তালাক শব্দটি সাধারণত পুরুষদের সঙ্গেই জড়িত। তবে মুসলিম নারীরা কি নিজেদের ইচ্ছায় স্বামীকে তালাক দিতে পারেন? এই প্রশ্নটি বহুদিন ধরেই আলোচনায়। অনেকেই ধারণা করেন, মুসলিম সমাজে কেবল পুরুষরাই তালাক দেওয়ার অধিকার রাখেন। কিন্তু বাস্তবতা কিছুটা ভিন্ন। ইসলাম নারীকে তালাকের পথও উন্মুক্ত রেখেছে— যদিও তা কিছু শর্তসাপেক্ষ।
ইসলামে নারীর তালাকের অধিকার:
ইসলামী শরিয়াহ অনুযায়ী, মুসলিম নারী সরাসরি তালাক উচ্চারণ করে বিয়েবিচ্ছেদ করতে পারেন না, তবে তিনি কিছু আইনি ও ধর্মীয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিবাহবিচ্ছেদ চাইতে পারেন।
এটি 'খোলা' নামে পরিচিত। খোলার মাধ্যমে একজন নারী আদালত বা সালিশি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিবাহবিচ্ছেদ চাইতে পারেন, তবে এ ক্ষেত্রে তাকে কিছু দেনমোহর বা যৌতুক ফেরত দিতে হতে পারে।
খোলা কীভাবে কাজ করে:
খোলা তখনই কার্যকর হয়, যখন স্ত্রী মনে করেন স্বামীর সঙ্গে জীবনযাপন করা সম্ভব নয়। তিনি তখন স্বামীর অনুমতি নিয়ে (বা আদালতের মাধ্যমে অনুমোদন পেলে) বিবাহবিচ্ছেদ চাইতে পারেন। যদি স্বামী রাজি না হন, তাহলে ইসলামি আইন অনুসারে কোর্ট বা স্থানীয় শরিয়াহ বোর্ড বিষয়টি পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
তালাকের ধরন:
ইসলামে বিবাহবিচ্ছেদের তিনটি প্রধান পথ রয়েছে:
তালাক: স্বামীর দ্বারা দেওয়া।
খোলা: স্ত্রীর আবেদন ও স্বামীর সম্মতিতে বিবাহবিচ্ছেদ।
ফাসখ: কোনো পক্ষের অনুরোধে আদালতের মাধ্যমে বিবাহবিচ্ছেদ, যেখানে স্বামী রাজি না হলেও বিচ্ছেদ ঘটতে পারে।
আধুনিক আইনি দৃষ্টিভঙ্গি:
বাংলাদেশ, ভারতসহ উপমহাদেশের বেশিরভাগ মুসলিম দেশে মুসলিম পারিবারিক আইন রয়েছে, যেখানে খোলা বা ফাসখের মাধ্যমে নারীও বিচ্ছেদের অধিকার পান। এসব দেশের আদালত ‘অমানবিক আচরণ’, ‘অসহনীয় বৈবাহিক সম্পর্ক’, ‘আর্থিক উপেক্ষা’ প্রভৃতি কারণে নারীর পক্ষে বিবাহবিচ্ছেদের রায় দিতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মত:
ইসলামিক স্কলাররা বলছেন, ইসলাম নারীকে অধিকার দিয়েছে কিন্তু সেই অধিকার চর্চার ক্ষেত্রে একটি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা বাধ্যতামূলক। খোলা বা আদালতের মাধ্যমে বিবাহবিচ্ছেদ সেই পথগুলোর অন্যতম।