মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার অন্তহীন যুদ্ধযাত্রা। মূলত ১৯৯০ সালের আগে এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক পদক্ষেপ ছিল সীমিত অথবা অস্থায়ী। কিন্তু, ইরাকের কুয়েত দখলের পর থেকে বিশ্ব পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রের এ অঞ্চল থেকে পিছু ফেরার পথ ক্রমেই আরও কঠিন হয়ে পড়েছে।
দুই দশক পার করে আবারও যুক্তরাষ্ট্র দাঁড়িয়ে আছে তাদের অন্যতম ‘সবচেয়ে বড় এবং ঝুঁকিপূর্ণ বিদেশ নীতি জুয়া’-র সামনে, রয়টার্স ঘটনাটিকে এমনভাবেই ব্যাখ্যা করেছে। আর সেই ঘটনা হলো— গত ২১ জুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন বিমানের বোমা হামলা। এই পদক্ষেপ কার্যত আমেরিকাকে ইসরায়েলের আঞ্চলিক শত্রু ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সরাসরি সম্পৃক্ত করে তুলেছে।
এই হামলার পর, হোয়াইট হাউস থেকে দেওয়া ভাষণে ট্রাম্প দাবি করেন, "আজ রাতে আমি বিশ্ববাসীকে জানাতে চাই, আমাদের হামলা ছিল সামরিকভাবে সম্পূর্ণ সফল।" তিনি বলেন, ইরানের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফোরদো ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক স্থাপনা, নাতানজ এবং ইসফাহানের বিভিন্ন স্থাপনাও এই হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল।
ট্রাম্প আরও বলেন, "মধ্যপ্রাচ্যের চরমপন্থী ইরানের পরমাণু সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রগুলো সম্পূর্ণ ধ্বংস করা হয়েছে। এই অঞ্চলের আতঙ্ক— ইরান, এখন শান্তির পথে আসতে বাধ্য হবে।"
রয়টার্সকে এক মার্কিন কর্মকর্তা জানান, এই হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত বি-২ বোমারু বিমান অংশ নেয়, যেগুলো ভূগর্ভস্থ সুরক্ষিত স্থাপনা বিধ্বংসী 'বাঙ্কার বাস্টার' বোমা বহনে সক্ষম। গভীর রাতে ইরানের ওপর মার্কিন হামলার পর এসব তথ্য আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করা হয়।
অন্যদিকে, তেহরান এই হামলাকে আন্তর্জাতিক আইনের চরম লঙ্ঘন আখ্যা দিয়ে জানায়, তারা সর্বশক্তি দিয়ে ইরানের ভূখণ্ড, সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা এবং জনগণ রক্ষায় বদ্ধপরিকর।
১২ দিনের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর, গত রাতে ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ ঘোষণা দেন, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি হয়েছে। তবে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাফ জানিয়ে দেন, যতক্ষণ না ইসরায়েল হামলা বন্ধ করছে, ততক্ষণ প্রকৃত শান্তির আশা করা অর্থহীন।
এই সাম্প্রতিক উত্তেজনা মধ্যপ্রাচ্যকে এক গভীর অনিশ্চয়তার কিনারায় এনে দাঁড় করিয়েছে। সারা অঞ্চল এখন অপেক্ষায় — এই মার্কিন পদক্ষেপ কি কেবল একটি যুদ্ধের ইতি, না কি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা? তবে ইতিহাস বলে, এ ধরনের পরিস্থিতি আমেরিকার জন্য নতুন কিছু নয়।
লেবাননে যুদ্ধ (১৯৮২-৮৩)
১৯৮২ সালে ইসরায়েল লেবাননে আগ্রাসন চালায়, যখন দেশটি ছিল গৃহযুদ্ধে জর্জরিত। বিভিন্ন বিশ্লেষণ বলছে, ইসরায়েলের এই সামরিক পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য ছিল প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও)-কে রাজনৈতিক এবং সামরিকভাবে দুর্বল করা। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠনটির নেতা ইয়াসির আরাফাত সে সময় বৈরুতে অবস্থান করছিলেন।
এই যুদ্ধ ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞের সাক্ষী হয়, যেখানে নির্বিচার হত্যাকাণ্ডে হাজার হাজার সাধারণ নাগরিক এবং যোদ্ধা নিহত হন।
সেপ্টেম্বরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রও এই সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। মার্কিন যুদ্ধজাহাজ ইউএসএস জন রজার্স এবং পারমাণবিক ক্রুজার ইউএসএস ভার্জিনিয়া লেবাননের উপকূলে পাঠানো হয়। মার্কিন গানবোট থেকে সুক আল-ঘার্ব শহরসহ বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে গোলাবর্ষণ করা হয়। এই অভিযান প্রায় ১৭ মাস ধরে চলে, এবং এতে ২৬২ মার্কিন সেনা নিহত হন। যুদ্ধের শুরুতেই বোমা নিষ্ক্রিয় করতে গিয়ে প্রথম মার্কিন সেনার মৃত্যু হয়।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান এ নিয়ে মন্তব্য করে লিখেছিল, "ওয়াশিংটন যদি আরও সাহসী ও দূরদর্শী হতো, তাহলে (তৎকালীন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী) মোনাচিম বেগিনের যুদ্ধবাজির অবসান ঘটিয়ে—হাজার হাজার জীবন বাঁচানো সম্ভব হতো।"
অবশেষে ১৯৮৪ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি, মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান লেবানন থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। যুক্তরাষ্ট্রের ফরেন সার্ভিস ইনস্টিটিউটের ইতিহাস বিভাগের ভাষ্য অনুযায়ী, রিগ্যানের এই সিদ্ধান্ত আজও বিতর্কিত। যেমন এই সিদ্ধান্তের সমর্থকরা বলেন, এমন কোনো সংঘাত নিরসনে আমেরিকানদের জীবন উৎসর্গের মানে হয় না— যেখানে সংঘাতে জড়িত কোনো পক্ষই আমেরিকার লক্ষ্যগুলো অর্জনে কাজ করার ইচ্ছাও দেখায়নি। আবার বিরোধীতাকারীরা বলেন, রিগ্যান সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গীকারকে দুর্বল করেছেন এবং যুক্তরাষ্ট্রকে অবিশ্বস্ত মিত্র হিসেবে তুলে ধরেছেন।
লিবিয়ায় যুদ্ধ (১৯৮৬ এবং ২০১১)
১৯৮৬ সালের এপ্রিল মাসে যুক্তরাষ্ট্র লিবিয়ার "সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটি" এবং সামরিক স্থাপনাগুলোতে বিমান হামলা চালায়। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রিগ্যান জানান, লিবিয়ার নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির তথাকথিত "সন্ত্রাসের রাজত্ব"-এর জবাবে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
এই অভিযানে ভূমধ্যসাগর থেকে ১৪টি এ-৬ই নৌবাহিনীর আক্রমণকারী জেট এবং ইংল্যান্ডের ঘাঁটি থেকে ১৮টি এফ-১১১ বোমারু বিমান অংশ নেয়। হামলায় অন্তত ৪০ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হন, যার মধ্যে গাদ্দাফির কন্যাও ছিলেন।
এরপর ২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের নেতৃত্বে ন্যাটো বাহিনী লিবিয়ার গৃহযুদ্ধে হস্তক্ষেপ করে। ঘোষিত লক্ষ্য ছিল বেসামরিক জীবন রক্ষা, কিন্তু ফল হয় ভিন্ন। গাদ্দাফি বিরোধী বাহিনীর পাল্লা ভারি হয়ে যায় এবং শেষমেশ গাদ্দাফি ক্ষমতা ও প্রাণ হারান।
গাদ্দাফির পতনের পর লিবিয়ায় শান্তিপূর্ণ বেসামরিক সরকার গঠন ব্যর্থ হয় পশ্চিমা সমর্থিতরা, এবং ২০১৪ সালে আবারও দেশটি গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। ২০১৬ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র "আইএস নেতা ও তিউনিশীয় জঙ্গিদের" লক্ষ্য করে লিবিয়ায় বারবার বিমান হামলা চালায়।
ইরাক যুদ্ধ (১৯৯১-২০১১)
১৯৯০ সালে ইরাকের সাদ্দাম হোসেন, প্রতিবেশী কুয়েত দখল করলে—শুরু হয় প্রথম পারস্য উপসাগরীয় যুদ্ধ। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশ নেতৃত্বাধীন যুক্তরাষ্ট্র—মিত্র আরব রাজতন্ত্রগুলোর অনুরোধে সামরিক অভিযানে নামে। কুয়েত দখলমুক্ত করতে জাতিসংঘ-ও 'সব ধরনের প্রয়োজনীয় শক্তি ব্যবহারের' অনুমতি দেয়।
১৯৯১ সালের ১৭ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে বিশাল বিমান হামলা শুরু হয়, যার পরিণতিতে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারান এবং যুক্তরাষ্ট্র পারস্য উপসাগরে স্থায়ী সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করে।
ইরাকের প্রতিরোধ ভেঙে পড়ার পর, ১৯৯১ সালের ফেব্রুয়ারিতে জর্জ এইচ.ডব্লিউ. বুশ আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন, যার মাধ্যমে প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধের অবসান ঘটে। পুরো যুদ্ধের সময়, আনুমানিক ৮,০০০ থেকে ১০,০০০ ইরাকি সেনা নিহত হয় বলে ধারণা করা হয়। তবে প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক হবে, এছাড়া বেসামরিক প্রাণহানিও ঘটে অসংখ্য।
তবে ৯/১১ সন্ত্রাসী হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র আবারও ইরাকে ওপর সামরিকভাবে মনোযোগ জোরদার করে। ২০০২ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ইরাকে অস্ত্র পরিদর্শক দল ফেরানোর দাবি জানান। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি ছিল, তাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে যে, ইরাকের কাছে গণবিধ্বংসী অস্ত্র রয়েছে, বা তারা এমন অস্ত্র তৈরির প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
এর ঠিক এক বছর পর, বুশ ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনকে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়াতে এবং ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ইরাক ছাড়ার আল্টিমেটাম দেন। সাদ্দাম হোসেন সেই আহ্বানে সাড়া না দেওয়ায় শুরু হয়—দ্বিতীয় পারস্য উপসাগরীয় যুদ্ধ, যা এখন 'ইরাক যুদ্ধ' নামেই অধিক পরিচিত।
২০০৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর, মার্কিন বাহিনী সাদ্দাম হোসেনকে আটক করে। পরে, ২০০৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের দায়ে তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এই সময়ে মার্কিন বাহিনীর বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ, সাম্প্রদায়িক সংঘাতে নারী, শিশুসহ লাখ লাখ ইরাকি প্রাণ হারায়। ধবংসস্তূপে পরিণত হয় একের পর এক জনপদ।
যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে ইরাক থেকে সেনা প্রত্যাহার করে ২০১১ সালের ডিসেম্বর মাসে।
আফগান যুদ্ধ (২০০১-২০২১)
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসী হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র যখন তার বিশ্বব্যাপী 'সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ'-এর ঘোষণা দেয়, তখন আফগানিস্তান হয়ে ওঠে তাদের প্রধান লক্ষ্য। ওই বছরের ৭ অক্টোবর, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোট আফগানিস্তানে ব্যাপক বিমান হামলা শুরু করে, যার নেতৃত্বে ছিল মার্কিন এবং ব্রিটিশ বাহিনী। দুই দশক ধরে চলা এই সংঘাত আমেরিকার ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ হিসেবে পরিচিত।
'অপারেশন এনডিউরিং ফ্রিডম' নামে পরিচিত এই সামরিক অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল ওসামা বিন লাদেনের আল-কায়েদা নেটওয়ার্ককে ধ্বংস করা। প্রথমেই তালেবান এবং আল-কায়েদার অবস্থান, বিশেষ করে কাবুল, কান্দাহার, জালালাবাদ, কুন্দুজ এবং মাজার-ই-শরিফে ব্যাপক বিমান হামলা চালানো হয়।
এরপর স্থল অভিযান শুরু হলে ১২ নভেম্বর তালেবান বাহিনী কাবুল ত্যাগ করে। পরবর্তী এক মাসের মধ্যে তাদের সর্বশেষ শক্ত ঘাঁটি কান্দাহারও পতনের মুখে পড়ে। ২০০২ সালের মধ্যে হামিদ কারজাইয়ের নেতৃত্বে কাবুলে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়।
তবে এই যুদ্ধ চলার মধ্যেই, যুক্তরাষ্ট্রের মনোযোগ আফগানিস্তান থেকে সরে ইরাকের দিকে যাওয়ার সুযোগে—তালেবান আবার সংগঠিত হওয়ার সুযোগ পায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ২০০৮ সালে প্রেসিডেন্ট বুশ অতিরিক্ত সৈন্য পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন এবং ২০০৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে সেখানে মার্কিন সেনাসংখ্যা দাঁড়ায় ৪৮,৫০০।
পরবর্তীতে বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেবার পর এই সংখ্যা বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ১ লাখে করেন। ২০১১ সালে ওসামা বিন লাদেন হত্যার পর ওবামা সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। যদিও এই সিদ্ধান্তে বারবার মতবিরোধ দেখা যায়। অবশেষে ২০২১ সালে তালেবান এবং ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যে একটি চুক্তি হয়, যেখানে বলা হয়, তালেবান যুক্তরাষ্ট্রের ওপর হামলা এবং আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার শর্তে যুক্তরাষ্ট্র ২০২১ সালের মধ্যেই সম্পূর্ণ সেনা প্রত্যাহার করবে।
সে বছরের আগস্টে তালেবান কাবুলে প্রবেশ করলে আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের শেষ সেনাও প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
সিরিয়ার যুদ্ধ (২০১১)
২০১১ সালে সিরিয়ায় শুরু হয় বিক্ষোভ, যা ধীরে ধীরে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের শাসনবিরোধী পূর্ণমাত্রার গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়। পরিস্থিতি খারাপ হলে যুক্তরাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করে। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং পশ্চিমা দেশগুলো সরাসরি বাশার আল আসাদকে ক্ষমতা ত্যাগের আহ্বান জানান।
পরবর্তীতে সিরিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় এবং যুক্তরাষ্ট্র তাদের রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করে নেয়।
২০১৩ সালে ওয়াশিংটন জানায়, আসাদ সরকার দামেস্কের কাছে রাসায়নিক হামলা চালিয়ে ১,৪০০'র বেশি মানুষকে হত্যা করেছে। ওই হামলার পর ওবামা সিরিয়ায় সামরিক হামলার পরিকল্পনা করেন, তবে শেষ মুহূর্তে তিনি সরে আসেন এবং মস্কোর সঙ্গে একটি চুক্তি করেন, যার লক্ষ্য ছিল সিরিয়ার রাসায়নিক অস্ত্র ভাণ্ডার ধ্বংস করা।
এর ঠিক এক বছর পর, ২০১৪ সালে, যুক্তরাষ্ট্র এবং আরব মিত্ররা সিরিয়ায় আইএসআইএল (ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড দ্য লেভান্ট) এর বিরুদ্ধে বিমান হামলা শুরু করে, যা ইতোমধ্যে ইরাকেও চলছিল। ২০১৭ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলে যুক্তরাষ্ট্র শায়রাত বিমান ঘাঁটিতে একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। ওই ঘাঁটি থেকেই রাসায়নিক হামলা চালানো হয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে, যেখানে ৮৮ জন নিহত হয়।
২০১৮ সালে সিরিয়ার বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ডৌমা শহরে রাসায়নিক হামলায় ৪০ জন নিহত হলে যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে সিরিয়ায় হামলা চালায়।
এরপর ওই বছরেই ট্রাম্প ঘোষণা দেন যে, সিরিয়ায় থাকা প্রায় ২,০০০ মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করা হবে, কারণ আইএসআইএল "পরাজিত" হয়েছে। কিন্তু এর এক বছর পরই সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে একটি রেস্তোরাঁয় আইএসআইএলের আত্মঘাতী হামলায় চার মার্কিন সেনাসহ ১৫ জন নিহত হয়। এটিকে সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ওপর সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
একই বছরের শেষ দিকে, যুক্তরাষ্ট্র জানায়, তারা সিরিয়া থেকে সেনা প্রত্যাহার করবে, যাতে তুরস্ক তাদের বহু প্রতীক্ষিত সামরিক অভিযান চালাতে পারে। এ সিদ্ধান্তে ওয়াশিংটনে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়।
ইয়েমেন যুদ্ধ
ইয়েমেন দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিমা বিশ্বের নজরবন্দি। তবে ওবামা এবং ট্রাম্প প্রশাসনের সময় ড্রোন হামলার মাত্রা অনেক বেড়ে যায়, বলে জানিয়েছে 'মিডল ইস্ট আই'।
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ড্রোন কর্মসূচির আওতায় এসব হামলা চালানো হতো এবং এগুলো সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের অংশ বলে হামলার পক্ষে যুক্তি দেওয়া হতো, বিশেষ করে আল-কায়েদার শীর্ষ নেতাদের টার্গেট করার জন্য। একই সঙ্গে সৌদি আরবের হুথি বিদ্রোহীদের ওপর বিমান হামলায় যুক্তরাষ্ট্রও সহায়তা করে।
২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে হুথি বিদ্রোহীদের লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে হামলার জবাবে যুক্তরাষ্ট্র 'অপারেশন প্রসপারিটি গার্ডিয়ান' শুরু করে। উল্লেখ্য, এসব হামলা শুরু হয়েছিল গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিক্রিয়ায়।
২০২৪ সালে বাইডেন প্রশাসন হুথিদের আবারও 'বিশ্বব্যাপী বিশেষভাবে তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী সংগঠন (এসডিজিটি)' হিসেবে ঘোষণা করে।