বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
জনগণ কখনো কোনো সন্ত্রাসী, গডফাদারকে গ্রহণ করেনি : আইভী

নাসিক নির্বাচনে চমকের পর চমক: সরগরম নির্বাচনী মাঠ

আইভী নির্বাচন না করলে আমার নির্বাচনের প্রধান সমন্বয়ক হতেন : তৈমূর
​ মো: শাহাদাত হোসেন, নারায়ণগঞ্জ
  ০৯ জানুয়ারি ২০২২, ২০:৫২

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী নিয়ে নির্বাচনী মাঠে নতুন নতুন চমক তৈরি হচ্ছে। মেয়র প্রার্থী প্রতিদিন নতুন নতুন বক্তব্য দিয়ে মাঠ গরম করে তুলছেন। আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে চলছে যত আলোচনা সমলোচনা। তারা কেউ কাউকে ছাড় দিয়ে কথা বলছে না। তবে প্রার্থীদের জনপ্রিয়তার যাচাই-বাচাইয়ের এমপি শামীম ওসমানকে ব্যাপক আলোচনা চলছে।

একজন আওয়ামী লীগের এমপি হয়ে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছে না এমন অভিযোগ প্রকাশ্যে উঠে এসেছে। দলের কেন্দ্রীয় নেতারাও শামীম ওসমানকে নিয়েও হুশিয়ারী দিচ্ছেন এবং নানা ধরনের কথাবার্তা বলছেন। তার পরও শামীম ওসমান নৌকার পক্ষে কাজ করবে এমন ভ‚মিকা দেখা যাচ্ছে না। শামীম ওসমানের বিষয় দলীয় ভাবে কোন পদক্ষেপ নিবেন কিনা তা নিয়ে চলছে আলোচনা। এছাড়াও নৌকার পক্ষে কাজ করতে যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে এমনও অভিযোগ উঠেছে। তবে দুই প্রার্থী গণসংযোগে জনগনকে প্রতিশ্রæতি দেয়ার চেয়ে একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে সাংবাদিকদের কাছে বক্তব্য দিচ্ছেন। এতে করে নির্বাচনী মাঠ গরম হয়ে উঠছে। নতুন নতুন সংবাদ নতুন নতুন তথ্যে নির্বাচন সরাগম হচ্ছে। যেমন একজন প্রার্থী নাসিকের সাবেক মেয়রের কর্মকান্ড নিয়ে সমলোচনা করছে এবং জনগনকে হয়রানী করেছে বলে এমনও অভিযোগ করা হচ্ছে।

অন্যজন স্বতন্ত্র (বিএনপি নেতা) প্রার্থীকে আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী এমপির সমর্থীত প্রার্থী হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। মেয়র পদে দুই হেভিওয়েট প্রার্থী বিজয়ের শতভাগ আশা নিয়ে প্রচার-প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে তৈমুর আলম খন্দকার নিজের পায়ে হাটছে এমনটাই জোরালো ভাবে বলা হলেও আইভীর বিরুদ্ধে এমন কিছু অভিযোগ করায় জনগন কিছুটা হলেও বুঝতে পারছেন এই অভিযোগ তৈমুর আলম খন্দকারের নয়, এটা ওসমান পরিবারের এমপির অভিযোগ। যার কারনে তৈমুরকে নিয়ে গুঞ্জন চলছে তিনি শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমানের সমর্থীত প্রার্থী।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী ডা: সেলিনা হায়াত আইভী রোববার (৯ জানুয়ারি) ২২নং ওয়ার্ডে গণসংযোগে যা বলেন, আমি শামীম ওসমানকে গডফাদার উপাধি দেইনি। এটা তার দীর্ঘদিনের উপাধি। শুধু নারায়ণগঞ্জ না সারা বাংলাদেশ তা জানে। আওয়ামীলীগ একটি বিশাল বড় দল। এখানে সবার স্থান আছে। যারা চলে যাওয়ার তারা চলে যাবে আর যারা টিকে থাকার তারা থাকবে। কে কী বলল, কে কী করল তাতে প্রধানমন্ত্রীর কিছু যায় আসে না। জনপ্রতিনিধি জনগণের। গত তিনবার পাশ করার পর আমি বলেছি, আমি সকলের ভোটে পাশ করেছি কিন্তু আমার পরিচয় আমি আওয়ামী লীগ। আমি বংশগতভাবে আওয়ামী লীগ করি, আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারী। কিন্তু আমি কাজ করবো সকলের জন্য। আমি যখন রাস্তা করি তখন আওয়ামী লীগ, বিএনপি দেখি না। সুতরাং আমি দলমতের উর্ধ্বে উঠে কাজ করবো।

এখনো করছি, ভবিষ্যতেও করবো। তিনি আরও বলেন, আমার জনগণ কখনো কোনো সন্ত্রাসী, খুনি, গডফাদারকে গ্রহণ করেনি। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এটা বারবার প্রমাণিত হয়েছে। আমার জনগণ এটা কখনো গ্রহণ করে না আর করবেও না। কেন্দ্র কেন্দ্রে কাজ করবে, দল দলের কাজ করবে, জনতা জনতার কাজ করবে। আইভী বলেন, নারায়ণগঞ্জের ভোটাররা আমার কথা বলে, ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা আমার কথা বলে। আমার বিরুদ্ধে প্রচুর অপপ্রচার চালানো হয়েছে, বিভ্রান্ত করা হয়েছে। ধর্মীয় উসকানি দেয়া হয়েছে। কোনোটাতেই কাজ হয়নি। আগেও হয়নি, ভবিষ্যতেও হবে না। আমি বিভিন্ন ধর্মের জন্য কাজ করেছি। আশাকরি মুসলিম, হিন্দু, খ্রিস্টান কেউ অপপ্রচারে কান দিবে না। সাধারণ মানুষ আমার পাশে থাকবে। তারা ভয় পাবে না।

নির্বাচনে শামীম ওসমানের সমর্থন বিষয়ে জানতে চাইলে আইভী বলেন, শামীম ওসমানের সমর্থনের কি কোন প্রয়োজন আছে? উনি আমার দলের লোক। সমর্থন দিলে দিবে, না দিলে না দিবে। দলে থাকতেই পারে, আমাকে অপছন্দ করতেই পারে। এটা কোনো ব্যাপার না। আমি আমার বড় ভাইকে সম্মানিত করার চেষ্টা করেছি। উনি যদি উনার দায়িত্ব পালন না করে, তাহলে আমার কিছু করার নাই। জনতা যে রায় দিবে সেটাই রায়। ষড়যন্ত্র তো করবেই কিন্তু ধ্বংস করে দিবে জনগণ। নৌকার বিপক্ষে ষড়যন্ত্র করে কেউ কিছুই করতে পারবে না ইনশায়াল্লাহ।

স্বতস্ত্র প্রার্থী এড. তৈমুর আলম খন্দকার রোববার (৯ জানুয়ারি) নারায়ণগঞ্জের ১২ নং ওয়ার্ডে গণসংযোগকালে যা বলেন, আমার প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থী তার নিজ দলের এমপিকে গডফাদার বলেছেন এটা তাদের দলের নিজস্ব ব্যাপার। বিষয়টা নিয়ে আমার কোন মাথা ব্যাথা নাই। তিনি আরও বলেন, নারায়ণগঞ্জের যে কোন ঘটনায় এ দুইজন লোক কেন যেন আলোচনায় চলে আসেন। আমি এক টকশোতে সাংবাদিকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম যে কোন ইস্যুতে আমাদের ডাকেন কেন। আমরা তো ক্ষমতায় নেই। তিনি বলেছিলেন আমরা মনে করি আপনাদের ডাকা প্রয়োজন তাই ডাকি। তার লাইন আর আমার লাইন এক নয়। তাকে দেখেছি আমি সে যখন তোলারাম কলেজের ভিপি তখন সে অনেক বড় নেতা।

আমিও তখন খেটে খাওয়া মানুষের সংগঠন করেছি হরতাল করেছি। জনগনের পক্ষে তখন আমার ভূমিকা অত্যান্ত কঠিন এবং সাবলীল ছিল। তিনি বলেন, আইভী আজ নির্বাচন না করলে তিনি আমার নির্বাচনের প্রধান সমন্বয়ক হতেন। এখন নির্বাচনের মাঠে তিনি নিজে দলের ব্যাপারে আরও কথা বলেছেন। তিনি শুধু সরকারি দলকে বিতর্কিত করেননি তিনি আমার নেত্রীকেও অপমান করেছেন। তিনি বলেছেন দুই নেত্রী দেশকে ধ্বংস করেছে। এই দুই নেত্রীকেও তিনি ছাড় দেননি, আমাকে কী ছাড় দিবেন। সাবেক মেয়র হিসেবে তার নিজ বক্তব্যে আরও সাবলীল ও সাবধান হওয়া উচিত। তিনি তার ও আমার নেত্রীর সমালোচনা করেছে। তার যেটা ভাল লাগবে না সেটার বিরুদ্ধে তিনি যা খুশি বলে যাবেন এটা ঠিক না।'

তৈমূর আরও বলেন, আমি নির্বাচন নিয়ে শংকিত। আমি কোন দলের ব্যানারে দাঁড়াইনি। আমাকে মানুষ দলমত নির্বিশেষে সমর্থন দিচ্ছে। পত্রিকায় আপনারা দেখেছেন জাতীয় পার্টি বিএনপি সহ অনেকেই আমার সাথে ছিলেন। কাল রাতে ধামগড় ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের বাড়িতে তল্লাশি হয়েছে। ট্রাকে ট্রাকে পুলিশ বাড়ি বাড়ি গিয়ে সকলকে হুমকী দেয়া হচ্ছে নৌকার নির্বাচন করার জন্য। কিন্তু নারায়ণগঞ্জের মানুষ ভয়ে মরে কাপুরুষ লড়ে যায় বীর এই নীতিতে অটল থাকবে। ''স্থানীয় নির্বাচন জাতীয় প্রতীকে করায় মানুষ অভ্যস্ত না। এখানে নির্বাচনটা হচ্ছে নাসিকের ব্যর্থতা ও ঠিকাদার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে। এখনও সেই ঠিকাদাররা নির্বাচন করছে। তিনি আরো বলেন, আমার সাথে সকলে আছে। তারা সুপেয় পানি চায়, তারা জলাবদ্ধতা মুক্ত শহর চায়। তারা নারায়ণগঞ্জ থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। ঢাকার নেতাদের চিন্তা বাদ দেয়া উচিত। রাজনীতিতে বাস্তবতা এবং জনগনের চাহিদা বিবেচনা করে রাজনীতির মাঠে থাকতে হবে। তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, আমাকে যদি রাস্তার একটা ভিখারি সমর্থন দেয় সেটা আমি মাথা পেতে নেব। সরকারি দলের মধ্যে যে আত্মকোন্দল বিবাদ মুখোমুখি অবস্থান এতে আমার লস কী। সবাই এগিয়ে আসছে। তারা কী ট্যাক্স দেয় না, তারা কী পানি খায় না। রাজনীতি পরের বিষয় আগে এটা আমাদের নিজস্ব এলাকা এটা নিজের শহর।

সংখ্যালঘু বলতে আমি কিছু বুঝি না সকলে বাংলাদেশের নাগরিক। তবে মসজিদ মন্দিরের জায়গা দখল হয়েছে বলে নারায়ণগঞ্জবাসীর একটা অভিযোগ আছে। তৈমূর বলেন, আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে, বাড়িতে পুলিশ পাঠানো হচ্ছে। এর মাধ্যমে নানা রকমের আতঙ্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে। তবে আমি নারায়ণগঞ্জের জনগনকে আশ্বস্ত করতে চাই। নারায়ণগঞ্জের ইতিহাস আন্দোলন সংগ্রামের ইতিহাস। এ নারায়ণগঞ্জে কখনও সরকারি দলের প্রার্থী পাস করেনা। বিএনপির আমলেও সরকারি দলের প্রার্থী পাস করেনি। আইভী যে ২০১১ সালে পাস করেছে সে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে পাস করেছে। দল তখন কেন আমাকে বসিয়ে দিয়েছে তা তো জানি না। তবে মওদুদ সাহেব এসে বলেছিলেন শামীম ওসমানকে ফেল করানোর জন্য তৈমূরকে বসিয়ে দিয়েছি।

যাযাদি/এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে