শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

'৫২-র একুশ' একটি মাতৃভাষার জন্ম

যাযাদি ডেস্ক
  ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৩:১৩
'৫২-র একুশ' একটি মাতৃভাষার জন্ম

খুরশীদ আলম সাগর তার ‘পলাশী প্রান্তর থেকে বাংলাদেশ ১৭৫৭-১৯৭১ ও আমাদের স্বাধীনতা’ শীর্ষক গ্রন্থে লিখেছেন, "একটি জাতির চিরন্তন সম্পদ হলো তার ভাষা, ভাব-প্রকাশের সর্বোত্তম বাহন"। এই ভাষার কথা বললে সর্বপ্রথম মনে জাগ্রত হয় ফেব্রুয়ারি মাসের কথা। আর "ফেব্রুয়ারি" -এ মাসটি এলেই ‘অমর একুশে’, ‘ভাষা-শহীদ’, ‘ভাষা-সন্তান’, ‘ভাষা-পুত্র’, ‘রক্তাক্ত অ আ ক খ’ ইত্যাকার শব্দমালা প্রতিটি বাংলাদেশীর দেহ ও মনে দ্যোতনার সৃষ্টি করে। আবেগে উচ্ছ্বাসিত হয় প্রাণ। কিন্তু আমাদের বর্তমান প্রজন্ম কি আদৌও জানে, বাংলা ভাষা মাতৃভাষা হওয়ার ইতিহাস! তারা কি জানে, ভাষা আন্দোলন শুধু বায়ান্নতেই সীমাবদ্ধ নয়! এক সুদীর্ঘ আন্দোলন ও সংগ্রামের পরেই এ জাতি পেয়েছে তাদের নিজস্ব একটি ভাষা।

আলাদা দুটি ভুখন্ড, আলাদা দুটি জাতি এবং আলাদা দুটি ভাষার মিলিত জাতিসত্তাকে একত্রিত করার মাধ্যমে ১৯৪৭ সালে জন্ম হয়েছিল পাকিস্তান নামক একটি মুসলিম রাষ্ট্রের। পাকিস্তান নামক শিশু রাষ্ট্রটির জন্ম নেওয়ার পুর্বেই এর রাষ্ট্র ভাষা কী হবে এ নিয়ে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানে তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। ‘পূর্ব বাংলা’ পূর্ব পাকিস্তান নামে এবং সিন্ধু, পাঞ্জাব, বেলুচিস্তান, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ নিয়ে পরিচিতি লাভ করে পশ্চিম পাকিস্তান। ‘সিন্ধি’, ‘বেলুচ’, ‘পাঞ্জাবী’, ‘পোস্তু’ ইত্যাদি ভাষাভাষী মানুষ ছিল পশ্চিম পাকিস্তানে।

অন্যদিকে ‘বাংলা’ ও ‘চাংমা' ভাষাভাষী মানুষ বাস করে পূর্ব পাকিস্তানে। চাংমা বা অন্যান্য ছোট ছোট জাতিসত্তার ভাষাভাষী লোক অত্যন্ত সীমিত। অন্যদিকে অল-পাকিস্তানে অর্ধেকের বেশি লোক বাংলা ভাষায় কথা বলে। পৃথিবীর নেতৃস্থানীয় ভাষাগুলোর মধ্যে বাংলা ভাষা হচ্ছে অন্যতম। তাই সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন ওঠে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্র ভাষা করার জন্য।

সুতরাং পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা কী হবে এই নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিলে চৌধুরী খালেকুজ্জামান ও আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য জিয়াউদ্দিন আহমদ উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার জন্য প্রস্তাব করেন। আর এতেই নতুন করে রাষ্ট্রভাষা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। কেননা উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা মেনে নেয়া মানে পাকিস্তানের দাসত্ব করা। তাদের এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান ভাষাবিজ্ঞানী ড: মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, ড: এনামুল হক সহ আরো বেশ কিছু বুদ্ধিজীবী। লেখালেখি হয় বিভিন্ন সংবাদপত্রগুলোতে।

তৎকালীন গুরুত্বপূর্ণ একটি পত্রিকা "মিল্লাত" তাদের একটি সম্পাদকীয়তে লিখেছিল, "মাতৃভাষার পরিবর্তে অন্য কোন ভাষাকে রাষ্ট্রভাষারূপে বরণ করার চাইতে বড় দাসত্ব আর কিছু থাকিতে পারে না।" এছাড়াও বাঙালিরা সকল প্রকার সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে। সেই সময়ে দৈনিক "আজাদি" পত্রিকায় লেখক ও সাংবাদিক আবদুল হক লিখেছিলেন, "উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা করার সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যেকটি উর্দু-শিক্ষিতই চাকুরীর যোগ্যতা লাভ করবেন, এবং প্রত্যেকটি বাংলা ভাষীই চাকুরীর অনুপযুক্ত হয়ে পড়বেন"। আর বাংলার মানুষের জন্য এটি মেনে নেয়া কখনোই সম্ভব ছিলোনা।

দেশভাগের কয়েক মাসের মধ্যই পাকিস্তানের প্রতিটি সরকারি ও বেসরকারি কাজে বাংলাকে বাদ দিয়ে উর্দু ও ইংরেজিকে প্রধান দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে ব্যবহার শুরু হয়। যা ছিলো খুবই ন্যাক্করজনক ও ঘৃণিত কাজ। পাকিস্তানের পাবলিক কমিশনের এই ঘোষণার পরপরই ঢাকা সহ কয়েকটি জায়গায় বুদ্ধিজীবীদের সমাবেশ হয়। পরবর্তীতে এটি সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ভাষা সৈনিক, ভাষা-আন্দোলনের ইতিহাস গবেষক এম আর মাহবুব তার ‘বাঙালা কী করে রাষ্ট্রভাষা হলো’ গ্রন্থে বর্ণনা করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল কাসেম বহু চেষ্টা করেও তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রশাসকমন্ডলীকে এ ব্যাপারে কোনোরূপ কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করাতে সক্ষম হননি। ফলে সর্বস্তরে বাংলা চালু ও শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে বাংলা ব্যবহার একটি বাকসর্বস্ব বক্তব্যে পরিণত হয়।

১৯৪৭ সালের ১লা সেপ্টেম্বর তার নেতৃত্বে 'তমুদ্দিন মজলিস' নামক সংগঠন গড়ে তোলা হয়।শুরু থেকেই এই প্রতিষ্ঠান তদানীন্তন পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা নির্ধারণের ক্ষেত্রে সক্রিয়ভাবে তাদের মতামত দেওয়া শুরু করে। ১৯৪৭ সালের ১৬ই সেপ্টেম্বর এই সংগঠন প্রচার করে, 'পাকিস্তানের রাষ্ট্র-ভাষা বাংলা–না উর্দু?' নামক একটি পুস্তিকা। পরবর্তীতে বিভিন্ন সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সভা আয়োজনের মাধ্যমে, এই সংগঠন রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনকে এগিয়ে নেওয়ার প্রাথমিক প্রচেষ্টা গ্রহণ করে। এই সংঘটনের উদ্যেগে ১৯৪৭ সালের শেষের দিকে গঠন করা হয় 'রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ'।

পরবর্তীতে ১৯৪৮ সালের ২ মার্চ কামরুদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে গঠন করা হয় ‘সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’। যা রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে অন্যতম প্রধান ভুমিকা পালন করেছিলো। ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ বাংলার বুদ্ধিজীবী-ছাত্র-শিক্ষক-জনতা এক প্রতিবাদ দিবস পালন করে। এদিন ছাত্র-শিক্ষক-জনতা সভা-সমাবেশ-শোভাযাত্রা, সাধারণ ধর্মঘট, ক্লাস বর্জন ও বিক্ষোভ মিছিল করে। পাকিস্তান সরকার তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং গ্রেপ্তার করে শেখ মুজিবুর রহমান, শামছুল হক, শওকত আলী, কাজী গোলাম মাহবুব, রওশন আলম, শাহ মো. নাসিরুদ্দিন, নুরুল ইসলাম, কামারুদ্দিন প্রমুখকে।

পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভাষা বাংলা হওয়া সত্ত্বেও তৎকালীন প্রথম গভর্নর জেনারেল মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ ১৯৪৮ সালের ২১ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে এবং ২৪ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে ঘোষণা দেন যে “উর্দু এবং একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা”। উভয় স্থানেই সমবেত ছাত্র-জনতা এর প্রতিবাদ জানায়। তার মৃত্যুর পর ১৯৫২ সালের ২৬শে জানুয়ারীর পুর্ব পর্যন্ত থেমে থেমে আন্দোলন চলতে থাকে।

আন্দোলন কঠিন রূপ ধারন করে যখন ১৯৫২ সালের ২৬ জানুয়ারী পাকিস্তানের এসেম্বলিতে উর্দুকেই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা করা হয়। আন্দোলনে স্ফুলিঙ্গ বাড়িয়ে দেন খাজা নাজিমুদ্দিন ঢাকায় সফরে এসে। তিনি স্বদেশী হয়েও ২৭ জানুয়ারী নয়া পল্টনের একটি সমাবেশে ঠিক মৃত মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ এর মত বুলি আওড়ান। তিনি বলেন, উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্র ভাষা। উপস্থিত সাধারণ জনগন এবং ছাত্র সাথে সাথে এর প্রতিবাদ করতে থাকে। পল্টন এলাকা মুখরিত হয়ে উঠে 'রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই, রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই'।

খাজা নাজিমুদ্দিনের বক্তব্যের প্রতিবাদে 'ঢাকা রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ' ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যমপাসে ৩০ জানুয়ারী একটি সভা হয়। ঐ সভায় ৪ ফেব্রুয়ারী ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল, সভা ও ছাত্রধর্মঘট করার ঘোষণা দেওয়া হয়। ৩১ জানুয়ারী মাওলানা হামিদ খান ভাসানির নেতৃত্বে একটি সভা আয়োজন হয়। যেখানে তমুদ্দিন মজলিস, যুব সংঘ, মুসলিম লীগ ও পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগকে নিয়ে ৪০ সদস্যের একটি 'সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ' গঠন করে। এই পরিষদ ৪ ফেব্রুয়ারীর কার্যক্রমকে সমর্থন করে এবং ২১শে ফেব্রুয়ারিতে সারা দেশে হরতাল, বিক্ষোভ ও বিভিন্ন সভা-সমাবেশের আয়োজন করার ঘোষণা দেয়।

২১শে ফেব্রুয়ারীর কর্মসূচির অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য ছিলো বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার সিদ্বান্ত গ্রহন করানোর জন্য প্রাদেশিক সরকারকে চাপ প্রয়োগ করা। ১২ ফেব্রুয়ারী নুরুল আমিন সরকার রাষ্ট্রভাষা বংলাকে সমর্থন দেওয়া ''দৈনিক পাকিস্তান অবজারভার'' পত্রিকাকে নিষিদ্ধ করা হয় এবং ২০ ফেব্রুয়ারী রাত থেকে পরবর্তী এক মাসের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। এইদিকে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করা না করা নিয়ে ২০ ফেব্রুয়ারী একটি ভোটাভুটি হয়। যেখানে পরের দিন ২১ শে ফেব্রুয়ারী ১৪৪ ধারা ভঙ্গ না করার প্রস্তাবটি গৃহীত হয়। বলা হয় ২১শে ফেব্রুয়ারী সকাল থেকে ছাত্ররা ৮-১০ জন করে ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলার দিকে যাবে।

একটি রক্তিম সকাল। ঢাকা, ২১ শে ফেব্রুয়ারী, ১৯৫২ সাল। চারদিকে নিরব ও গুমোট ভাব বিরাজমান। কারন নুরুল আমিন সরকারের ১৪৪ ধারা চলমান। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১০ জনের কয়েকটি দল আমতলায় এসে একত্রিত হয়। নুরুল আমিন সরকারের নির্দেশে পুলিশ সাধারন ছাত্র-জনতাদের উপর গুলিবর্ষন করে। গুলিতে নিহত হন বাদামতলী কমার্শিয়াল প্রেসের মালিকের ছেলে রফিক, সালাম, এম. এ. ক্লাসের ছাত্র বরকত ও আব্দুল জব্বারসহ আরও অনেকে। এছাড়া ১৭ জন ছাত্র-যুবক আহত হয়। সেই দিনের ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে তৎকালীন ঢাকা হাসপাতালের জরুরী বিভাগের কর্মরত ছাত্র মুহাম্মদ মাহফুজ হোসেন পাঁচ বছর আগে বিবিসির একটি সাক্ষাতকারে বলেছিলেন, "একুশে ফেব্রুয়ারি দুপুরে গুলিবিদ্ধ তিনজনকে হাসপাতালে গ্রহণ করি আমি। কপালে গুলিবিদ্ধ রফিককে দেখেই মৃত ঘোষণা করা হয়, আর উরুতে গুলিবিদ্ধ বরকত মারা যান রাতে, আমার চোখের সামনেই।"

তিনি আরো বলেন, "আমরা তখন বাইরে থেকে বহু আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলাম। আমরা শুনেছিলাম বহু মানুষ গুলিতে আহত হয়েছে। মুহূর্তেই ইমারজেন্সি ওয়ার্ড পূর্ণ হয়ে যায়। আহতদের অনেকেই মুমূর্ষু, তাদের সঙ্গে আসা মানুষজন আর চিকিৎসকে ঠাসাঠাসি হয়ে যায় জরুরী বিভাগ।"

শহীদদের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়ে ওঠে। শোকাবহ এ ঘটনার অভিঘাতে সমগ্র পূর্ব বাংলায় তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ২১ ফেব্রুয়ারির ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে সারাদেশে বিদ্রোহের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে।একুশে ফেব্রুয়ারির পরের দিন অর্থাৎ ২২ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত হয় একুশের প্রথম ক্রোড়পত্র এবং প্রথম অঙ্কিত চিত্র। ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছিল তৎকালীন ‘দিলরুবা’ পত্রিকার প্রকাশক এবং এতে স্কেচ আঁকেন শিল্পী আমিনুল ইসলাম আর লেখেন ফয়েজ আহমদ এবং আবদুল্লাহ আল মুতী শরফুদ্দীন। সেই গুলোকে বিকেল পাঁচটার মধ্যে কাগজে ছাপা হয়ে যায় এবং পত্রিকার কর্মীরাই রাজপথে কাগজগুলো বিলি করেছিলেন। কাগজগুলো মানুষের হাতে হাতে পৌছায়। মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। মিছিল, মিটিং, ও অবরোধ গড়ে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে। পুলিশ তাদের প্রতিরোধ ও ছত্রভঙ্গ করার জন্য কাঁদানেগ্যাস ও গুলিবর্ষণ করে।

২২ ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিতে শহীদ হন শফিউর রহমান শফিক, রিক্সাচালক আউয়াল এবং অলিউল্লাহ নামক এক কিশোর। ২৩ ফেব্রুয়ারিতেও পুলিশ সাধারন ছাত্রদের উপর নিপীড়ন চালায়। উক্ত পুলিশী অত্যাচারের প্রতিবাদে সংসদীয় দল মুসলিম লীগ ঐদিনই পদত্যাগ করে। ভাষা শহীদদের সম্মানে ঐদিন রাতেই ছাত্ররা মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে 'শহীদ মিনার' গড়ে তোলে। পরের দিন, ২৪ ফেব্রুয়ারী শহীদ শফিউর রহমানের পিতা শহীদ মিনার উদ্ভোদন করে যেটি ২৬ ফেব্রুয়ারী আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্ভোদন করেন দৈনিক আজাদ পত্রিকার সম্পাদক জনাব আবুল কালাম শামসুদ্দীন।

আন্দোলন থেমে থাকেনি। ছাত্র, শ্রমিক, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক ও সাধারণ জনতার অবিরাম আন্দোলনে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার মাথা নোয়াতে বাধ্য হয়। ১৯৫৪ সালের ৭ই মে পাকিস্তান গণপরিষদে বাংলা অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গৃহীত হয়। ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের প্রথম সংবিধান প্রণীত হলে ২১৪ নং অনুচ্ছেদে বাংলা ও উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উল্লিখিত হয়।আর এর মধ্য দিয়ে জন্ম লাভ করে আমাদের মাতৃভাষা- বাংলা। পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো এর সাধারণ পরিষদের ৩০তম পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে বাংলাদেশসহ ২৭টি দেশের সমর্থন নিয়ে সর্বসম্মতভাবে একুশে ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। বর্তমানে বিশ্বের ১৮৮টি দেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় এ দিনটিকে প্রতি বছর পালন করে আসছে।

আজ আমরা গর্বিত যে বাংলা ভাষা সারা বিশ্বের বুকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। ফেব্রুয়ারি আমাদের অহংকার। আমাদের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের ধারক। সুতরাং কবি ফররুখ আহমদের সাথে একমত পোষন করে বলাই যায়,

"ও আমার মাতৃভাষা বাংলাভাষা

খোদার সেরা দান

বিশ্বভাষার সবই তোমার

রুপ যে অনির্বাণ "

লেখক ও শিক্ষার্থী

আনিসুর রহমান

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

এসএম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে