সমাজসেবার মাধ্যমে মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনাই তার ব্রত। মুহাম্মদ আবু আবিদ, একজন সমাজকর্মী, সাংবাদিক এবং তরুণদের অনুপ্রেরণা। শৈশব থেকেই মানবসেবায় আগ্রহী আবিদের জন্ম হয় আজকের দিনে অর্থাৎ ২রা মার্চ চট্টগ্রামের হালিশহরে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশের জনপ্রিয় ও শীর্ষস্থানীয় বিভিন্ন সেক্টরের মানুষ তার ভূয়সী প্রশংসা করে জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তবে মুহাম্মদ আবু আবিদ জন্মদিন উদযাপন উপলক্ষে ব্যতিক্রমী একটি পদক্ষেপ নিয়েছেন।
তিনি তার ভেরিফাইড ফেসবুক একাউন্টে পোস্ট করে জানান, "আজ আমার জন্মবার্ষিকী –কিন্তু উপহার বা উদযাপন নয়, মানবিকতা ছড়িয়ে দিন! আমি অত্যান্ত সৌভাগ্যবান কারণ- দিনটি মহিমান্বিত পবিত্র রমজানের ১ম দিন। আলহামদুলিল্লাহ। আপনারা সকলেই আমাকে আপনাদের দোয়ায় রাখবেন। আপনারা অনেকেই জানেন, আমি জন্মদিনে কেক কাটার আয়োজন করি না। বরং, প্রতিবারই একান্তে একটি এতিমখানায় গিয়ে শিশুদের সঙ্গে সময় কাটাই। তাই আমার সকল শুভাকাঙ্ক্ষীদের প্রতি বিনীত অনুরোধ—আমার জন্মদিন উপলক্ষে কোনো আয়োজন করবেন না। তবে যদি সত্যিই কিছু করতে চান, তাহলে আপনাদের আশেপাশে থাকা অসহায়, ক্ষুধার্ত মানুষদের জন্য একবেলা খাবারের ব্যবস্থা করুন। বিশ্বাস করুন, একটি কেকের মূল্যে অন্তত ৭/৮ জন ক্ষুধার্ত মানুষ পেট ভরে খেতে পারেন! তাদের মুখের হাসিটাই হবে আমার জন্য সবচেয়ে বড় উপহার। যদি এই ছোট্ট উদ্যোগ নেন —এটাই হবে আমার জন্মদিনের সবচেয়ে সুন্দর শুভেচ্ছা! একবার চেষ্টা করেই দেখুন, এই আনন্দ কেক বা সাজসজ্জার চেয়ে অনেক বেশি হৃদয়ছোঁয়া। এভাবে ভালোবাসার মাধ্যমে মানবিকতা ছড়িয়ে দিন, কারণ প্রকৃত আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার মাঝেই লুকিয়ে থাকে!"
ছোটবেলা থেকেই সমাজের অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন আবিদ। কিশোর বয়সে দেখেছেন দরিদ্র শিশুদের কষ্ট, অভাবের তাড়নায় শিক্ষার সুযোগ না পাওয়া বা বৃদ্ধ মা-বাবাদের অবহেলা। তখন থেকেই মনে স্বপ্ন বুনেছেন, একদিন কিছু করবেন এই মানুষগুলোর জন্য।
সমাজ পরিবর্তনের লক্ষ্যে মুহাম্মদ আবু আবিদ প্রতিষ্ঠা করেছেন "দূর্বার তারুণ্য ফাউন্ডেশন"। যার মাধ্যমে তিনি তরুণদের একত্রিত করে বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এই সংগঠনের সবচেয়ে শক্তিশালী জায়গাটা হল- আবিদ এর ইউনিক আইডিয়া ও তার বাস্তবায়ন করা। যেমন- অসহায় ও এতিম শিশুদের নিয়ে কক্সবাজার ভ্রমন, বন্যা পরবর্তী চিকিৎসা সেবা, প্রাকৃতিক দূর্যোগে ধ্বংস বাড়ি পুনরায় মেরামত করে দেয়া, বৃদ্ধাশ্রমে ঈদ পালন, বৃক্ষের পরিচর্যায় সচেতনতা বৃদ্ধি করা, ভাসমান জেলেদের সাথে কুরবানির রান্না মাংস খাওয়া, হিজড়া নিয়ে ব্যতিক্রমী আয়োজন, বিনামূল্যে দূর্বার তারুণ্য ব্লাড সোসাইটি এর নামে মানুষকে রক্তের ব্যবস্থা করে দেয়া, এতিমখানায় ভ্যালেন্টাইন ডে পালন, ফ্রী ঈদ শপিং, শীতের রাতে গরম খাবার, ঈদের দিনে স্টেশনে বাচ্চাদের সেমাই খাওয়ানো ও বকশিস দেয়াসহ আরও অনেক ব্যতিক্রমী প্রজেক্ট করেছে ফাউন্ডেশনটি।
দূর্বার তারুণ্য ফাউন্ডেশনটির মূল লক্ষ্য হলো—দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের সহায়তা করা, তরুণদের সমাজসেবায় উদ্বুদ্ধ করা এবং সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা। এর উদ্যোগে ইতিমধ্যে বহু দুস্থ মানুষ খাদ্য, চিকিৎসা ও আশ্রয় পেয়েছে। করোনাকালীন সময়ে মুহাম্মদ আবু আবিদ এর নেতৃত্বে সংগঠনের সদস্যরা দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে খাবার ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরণ করেছেন। এছাড়া, সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন, যাতে তারা নিজেদের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারে।
সমাজের অনিয়ম-অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে সাংবাদিকতাকে হাতিয়ার হিসেবে বেছে নেন মুহাম্মদ আবু আবিদ। দীর্ঘ ৮ বছর সাংবাদিকতার জীবনে বহু গণমাধ্যমে তিনি কাজ করেছেন। বর্তমানে তিনি ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক আলোকিত প্রতিদিন-এর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক, টেলিভিশন রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ট্র্যাব)-এর মুখপাত্র ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন ক্রাইম রিপোর্টার্স সোসাইটির মুখপাত্র ও সাংগঠনিক সম্পাদক।সাংবাদিকতার মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন অসংগতি তুলে ধরার পাশাপাশি তিনি সরাসরি মাঠে নেমে কাজ করেছেন অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য।
মুহাম্মদ আবু আবিদের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন হলো "আনন্দ গ্রাম"—একটি স্থায়ী আশ্রয়স্থল, যেখানে এতিম, বৃদ্ধ ও অসহায় মানুষের জন্য থাকবে নিরাপদ ঠিকানা। এই প্রকল্পে থাকবে এতিমখানা, বৃদ্ধাশ্রম, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা ও বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা। তার বিশ্বাস, বৃদ্ধাশ্রমের মা-বাবারা এখানে এতিম শিশুদের মাঝে সন্তানসুলভ ভালোবাসা খুঁজে পাবেন, আর এতিমরাও মা-বাবার স্নেহ পাবে।
মুহাম্মদ আবু আবিদ শুধু একজন সমাজকর্মী বা সাংবাদিক নন, তিনি একজন স্বপ্নদ্রষ্টা। তিনি চান, তার উদ্যোগগুলো জাতীয় পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ুক এবং সমাজের প্রতিটি অসহায় মানুষ যেন তাদের প্রাপ্য অধিকার পায়। তরুণদের নিয়ে কাজ করে সমাজ পরিবর্তন আনাই তার মূল লক্ষ্য।
তার মতে, "আমরা সবাই যদি একটু সহানুভূতিশীল হই, তাহলে কেউ অনাহারে থাকবে না, কেউ অবহেলিত হবে না। আমি চাই, সবাই একসঙ্গে এগিয়ে আসুক এবং সমাজের প্রত্যেকটি মানুষের মুখে হাসি ফুটুক।"
মুহাম্মদ আবু আবিদ সম্পর্কে "দৈনিক আমার দেশ" পত্রিকার আবাসিক সম্পাদক জাহিদুল করিম কচি বলেন, তিনি চট্টগ্রামের গর্ব। বয়সের বিচারে তিনি ছোট হলেও কর্ম তাকে মহান করে তুলেছে। সামাজিক কাজে তার আইডিয়াগুলো অসাধারণ। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে সামাজিক কাজে ভিন্নতা এনে মানবিকতা প্রতিষ্ঠায় তার অগ্রাণী ভূমিকা রয়েছে। নানা বৈচিত্র্যতায় মানবিক কাজগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন অন্যভাবে। তরুণ সাংবাদিক হিসেবেও বেশ সফল তিনি৷ তার লেখনীতে সাহসীকতা ও মানবিকতা একাকার হয়ে যায়। সব্যসাচী হয়ে সাংবাদিক সংগঠনগুলোও সামলাচ্ছেন। নিঃসন্দেহে আবিদ বাংলাদেশের একজন জনপ্রিয় তরুণ সংগঠক।
সমাজসেবা ও সাংবাদিকতার সমন্বয়ে মুহাম্মদ আবু আবিদ আজ এক অনুকরণীয় চরিত্র। নিরলস পরিশ্রম, সততা ও মানবসেবার প্রতি তার অঙ্গীকার তাকে সাধারণ মানুষ থেকে আলাদা করেছে। তার উদ্যোগ ও কর্মপ্রচেষ্টা একদিন সমাজে বড় পরিবর্তন আনবে, এ বিশ্বাস করা যায়। সমাজের উন্নয়নে তার মতো নিবেদিতপ্রাণ মানুষদের প্রয়োজন। তার এই সংগ্রামী ও মানবিক পথচলা একদিন সমাজে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে, এটাই সবার প্রত্যাশা।
যাযাদি/ এম