সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫, ২৩ আষাঢ় ১৪৩২
প্রজাতন্ত্রের মূল্যবোধের সনদ

ফ্রান্সের মুসলমানদের ১৫ দিনের আলটিমেটাম ম্যাখোঁর

ইসলাম একটি ধর্ম, কোনো রাজনৈতিক ধারা নয় মুসলমান গোষ্ঠীগুলোতে বিদেশি হস্তক্ষেপও নিষিদ্ধ
যাযাদি ডেস্ক
  ২১ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০
আপডেট  : ২১ নভেম্বর ২০২০, ১০:৫৭
ফ্রান্সের মুসলমানদের ১৫ দিনের আলটিমেটাম ম্যাখোঁর
প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ

ফ্রান্সের 'প্রজাতন্ত্রের মূল্যবোধের সনদ' মেনে নেয়ার জন্য দেশটির মুসলমান নেতাদের আলটিমেটাম (সময়সীমা) বেঁধে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ। ফরাসি প্রেসিডেন্ট বুধবার ফ্রান্সের মুসলিম নেতাদের শীর্ষ সংগঠন 'ফ্রেঞ্চ কাউন্সিল অব দ্য মুসলিম ফেইথ'কে (সিএফসিএম) ১৫ দিনের সময়সীমা বেঁধে দেন এই সনদ মেনে নেয়ার জন্য। এক মাসের কিছু বেশি সময়ের মধ্যে কট্টর ইসলামপন্থীরা তিনটি হামলা চালানোর পর এই সিদ্ধান্তের কথা জানালো ফ্রান্স। সংবাদসূত্র : বিবিসি নিউজ সিএফসিএম ইমামদের নিয়োগ এবং কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতে 'ন্যাশনাল কাউন্সিল অব ইমাম' নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে সম্মত হয়েছে। এটি ইমামদের আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়ার এবং তাদের অনুমতিপত্র বাতিল করতে পারবে। ওই সনদটিতে এমন কথা থাকছে যে, ইসলাম একটি ধর্ম এবং কোনো রাজনৈতিক ধারা নয়। মুসলমান গোষ্ঠীগুলোতে 'বিদেশি হস্তক্ষেপ'ও নিষিদ্ধ করা হয়েছে সনদে। দেশটিতে সন্ত্রাসী হামলাগুলোর মুখে প্রেসিডেন্ট ম্যাখোঁ ফরাসি ধর্মনিরপেক্ষতার নীতিকে জোরালোভাবে সমর্থন করেছেন। এসব হামলার মধ্যে ছিল একজন শিক্ষকের শিরশ্ছেদের ঘটনা, যিনি তার ক্লাসে আলোচনার সময় ইসলামের নবীর হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর কার্টুন দেখিয়েছিলেন। বুধবার এলিসি প্যালেসে প্রেসিডেন্ট ম্যাখো এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরালদ দারমানিন আটজন সিএফসিএম নেতার সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে লা প্যারিসিয়েঁ পত্রিকা একটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে জানায়, 'সনদে দুটি মূলনীতি পরিষ্কারভাবে উলেস্নখ করা থাকবে। এক. রাজনৈতিক ইসলাম প্রত্যাখ্যান এবং দুই. যেকোনো ধরনের বিদেশি হস্তক্ষেপ।' ওই বৈঠকে 'ন্যাশনাল কাউন্সিল অব ইমামস' প্রতিষ্ঠা করার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়। প্রেসিডেন্ট ম্যাখোঁ যাকে 'ইসলামী বিচ্ছিন্নতাবাদ' হিসেবে বর্ণনা করেছেন, সেই বিষয়টি প্রতিহত করার উদ্দেশে নতুন পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও ঘোষণা করেন তিনি। এসব পদক্ষেপের মধ্যে থাকছে একটি আইন প্রণয়ন, যার লক্ষ্য হবে মৌলবাদকে প্রতিহত করা। বুধবারে প্রকাশ করা এই নতুন কৌশলের মধ্যে রয়েছে, হোম-স্কুলিং বা ঘরে থেকে পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং ধর্মীয় কারণে সরকারি কর্মকর্তাদের হুমকি দেয়া বা ভয় দেখানো হলে আরও কঠিন শাস্তির বিধান। নতুন আইনের অধীনে শিশুদের একটি পরিচিতি বা আইডেন্টিফিকেশন নম্বর প্রদান করা, যার মাধ্যমে নিশ্চিত করা যাবে যে, তারা স্কুলে যাচ্ছে কি-না। যেসব অভিভাবক এই আইন অমান্য করবেন, তাদের বড় অঙ্কের জরিমানা-সহ ছয় মাস পর্যন্ত কারাদন্ডের শাস্তি দেয়া হতে পারে। কোনো ব্যক্তির ব্যক্তিগত তথ্য, যার মাধ্যমে তার ক্ষতি করা সম্ভব হতে পারে, সেই ধরনের তথ্য শেয়ার করার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকছে নতুন কৌশলে। ফরাসি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দারমানিন 'লা ফিগারো' পত্রিকাকে বুধবার বলেন, 'আমাদের শিশুদের ইসলামিস্টদের থাবা থেকে বাঁচাতে হবে।' উলেস্নখ্য, প্রস্তাবিত খসড়া আইনটি নিয়ে আগামী ৯ ডিসেম্বর ফরাসি মন্ত্রিসভায় আলোচনা হবে। চলতি বছরের শুরুর দিকে প্রেসিডেন্ট ম্যাখোঁ ইসলামকে 'সংকটাপন্ন' ধর্ম হিসেবে বর্ণনা করেন এবং ম্যাগাজিনগুলোর ইসলামের নবীকে নিয়ে কার্টুন প্রকাশের অধিকার রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন। ওই মন্তব্যগুলো করার পর থেকেই ফরাসি প্রেসিডেন্ট মুসলমান-প্রধান অনেক দেশে ঘৃণার পাত্রে পরিণত হন। অনেক জায়গাতেই বিক্ষোভকারীরা ফরাসি পণ্য বয়কট করার ডাক দেয়। উলেস্নখ্য, ইসলাম ধর্মে নবীকে চিত্রায়ন নিষিদ্ধ হিসেবে গণ্য করা হয় এবং অনেক মুসলমানই এটিকে অত্যন্ত অপমানজনক হিসেবে মনে করেন। ফ্রান্সে জাতীয় পরিচয়ের কেন্দ্রে রয়েছে রাষ্ট্রীয় ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি। স্কুল-সহ অন্যান্য জনসমাগমস্থলে বাকস্বাধীনতার বিষয়টি এরই একটি অংশ। একে ক্ষুণ্ন করে কোনো একটি ধর্মীয় অনুভূতিকে সুরক্ষার চেষ্টা করাকে ফ্রান্সের জাতীয় ঐক্যের পরিপন্থী হিসেবে মনে করা হয়। প্রসঙ্গত, পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় মুসলমান বাস করে ফ্রান্সে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে