ইসলাম ও ধর্ম

হজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হলো আরাফাতের ময়দানে অবস্থান। প্রতি বছর যিলহজ মাসের ৯ তারিখে লাখো মুসলমান সেখানে জড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন, হাত তুলে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তবে ধর্মপ্রাণ মানুষের মনে একটি প্রশ্ন বহুদিন ধরেই ঘুরপাক খাচ্ছে: এই আরাফাতের ময়দানই কি হাশরের ময়দান হবে?

আরাফাত মক্কা শরীফের ২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত একটি উপত্যকা। হজ পালনকারীদের জন্য এ স্থানটির বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। হাদীসে এসেছে, “হজ হলো আরাফা।” অর্থাৎ, আরাফাতের ময়দানে অবস্থান ছাড়া হজ পূর্ণ হয় না।

কোরআন ও হাদীস অনুযায়ী, হাশরের ময়দান হবে এক বিস্তীর্ণ সমতল স্থানে, যেখানে সমস্ত মানবজাতিকে কিয়ামতের দিন একত্র করা হবে।

হাদীস থেকে জানা যায়, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন— “মানুষকে এমন এক ময়দানে উঠানো হবে, যা হবে সমতল, সেখানে কারও জন্য কোনো ছায়া থাকবে না।” (সহিহ মুসলিম)

তবে আরাফাতের ময়দান যে হাশরের স্থান হবে—এমন কোনো সহিহ হাদীস পাওয়া যায় না। এ বিষয়ে আলেমদের মধ্যে রয়েছে ভিন্নমত।

বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিল ও সামাজিক মাধ্যমে অনেক বক্তা দাবি করে থাকেন, “আরাফাতের ময়দানই হাশরের ময়দান হবে”, যা সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে ইসলামী চিন্তাবিদরা বিষয়টি নিয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।

ঢাকা ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের মুহাদ্দিস শাইখ হাফিজুর রহমান বলেন, “এটি একটি দুর্বল মতামত। কোরআন ও সহিহ হাদীসে এমন কিছু নেই যা আরাফাতকে হাশরের স্থান বলে নিশ্চিত করে।”

তিনি আরও বলেন, “মানুষকে সচেতন থাকতে হবে, যেন ভ্রান্ত তথ্য ও ধর্মীয় আবেগ একসঙ্গে গুলিয়ে না ফেলা হয়।”

সার্বিকভাবে বলা যায়, আরাফাতের ময়দান হজের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও পবিত্র স্থান হলেও, এটি হাশরের ময়দান হবে—এই দাবি ধর্মীয়ভাবে নিশ্চিত নয়। এটি একটি জনপ্রিয় কিন্তু দুর্বল মত, যা মুসলমানদের মাঝে প্রচলিত আছে কিন্তু প্রামাণ্য সূত্রে সমর্থিত নয়।