মধ্যপ্রাচ্যে বসবাসরত এক প্রবাসী বাংলাদেশির সান্ডার নিয়ে একটি ভিডিও ঘিরে তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
ভিডিওটিতে দেখা যায়, তিনি মরু অঞ্চলের এক ধরনের সরীসৃপ প্রাণী—‘সান্ডা’ ধরছেন রান্না করার জন্য এবং সেই অভিজ্ঞতা শেয়ার করছেন সবার সঙ্গে। তার কথার ধরন ও উপস্থাপনার ভঙ্গিমা ভিডিওটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে।
সান্ডা মরুভূমির টিকটিকি জাতীয় একটি প্রাণী। আরবিতে তা ‘দব্ব’ (ضبّ) নামে পরিচিত। সাধারণত আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের মরু অঞ্চলে এর দেখা মেলে। এর শরীর খুবই শক্ত এবং লেজ মোটা ও কাঁটাযুক্ত।
এই বিষয়ে ইরশাদ হয়েছে,
قوله تعالى: ﴿وَيُحَرِّمُ عَلَيْهِمُ الْخَبَائِثَ﴾ [الأعراف: 157]
‘তিনি তাদের জন্য অপবিত্র বস্তুগুলো হারাম করেছেন।’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ১৫৭)
আর যেসব হাদিসে এই প্রাণী খাওয়ার কথা বর্ণিত হয়েছে তা ইসলামের প্রাথমিক যুগের ঘটনা হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়।
ইবনে আবিদিন (রহ.) রদ্দুল মুখতার গ্রন্থে লিখেছেন, রাসুল (সা.) সব ধরনের হিংস্র পশু ও নখযুক্ত পাখি খেতে নিষেধ করেছেন।
মূলত এখানে নিষিদ্ধ হওয়ার কারণ হলো, এসব প্রাণীর স্বভাবে শরিয়তের দৃষ্টিতে নিন্দনীয় বিষয় রয়েছে। তাই এসব প্রাণীর মাংস থেকে এদের স্বভাব তৈরি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। ফলে আদম সন্তানের সম্মানার্থে তা খাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যেভাবে আদম সন্তানের সম্মানার্থে হালাল প্রাণীকে হালাল হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। (রদ্দুল মুখতার)
যেমন হারাম হওয়ার ক্ষেত্রে অন্যতম একটি কারণ কষ্ট দেওয়া।
তা নখর বা হিংস্রতা বা অপবিত্র স্বভাবের কারণেও হতে পারে। অনেক সময় সৃষ্টিগতভাবে প্রাণি খাওয়া নিষিদ্ধ হতে পারে যেমন পোকামাকড়। (আল-কিফায়া)
আদ-দুর গ্রন্থে বলা হয়েছে, খবিস তথা অপবিত্র প্রাণি বলতে এমন প্রাণি উদ্দেশ্য, সাধারণত যাকে সুস্থ রুচিবোধ খবিস বা অপবিত্র মনে করে। আর আলেমরা খবিস বা অপবিত্র বস্তু হারাম হওয়ার ব্যাপারে ঐকমত্য। যেমন পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে,
قوله تعالى: ﴿وَيُحِلُّ لَهُمُ الطَّيِّبَاتِ﴾ [الأعراف: 157]
‘তিনি তাদের জন্য অপবিত্র বস্তুগুলো হারাম করেছেন।’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ১৫৭)
পক্ষান্তরে যাকে আরবরা পবিত্র মনে করবে তা হালাল বলে গণ্য হবে। যেমন পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে,
قوله تعالى: ﴿وَيُحَرِّمُ عَلَيْهِمُ الْخَبَائِثَ﴾ [الأعراف: 157]
‘তিনি তাদের জন্য পবিত্র বস্তুগুলোকে হালাল বা বৈধ করেছেন।’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ১৫৭)
আর এক্ষেত্রে আরবদের মধ্যে হিজাজবাসীর কথা গ্রহণযোগ্য। কারণ তাদের ভাষায় কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে এবং তাদের সম্বোধন করা হয়েছে। এক্ষেত্রে বেদুঈনদের কথা অগ্রাহ্য হবে। কারণ তারা ক্ষুধার সময় যা পায় তাই খেয়ে ফেলে।
মাজমাউল আনহুর গ্রন্থে বলা হয়েছে, ‘দব’ তথা সান্ডা এমন প্রাণির অন্তর্ভূক্ত যা খাওয়া হারাম। তা হারাম হওয়ার কারণ হলো, তা হিংস্র প্রাণির অন্তর্ভূক্ত।
পক্ষান্তরে মালিকি, শাফেয়ি ও হাম্বলি মাজহাবের ফকিহদের মত অনুসারে, সান্ডা খাওয়া যাবে। তাঁরা এ প্রাণীকে খাওয়ার উপযোগী প্রাণী হিসেবে গণ্য করেন। কারণ হাদিসে বর্ণিত ঘটনায় তা খাওয়ার ব্যাপারে বৈধতার প্রমাণ পাওয়া যায়। অবশ্য রাসুল (সা.) স্বয়ং নিজে তা না খেলেও তিনি তার সামনে উপস্থিত সাহাবিদের তা খেতে বারণ করেননি।
وأما الأئمة الثلاثة فقد ذهبوا إلى حِل أكله مستدلين بأحاديث رُويت عن النبي صلى الله عليه وآله وسلم؛ لحديث ابن عمر رضي الله عنهما -وأصله في مسلم- قال: إن النبي صلى الله عليه وآله وسلم سُئل عن الضب فقال: «لَمْ يَكُنْ مِنْ طَعَامِ قَوْمِي، فَأَجِدُ نَفْسِي تَعَافُهُ، فَلَا أُحِلُّهُ وَلَا أُحَرِّمُهُ»،
উল্লিখিত তিনটি মাজহাবের মতের পক্ষে দলিল হলো, ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার রাসুল (সা.)-কে দব বা সান্ডা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। তখন তিনি বলেছিলেন, ‘তা আমার সম্প্রদায়ের খাবারের অন্তর্ভূক্ত নয়। আমি নিজে তা অপছন্দ করি। আমি তা হালাল বলব না এবং হারামও বলব না।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৯৪৫)
অন্য বর্ণনায় এসেছে, ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেছেন, আমি ও খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রা.) রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে উম্মুল মুমিনিন মায়মুনা (রা.)-এর বাড়িতে উপস্থিত ছিলাম। তখন ভুনা সান্ডা আনা হয়। রাসুল (সা.) তা খেতে যাচ্ছিলেন। তখন মায়মুনা (রা.)-এর বাড়ির একজন নারী বললেন, এটি ‘দব’। এ কথা শুনে রাসুল (সা.) তার হাত সরিয়ে নিলেন।
وقد أجاب عنه صاحب "العناية" وغيره من الحنفية بأن الأصل أن الحاظر والمبيح إذا تعارَضَا يرجح الحاظر، على أن المبيح في هذا الأمر مُؤَوَّلٌ بما قبل التحريم.
এই দলিলের জবাবে আল-ইনায়া গ্রন্থের লেখক ও অন্য হানাফি আলেমরা বলেছেন, যখন হালাল ও হারাম পরষ্পর সাংঘর্ষিক হবে তখন হারাম হওয়ার বিধান প্রাধান্য পাবে। এবং বৈধতার বিষয়কে হারাম হওয়ার আগের ঘটনা হিসেবে ব্যাখ্যা করা হবে। (আল-ইনায়া)