বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ আবু সাঈদকে সন্ত্রাসী বলায় প্রতিবাদ করায় আওয়ামীপন্থীদের হামলা ও মারধরের শিকার হয়েছেন মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার হোসেনপুর ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর দুই নেতা। অভিযোগ রয়েছে একই ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আলামিন খালাসির নেতৃত্বে এ সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়।
এসময় ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী মহাসিন ফকির ও সাংগঠনিক সম্পাদক আলী শেখ আহত হন। এ ঘটনায় উল্টো মহাসিনকেই দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পরে আওয়ামীপন্থীদের চাপ ও হামলা আতংকে শনিবার (১৮ জানুয়ারী) বাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন তিনি। এদিকে শহীদ আবু সাঈদকে সন্ত্রাসী বলায় ফুসে উঠেছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতাকর্মীরা।
জামায়াত নেতা ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার (১৭ জানুয়ারী) রাতে রাজৈর উপজেলার হোসেনপুর পরিষদে একটা বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা নিয়ে সালিশ বৈঠক বসানো হয়। এসময় একজনের নামকে অনুসরণ করে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত শহীদ আবু সাঈদকে সন্ত্রাসী-নেশাখোর বলে আখ্যায়িত করেন হোসেনপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আলামিন খালাসি। সঙ্গে সঙ্গে এর প্রতিবাদ করেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী মহাসিন ফকির।
এ নিয়ে মহাসিনের উপর চড়াও হন আলামিন ও পাশ্ববর্তী গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার রাঘদি ইউনিয়ন প্রভাবশালী ব্যক্তি মানোয়ার হোসেন। বাকবিতন্ডার একপর্যায়ে তারা লোকজন নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী মহাসিন ফকির ও সাংগঠনিক সম্পাদক আলী শেখকে মারধর করে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে এ ঘটনায় কোন পদক্ষেপ না নিয়ে উল্টো মহাসিন ফকিরকে জামায়াতে ইসলামীর সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে রাজৈর উপজেলা জামায়াতে ইসলামী নেতাকর্মীরা। এরপরই বিভিন্ন চাপ ও হামলা আতংকে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান ভুক্তভোগী জামায়াত নেতা মহসিন।
এদিকে শহীদ আবু সাঈদকে সন্ত্রাসী বলায় এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করায় বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতাকর্মীরা।
অভিযোগ আছে, অভিযুক্ত মানোয়ার ও তার লোকজন গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার রাঘদি ইউনিয়নের বাসিন্দা হলেও তারা প্রভাব বিস্তার করেন মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার হোসেনপুর ইউনিয়নে। তারা ভয়ংকর প্রকৃতির হওয়া তাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলার সাহস পান না। তার ভাতিজা রাঘদি ইউপি সদস্য সাদ্দাম হোসেন দল নিয়ন্ত্রণ করেন। সাদ্দাম আওয়ামীলীগের সাবেক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী ফারুক খান সমর্থিত রাঘদি ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি। তিনি বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।
ভুক্তভোগী হোসেনপুর ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী মহাসিন ফকির অভিযোগ করে জানান, জাতীয় বীর শহীদ আবু সাঈদকে যুবলীগ সভাপতি আলামিন সন্ত্রাসী ও নেশাখোর বলায় আমি প্রতিবাদ করেছি। এজন্য সে এবং রাঘদি ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা মানোয়ার ও তাদের লোকজন আমার উপর হামলা করে হত্যাচেষ্টা চালায়। এসময় স্থানীয় কয়েকজন লোক আমাকে বাচাইছে।
এ ঘটনায় বিচার দাবি করায় উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর ও সাধারণ সম্পাদক উল্টো আমার বিপক্ষে অভিযোগ তুলে আমাকে পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। আমাকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে, যেকোন সময় আবার আমার উপর হামলা হতে পারে। এজন্য বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছি। এ ঘটনার বিচার দাবি করছি।
জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক সম্পাদক আলী শেখ জানান, মহাসিন ভাইকে বাঁচাতে গিয়ে আমি মার খেয়েছি। তার কোন দোষ ছিল না। মানোয়ার ওরা শহীদ আবু সাঈদ, বিএনপি ও জামায়াত তুলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছে। এর প্রতিবাদ করায় তার উপর হামলা চালিয়েছে। কিন্তু মহসিনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। কারণ হিসেবে জানিয়েছেন তার পদ নিয়ে ঝামেলা, পরে বিবেচনা করে দেখা হবে। আর আমার বিষয়টি পরে আলোচনা করে দেখবে বলেছেন।
এ ব্যাপারে দলীয় ভাবে কোন আইনি সহযোগিতা না নিয়ে উল্টো মহাসিনকে অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়টি জানিয়ে রাজৈর উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর আলী আহমেদ আকন বলেন, মহসিনের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। তাই দল মনে করেছে তাকে অব্যাহতি দেওয়ার দরকার তাই দিয়েছে। আর সাংগঠনিক সম্পাদক আলী শেখের সাথে যে ঘটনা ঘটেছে তা পরবর্তীতে আলোচনা সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থী আফরান জামি জানান, শহীদ আবু সাঈদকে নিয়ে যারা গালাগালি করেছে তাদের কোন ভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না। ইতোমধ্যে আমরা জেলা পর্যায়ে কথা বলেছি। দ্রুতই পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাসুদ খান জানান, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজনের ফোন পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থল থেকে মহসিনকে উদ্ধার করেছি। কিন্তু এ বিষয়ে থানায় কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি।
যাযাদি/ এস