শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

পুরোনো চেয়ার পেতেই নেমেছেন মাঠে আব্দুল হাই আকন্দ

মামুন আল গাইয়ুম, মুক্তাগাছা (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
  ০২ মে ২০২৪, ১৪:২৯
-ফাইল ছবি

গেলো দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ ছাড়েন বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই আকন্দ। পাশাপাশি স্বতন্ত্র নির্বাচন করার ঘোষণাও দেন তিনি। তবে তার মাঠের জনপ্রিয়তা ও দলের প্রতি ত্যাগ বিবেচনায় আওয়ামীলীগ মুক্তাগাছা আসনে দলীয় মনোনয়ন দেয় তাকে।

পরে দলীয় স্বার্থে সারা দেশের ২৬টির সাথে জাতীয় পার্টির জন্য এ আসনটি ছাড় দেয় আওয়ামী লীগ। দলীয় নির্দেশে নৌকা প্রতীক পেয়েও নিজের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নেন আব্দুল হাই আকন্দ। এতে একদিকে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের চেয়ার ও অন্যদিকে নির্বাচিত হয়ে জাতীয় সংসদ সদস্য হওয়ার স্বপ্নও ভাঙে তার। এতে আপাতদৃষ্টে দুকূলই হারান তিনি। মাঠের রাজনীতিতে ব্যাপক জনপ্রিয় ও জনসমর্থন থাকার পরও ভাগ্য বিড়ম্বনায় পড়েন জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান এই বীর মুক্তিযোদ্ধা। তবে দুধের স্বাদ গুলে মেটানোর মতই নিজের তুমোল জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে নিজের পছন্দের লোক হিসেবে স্বতন্ত্র প্রার্থী কৃষিবিদ নজরুল ইসলামকে এমপি হিসেবে বিজয়ী করে সংসদে পাঠান।

এদিকে সংসদে যেতে না পারলেও পুনরায় তাকে উপজেলা চেয়ারম্যানের চেয়ারে বসাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে তার কর্মী সমর্থকরা। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়ে জনপ্রিয়তা নিয়ে মাঠ চষেও বেড়াচ্ছেন তিনি।

মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই আকন্দ দীর্ঘদিন মুক্তাগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত পৌরসভার চেয়ারম্যান, ২০১১ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত পৌরসভার মেয়র এবং ২০১৯ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

মুক্তাগাছা উপজেলা আ.লীগ দুটি ধারায় বিভক্ত। একটি গ্রæপের নেতৃত্ব দেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ এবং অপর গ্রæপের নেতৃত্বে বর্ষীয়ান নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই আকন্দ।

সাবেক সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদের গ্রæপ থেকে সাবেক ভারপ্রাপ্ত উপজেলা চেয়ারম্যান ও শহর আওয়ামীলীগের সভাপতি আরব আলীর প্রতি সমর্থন দেয়া হয়েছে বলে মাঠে প্রচার রয়েছে। অপরদিকে প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই আকন্দ নিজেই তার পুরোনো চেয়ার ফিরে পেতে প্রার্থী হয়েছেন।

এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নবীন প্রার্থীদের আনাগোনাও দেখা যাচ্ছে। মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন তারাও। এই দুই প্রার্থীর বাইরে উপজেলা চেয়ারম্যান হতে প্রতিদ্ব›িদ্বতায় নেমেছেনে উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি দেবাশীষ ঘোষ বাপ্পী, মুক্তাগাছার স্থানীয় রাজনীতিতে একেবারে নতুন মুখ যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কবির মো. শহীদুল ইসলাম এবং ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য রেজাউল করিম রেজা।

সব মিলে মোট ৫ জন প্রার্থী এবার চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতায় নেমেছেন। এদের প্রত্যেকেই মূল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। বিএনপি বা অন্যকোন রাজনৈতিক দল থেকে কোন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতায় নেই। দলীয় প্রতীক না থাকায় মাঠের নেতাকর্মী ও সমর্থকরাও নানাভাবে বিভক্ত হয়ে যার যার পছন্দের প্রার্থী বেছে নিয়ে মাঠে কাজ করছেন। প্রতীক বরাদ্দের আগে থেকেই প্রার্থীরা নিজেদের মতো করে কৌসলী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

স্থানীয় রাজনীতিতে সর্বজনীন মুরব্বি হিবেসে পরিচিত আব্দুল হাই আকন্দ ভোটের রাজনীতিতে বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক সচেতন মহল। তিনি গত জাতীয় সংসদ নির্বাচে অংশ নেয়ার জন্য তৃণমূল পর্যায়ে জনগণের সাথে যেভাবে নিজেকে সম্পৃক্ত করে চলেছেন নৌকা প্রত্যাহারের পরও তিনি তার সেই যোগযোগ অব্যাহত রেখেছেন। যার জন্য তার বলয় বেশ শক্তিশালী।

অপরদিকে স্থানীয় রাজনীতিতে শক্তপ্রতিদ্ব›িদ্ব গ্রæপ হিসেবে পরিচিত সাবেক প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ গ্রæপের নেতাকর্মীরাও তাদের ঘোষিত প্রার্থী আরব আলীকে নিয়েও ভোটের মাঠে নানা ছক আঁকছেন। তারাও বেশ জোরালো অবস্থান নিয়ে মাঠে কাজ করছেন। এদিকে স্থানীয় রাজনীতিতে নতুন মুখ বয়সে একেবারেই তরুন যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কবির মো. শহিদুল ইসলামও একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলকে ঘিরে নিজের অবস্থান জানান দিয়ে যাচ্ছেন।

মাঠে আছেন কেএম খালিদ গ্রæপ থেকে বুল পাল্টে আব্দুল হাই আকন্দ গ্রæপের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আব্দুল হাই আকন্দ সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করা সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান দেবাশীষ ঘোষ বাপ্পীও। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোটের সাথে নিজের রাজনৈতিক অর্জনকে সম্পৃক্ত করে ভোটের মাঠে তিনিও আশার আলো দেখতে চান। তবে ৫৬ প্রহর মাঠের কমিটি নিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের স্পষ্ট বিভক্তিকে ভোটের মাঠে বিরূপ প্রভাব ফেলার আশংকা রয়েছে বলে মনে করছেন কেউ কেউ। এলাকায় আসা রেজাউল করিম রেজা প্রার্থী হলেও তাকে নিয়ে মাঠে তেমন কোন আলোচনা নেই বললেই চলে।

বৃহস্পতিবার ছিল প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ। এখানে আব্দুল হাই আকন্দ মোটরসাইকেল, আরব আলী দোয়াত কলম, দেবাশীষ বাপ্পী হেলিকপ্টার, কবির মো. শহিদুল ইসলাম ঘোড়া, রেজাউল করিম রেজা আনারস প্রতীক পেয়েছেন।

প্রান্তিক পর্যায়ের ভোটারদের সরবতায় অনেকেই মনে করছেন শেষ পর্যন্ত আব্দুল হাই আকন্দই তার পুরনো চেয়ারে ফিরে যাবার উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছেন।

এ ব্যাপারে আবদুল হাই বলেন, আমি উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর আমার নামে মিথ্যা মামলা দেওয়ায় প্রায় তিন বছর পরিষদের বাইরে থেকেছি। জনগণ যে কারণে আমাকে নির্বাচিত করেছে, তার কিছুই করতে পারিনি। এরপর গত সংসদ নির্বাচনে দল থেকে নৌকার মনোনয়ন পাবার পরও জাপার সঙ্গে আসন সমঝোতায় আমাকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে হয়েছে। আমার রাজনীতি মূলত মানুষের জন্য। জীবনে বহুবার জনপ্রতিনিধি হয়েছি কিন্তু কোনদিনই সাধ্যমত মানুষের বাইরে নিজের জন্য কোন কিছুই করার চেষ্টা করিনি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে রাজনীতি করি।

এই শেষ বয়সে এসে নিজের লাভালাভের কোন চিন্তা করি না। মানুষের সেবা করেই বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিতে চাই। এখন যেহেতু এমপি আমাদের নিজেদের এবং স্থানীয় মাটির সন্তান। সেই সাথে এলাকার জন্য তার কাজ করার মানসিকতা আছে। তাই আমি নির্বাচিত হতে পারলে এমপি এবং উপজেলা চেয়ারম্যান মিলে এলাকার উন্নয়ন কর্মকান্ডকে এগিয়ে নিতে চাই। সেজন্যই আমার নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষের চাহিদার প্রেক্ষিতে ফের নির্বাচন করছি।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে