মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

মৌলভীবাজার-১ আসনে সেইফ জোনে শাহাব উদ্দিন, উত্তাপ ছড়াচ্ছেন রিয়াজ

জুড়ী (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
  ০৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১৪:১০
মৌলভীবাজার-১ আসনে সেইফ জোনে শাহাব উদ্দিন, উত্তাপ ছড়াচ্ছেন রিয়াজ

আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচন কে কেন্দ্র করে সারাদেশের ন্যায় মৌলভীবাজার-১ বড়লেখা জুড়ী আসনেও চলছে প্রার্থীদের প্রচার প্রচারণা। মন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন ছাড়াও মৌলভীবাজার-১ আসনে তৃণম‚ল-বিএনপি থেকে প্রার্থী হয়েছেন মো. আনোয়ার হোসেন মঞ্জু (সোনালী আঁশ), জাতীয় পার্টি থেকে লাঙল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন আহমেদ রিয়াজ উদ্দিন। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ট্রাক প্রতীক নিয়ে মাঠে আছেন ময়নুল ইসলাম।

নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসায় প্রার্থীদের মধ্যে প্রচার প্রচারণা চলছে পুরোদমে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেওয়া ও দেশের অন্যান্য আসনের মতো এই আসনে সরকার দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী না থাকায় বর্তমান বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন আছেন পুরোপুরি সেইফ জুনে। শক্ত কোন প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকলেও নৌকার প্রার্থী বর্তমান পরিবেশ মন্ত্রী ভোটারদের মন জয় করতে সকাল থেকে গভীর রাত অবধি প্রচার প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আনতে দলীয় নেতাকর্মীরা ভোটারদের ঘরে ঘরে গিয়ে সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরে নৌকার প্রতিকে ভোট চাইছেন। আবারো নৌকায় ভোট দিতে ভোটারদের দিচ্ছেন নতুন নতুন উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি। এছাড়া বর্তমান পরিবেশমন্ত্রী ক্লিন ইমেজের হওয়ায় সাধারণ ভোটারদের কাছে তাঁর জনপ্রিয়তা রয়েছে আকাশচুম্বী। চারবারের এমপি হিসেবে নিজ নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করায় জয়ের পথে রয়েছেন ক্লিন ইমেজের মোঃ শাহাব উদ্দিন এমপি।

জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার-১ আসনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পেতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন লবিং করলেও শেষ পর্যন্ত বর্তমান পরিবেশমন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন এম'পিই পান নৌকার টিকেট। ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন স্বতন্ত্র প্রার্থী না হয়ে নৌকার পক্ষেই কাজ করার ঘোষণা দিয়ে মাঠে নৌকার পক্ষে কাজ করছেন।

সরেজমিনে মৌলভীবাজার-১ বড়লেখা -জুড়ীয় এ দুই উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায় নৌকা ছাড়া অন্যান্য প্রার্থীদের নেই তেমন কোন প্রচার প্রচারণা। নির্বাচনের আর মাত্র কয়েকদিন বাকি থাকলেও সব এলাকায় এখনো সকল প্রার্থীদের পোস্টারের দেখা মিলে নি। তবে শেষ মুহ‚র্তে চার প্রার্থীর পক্ষেই গাড়ী দিয়ে গান বাজনার মাধ্যমে চলছে প্রচার-প্রচারণা। সাধারণ ভোটারদের মন জয় করতে সকাল থেকে গভীর রাত অবধি প্রার্থীরা উঠান বৈঠক, সভা ও সমাবেশ করে বিভিন্ন উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের মন জয় করার চেষ্টা করছেন।

সাধারণ ভোটাররা বলেন, শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় এ আসনের নির্বাচনে আবারো মন্ত্রী শাহাব উদ্দিনই এমপি নির্বাচিত হবেন এমনটাই নিশ্চিত। এছাড়া মন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন সংসদ সদস্য, হুইপ ও মন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন করায় সাধারণ বর্তমানে যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তাদের মধ্যে ভোটারদের পছন্দের তালিকায় রয়েছেন।

তৃণম‚ল বিএনপির প্রার্থী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু জুড়ী উপজেলা ছাত্রদল ও যুবদলের নেতা থেকে সর্বশেষ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহবায়ক ছিলেন। তার প্রতি দলের অবিচার ও অবম‚ল্যায়নের ফলে গত ১৯ সেপ্টেম্বর তিনি স্বেচ্ছাসেবক দল থেকে পদত্যাগ করে তৃণম‚ল বিএনপিতে যোদ দেন এবং এ আসনে উক্ত দলের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন। যদিও যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল তাকে বহিস্কার করে। তার অনুগত কিছু কর্মী ও আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন।

এদিকে বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহ, জুড়ী উপজেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক নিকাহ রেজিস্ট্রার, মুফতী মোহাম্মদ ময়নুল ইসলাম হলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। অনেকেই বলছেন তিনি আওয়ামী লীগ প্রার্থীর এজেন্ট হিসেবে নির্বাচন করছেন। তবে এক ভিডিও বার্তায় সে অভিযোগ প্রত্যাখান করে তিনি বলেছেন মানবসেবা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আলেম-উলামারা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে দেশকে ইসলামী রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য প্রার্থী হয়েছেন।

সোস্যাল মিডিয়া বেশ জনপ্রিয়, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য প্রবাসীদের অধিকার আদায় আন্দোলনের নেতা কাতার প্রবাসী আহমদ রিয়াজ উদ্দিন ভোটের মাঠে উত্তাপ ছড়াচ্ছেন। ভোটাররা তাকে জোকার, কমেডিয়ান, টিকটকার ইত্যাদি বিশেষণে লোকজন অভিহিত করেন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে লাঙল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছিলেন। জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলা জাতীয় পার্টির উল্লেখ যোগ্য কোনো নেতাকর্মীকে এখনও তার পক্ষে মাঠে দেখা না গেলেও তার নির্বাচনী সভায় মানুষের ঢল নামে।

আঞ্চলিক ভাষায় তার হাস্যরসাত্বক বক্তব্য দর্শক শ্রোতাকে আমোদিত করে। সরকার দলীয় স্থানীয় কয়েক নেতার বিভিন্ন অপকর্মের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারী ম‚লক কড়া ভাষার বক্তব্য জনমনে প্রভাব ফেলে। বিভিন্ন কৌশলী বক্তব্যে বিএনপি-জামায়াতের ভোটারদের ভোট দিতে কেন্দ্রে যাবার আহবান জানান। তার ধারণা বিএনপি-জামায়াতের ভোটার ভোট দিতে গেলে তিনি বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন।

তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আন্দোলন করে আওয়ামী লীগ সরকার হটানো যাবে না। সরকার হটাতে হলে সারাদেশে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে লাঙলে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করলেই আওয়ামী লীগ সরকার শেষ। কেননা, ভিতরি মাইরের ঔষধ নাই’। সর্বোপরী তার বিনোদনম‚লক বক্তব্য ও প্রচারণা মাঠে কিছুটা হলেও উত্তাপ ছড়াচ্ছে।’

অপর দিকে, আওয়ামীলীগ থেকে এ আসনে মোঃ শাহাব উদ্দিন ইতিমধ্যে চার বার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। বিগত ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি ছিলেন বাংলাদেশ আওয়াামী লীগের নৌকা মার্কার অন্যতম একক প্রার্থী। ১৯৮৪ সালে প্রথম বড়লেখা উপজেলার সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি নির্বাচিত হন। সে নির্বাচনের পর রাজনীতির মাঠে তাকে আর পেছন ফিরে থাকাতে হয়নি। একটানা ৩ বার ইউপি চেয়ারম্যান ছিলেন। এরপর ১৯৯৬ সালে প্রথম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়ে বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী সাবেক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট এবাদুর রহমান চৌধুরীকে পরাজিত করে এমপি নির্বাচিত হন। এছাড়া ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদে এবং ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে পরপর তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়রে দায়িত্ব পান। এছাড়াও ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদে সরকার দলীয় হুইপের দায়িত্ব পালন করেন।

চারবার জাতীয় সংসদ সদস্য, জাতীয় সংসদের হুইপ ও পরিবেশমন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে জুড়ী বড়লেখার উন্নয়নে তিনি ব্যাপক ভ‚মিকা রেখেছেন ।তারমধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য এক হাজার কোটি টাকা ব্যয় জুড়ী উপজেলার লাঠিটিলা বনে দেশের তৃতীয় বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক একনেকে অনুমোদন। ব্যাপক উন্নয়ন করার ফলে আওয়ামীলীগ সহ সাধারণ ভোটাররা এখনো আস্থা রেখেছেন সাদা মনের মানুষ হিসেবে পরিচিত মোঃ শাহাব উদ্দিনের উপর।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন এমপি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের অভ‚তপ‚র্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। বিগত সময়ে বড়লেখা ও জুড়ীতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও জনগন আবারো নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে বিপুল ভোটে জয়ী করবে, ইনশাল্লাহ।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে