টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অনেকবারই নতুনভাবে শুরু করেছে বাংলাদেশ। তবে সময়ের সঙ্গে তা মিলিয়ে গেছে হাওয়ায়। এত বছরেও তাল-লয় ঠিকঠাক ধরতে পারেনি টাইগাররা। এবার সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে নতুন অধিনায়কের নেতৃত্বে নতুন করে আবার আশার পথে ছুটতে শুরু করবে দল। মূল লক্ষ্য আগামী বছরের বিশ্বকাপ।
আগামী ফেব্রুয়ারি-মার্চে ভারত ও শ্রীলঙ্কা যৌথভাবে আয়োজন করবে বিশ ওভারের বিশ্বকাপ। এর আগে এই বছরই অন্তত ১৯টি টি-টোয়েন্টি খেলবে বাংলাদেশ। এশিয়া কাপ হলে সংখ্যাটি বাড়বে আরও।
শারজাহতে দুই ম্যাচের সিরিজের প্রথমটি শুরু শনিবার বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায়। পরেরটি সোমবার একই সময়ে।
সিরিজটি অবশ্য কিছুদিন আগেও সূচিতে ছিল না। বাংলাদেশের মূলত পাকিস্তানে যাওয়ার কথা পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে। সেই সফরেও আসলে সূচিতে শুরুতে ছিল তিনটি করে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি। পরে বিশ্বকাপকে ভাবনায় রেখে দুই দেশের বোর্ডের আলোচনায় ওয়নডে বাদ দিয়ে সিরিজটি রূপ নিয়েছে পাঁচ টি-টোয়েন্টিতে।
সেই সিরিজের যাত্রাপথে পরে যুক্ত করা হয় আরব আমিরাতের সঙ্গে দুটি টি-টোয়েন্টি। বিশ্বকাপের আগে যত ম্যাচ খেলা যায়, ততই শাণিত হয়ে ওঠার সুযোগ।
বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে লিটন কুমার দাস জমানাও শুরু হচ্ছে এই সিরিজ দিয়ে। তিন সংস্করণেই নেতৃত্বের অভিজ্ঞতা যদিও আগেই হয়েছে তার। টি-টোয়েন্টিতে টস করেছেন চারবার। তবে প্রতিবারই ছিলেন মূল অধিনায়কের বদলি হিসেবে। বাংলাদেশের সবশেষ সিরিজেই ওয়েস্ট ইন্ডিজে টি-টোয়েন্টি সিরিজে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন নাজমুল হোসেন শান্তর অনুপস্থিতিতে।
ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে ৩-০ ব্যবধানে জয় পাওয়ার সেই সিরিজে লিটনের নেতৃত্ব দারুণভাবে নজর কাড়ায় মূলত এবার মূল অধিনায়ক করা হয়েছে তাকে। দায়িত্ব পেয়েছেন আগামী বিশ্বকাপ পর্যন্ত।
তার নেতৃত্বগুণ নিয়ে নানা সময়েও দেশের ক্রিকেটের অনেকেই প্রশংসা করেছেন, বিশেষ করে মাঠের ভেতরে তার কুশলী নেতৃত্বের। এবার তা ভালো করে দেখানোর সুযোগ ৩০ বছর বয়সী এই ক্রিকেটারের সামনে। দেশ ছাড়ার আগে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলে গেছেন, লম্বা সময়ের জন্য দায়িত্ব পাওয়ায় দল গোছানোর সুযোগ পাবেন।
দল গোছানোর পাশাপাশি অবশ্য নিজের ব্যাটিংও গুছিয়ে নিতে হবে লিটনকে। তার ব্যাটিংয়ের ধরনকে এই সংস্করণের উপযোগী ধরে নেওয়া হলেও পারফরম্যান্সে পড়ছে না প্রতিফলন। সবশেষ ২৪ টি-টোয়েন্টি ইনিংসে তার ফিফটি স্রেফ একটি। ওয়েস্ট ইন্ডিজে তার নেতৃত্ব প্রশংসিত হলেও ব্যাট হাতে তিন ইনিংস রান করেছিলেন ০, ৩ ও ১৪।
দল ঘোষণার সংবাদ সম্মেলনে প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন জানিয়েছেন, আপাতত তিন নম্বর পজিশনকে লিটনের জন্য উপযুক্ত মনে করছেন তারা। নেতৃত্বের দায়িত্ব তার ব্যাটিংয়ের সেরাটা বের করে আনবে, আপাতত এই আশা করছে বাংলাদেশের ক্রিকেট।
দল হিসেবে সংযুক্ত আরব আমিরাত খুব শক্ত চ্যালেঞ্জ জানানোর কথা নয়। এই সংস্করণে যদিও কোনো দলকেই খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। তবে টি-টোয়েন্টি র্যাঙ্কিংয়ের ১৫ নম্বরে থাকা দলের সঙ্গে বাংলাদেশের জয়ই প্রত্যাশিত।
মুখোমুখি লড়াইয়ে এখনও পর্যন্ত দুই দলের তিন টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ জিতেছে তিনটিতেই। তবে ম্যাচের আগের দিন বিসিবির ভিডিও বার্তায় লিটন বললেন, কন্ডিশনের কারণে আমিরাতকে বেশ সমীহ করছেন তারা।
“আমরা চেষ্টা করব ভালো ক্রিকেট খেলার। সংযুক্ত আরব আমিরাত নিজেদের মাঠে সবসময় ভালো দল। তারা এখানে সবসময় খেলে, কন্ডিশন সম্পর্কে ভালো ধারণা আছে। তকে একই সঙ্গে আমাদের দলও ভালো। আমরা চেষ্টা করব মানিয়ে নিতে এবং ভালো ক্রিকেট খেলতে।”
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের যখন শুরু, তখন ধরে নেওয়া হয়েছিল এই সংস্করণের দারুণ উপযোগী দল বাংলাদেশ। শুরুতে সেই আভাস কিছুটা ছিল পারফরম্যান্সেও। কিন্তু ক্রমেই পিছিয়ে পড়া দল তাল মেলাতে পারেনি দ্রুত বদলাতে থাকে ধরনের সঙ্গে। এখন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট যে উচ্চতায় পৌঁছে গেছে, বাংলাদেশ সেখান থেকে অনেক দূরে।
সেই দূরত্ব ঘোচাতে লিটন শোনালেন স্বাধীনতার বার্তা। অধিনায়কত্বের চাওয়া, মাঠে নেমে তার দল যেন ডানা মেলতে পারেন নির্ভয়ে।