৃষ্ণ সাগরের তীরবর্তী বন্দর শহর ওদেসা অঞ্চলে গভর্নর ওলেহ কিপার জানান, এখানে পৃথক এক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় আরও ৩ জন নিহত হয়েছেন আর আহত হয়েছেন ৮ জন।
ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার আক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত কয়েক হাজার বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন; যাদের বেশিরভাগই ইউক্রেইনের নাগরিক। তবে দুই পক্ষই বেসামরিকদের লক্ষ্যস্থল করার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
এদিকে যুদ্ধ বন্ধে আলোচনার কোনো অগ্রগতি না থাকায় সম্প্রতি কিইভ ও অন্যান্য শহরে রাশিয়ার হামলার মাত্রা বেড়েছে। ঠিক এমন সময়ে এই হামলা হলো, যখন হেইগে শুরু হচ্ছে নেটোর বার্ষিক সম্মেলন এবং ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে আলোচনার জন্য যুক্তরাজ্যে রয়েছেন।
রয়টার্স জানিয়েছে, রাশিয়ার পক্ষ থেকে এ হামলা নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।