রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১
ইসরাইলি আগ্রাসন

গাজার রাফাহতে হামলার প্রস্তুতি চলছে

খান ইউনিসে শত শত তাঁবু স্থাপন করেছে ইসরাইলি বাহিনী জীবন্ত কবর দেওয়া হয় ২০ জনকে
যাযাদি ডেস্ক
  ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার রাফাহতে স্থল হামলা শুরু না হলেও লাগাতার বিমান হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল। বৃহস্পতিবার তাদের বিমান হামলায় ধ্বংস হয় একটি ভবন -রয়টার্স অনলাইন

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার শেষ নিরাপদস্থল রাফাহতে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরাইল। হামলার আগে রাফাহর বাসিন্দাদের সরিয়ে নিতে খান ইউনিসে শত শত তাঁবু স্থাপন করেছে তারা। বলা হচ্ছে, রাফা থেকে বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে হামাসের অবস্থানগুলোতে হামলা চালাতে অগ্রসর হচ্ছে ইসরাইলের সামরিক বাহিনী। বুধবার ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা একথা জানিয়েছেন। তথ্যসূত্র : রয়টার্স, আল-জাজিরা, বিবিসি, এএফপি

মিসরের সীমান্ত সংলগ্ন রাফাহ শহরে গাজার বাকি অংশ থেকে পালিয়ে আসা ১০ লাখের বেশি ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়ে আছেন। সেখানে ইসরাইলি বাহিনী হামলা চালালে মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হবে বলে সতর্ক করেছে বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা।

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সরকারের এক মুখপাত্র জানান, ইসরাইল 'স্থল অভিযান' চালানোর জন্য এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কোনো সময়সূচি উলেস্নখ করেননি তিনি। ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর ওই কর্মকর্তা জানান, হামলা চালানোর আগে বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে নিয়ে রাখার জন্য ইসরাইলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ৪০ হাজার তাঁবু কিনেছে, এর প্রতিটিতে ১০ থেকে ১২ জন থাকতে পারবে।

অনলাইনে ছড়ানো ভিডিওগুলোতে দেখা গেছে, রাফাহ থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে খান ইউনিস শহরে বর্গাকার সাদা তাঁবুর সারি। তবে এই ভিডিওগুলোর সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কিন্তু স্যাটেলাইট কোম্পানি 'ম্যাক্সার টেকনোলজিস' থেকে পাওয়া ছবিগুলো পর্যলোচনা করে দেখা গেছে, খান ইউনিসের তাঁবুর ওই শিবিরটির এলাকাটি কয়েক সপ্তাহ আগেও খালি ছিল।

ইসরাইল সরকারের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রাফাহর বেসামরিক নাগরিকদের স্থানান্তর অনুমোদনের জন্য নেতানিয়াহুর যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে বৈঠকে বসার পরিকল্পনা করেছে আর এক মাসের মধ্যেই স্থানান্তর শুরু হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নাম না প্রকাশ করার অনুরোধ জানানো ওই প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা জানান, সামরিক বাহিনী এখনই অভিযান শুরু করে দিতে পারত, কিন্তু তারা নেতানিয়াহুর সবুজ সংকেতের অপেক্ষায় আছে।

গাজায় ছয় মাস ধরে চলা ইসরাইলি হামলার মুখে বহু ফিলিস্তিনি অন্য স্থান থেকে পালিয়ে রাফাহতে এসে আশ্রয় নিয়ে আছেন। আগে রাফাহকে 'নিরাপদ' শহর হিসেবে ঘোষণা করেছিল ইসরাইল। এখন এই শহরটিও তাদের আক্রমণের লক্ষ্য হওয়ায় ওই ফিলিস্তিনিরা আবার পালাতে হতে পারে আশঙ্কায় আতঙ্কিত হয়ে আছেন।

রাফাহর এক স্কুলের অস্থায়ী শিবিরে আশ্রয় নিয়ে থাকা আয়া (৩০) বলেন, 'রাফাহ ছাড়তে হবে কি-না সেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমাকে, কারণ হঠাৎ করেই আক্রমণ শুরু হয়ে যেতে পারে আর তখন পালানোর সময়ও পাব না ভেবে আতঙ্কে আছি আমি ও আমার মা।' তিনি জানান, সম্প্রতি কিছু পরিবার রাফাহ ছেড়ে উপকূলের কাছে আল-মাওয়াসি গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল, কিন্তু কাছেই ট্যাংকের গোলা পড়ার পর তাদের তাঁবুতে আগুন ধরে যায়। তিনি বলেন, 'আমরা যাব কোথায়?'

হামাসকে নির্মূল করার লক্ষ্য অর্জনে রাফাহতে অভিযান জরুরি বলে জানিয়েছেন ইসরাইলি কর্মকর্তারা। আমেরিকা, জাতিসংঘ এবং অন্যরা স্থল আক্রমণ সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা বলছে, রাফাহতে মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে এই আক্রমণ। ইসরাইলের আদেশে অন্যান্য জায়গা থেকে সরিয়ে দেওয়ায় এবং লড়াইয়ের জায়গা থেকে পালিয়ে গাজার অর্ধেকের বেশি জনসংখ্যা এখানে আশ্রয় নিয়েছে।

গাজায় ২০ জনকে জীবন্ত কবর দেওয়া হয়

গাজার খান ইউনিসের নাসের হাসপাতাল এবং গাজা সিটির আল-শিফা হাসপাতালের পাশে গণকবরের সন্ধান মিলেছে। গণকবর থেকে এখন একের পর এক মরদেহ বের করা হচ্ছে। যেগুলোর বেশির ভাগই বিকৃত হয়ে গেছে। যখন এসব গণকবর থেকে বেরিয়ে আসছে সাধারণ ফিলিস্তিনিদের মরদেহ, ঠিক তখনই সামনে এলো রোমহর্ষক ঘটনা। ফিলিস্তিন সিভিল ডিফেন্সের সদস্য মোহাম্মদ মুঘাইয়ের জানিয়েছেন, এসব গণকবরে পাওয়া মরদেহের অন্তত ২০ জনকে জীবিত অবস্থায় কবর দেওয়ার আলামত পেয়েছেন তারা।

তিনি বলেছেন, '১০টি মরদেহের হাত বাধা ছিল। অন্যদের শরীরে মেডিকেল টিউব সংযুক্ত ছিল। বিষয়টি নির্দেশ করছে- তাদের খুব সম্ভবত জীবিত অবস্থায় কবর দেওয়া হয়েছে।' সিভেল ডিফেন্সের এই সদস্য আরও বলেছেন, 'যে ২০ জনকে জীবন্ত কবর দেওয়া হয়েছে বলে আমরা ধারণা করছি, তাদের মরদেহ ফরেনসিক পরীক্ষা করতে হবে।'

খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালের গণকবর থেকে শিশুদের মরদেহও উদ্ধার করা হয়েছে। মোহাম্মদ মুঘাইয়ের শিশুদের বিকৃত মরদেহের ছবি প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, কেন শিশুরা গণকবরে? এসব প্রমাণ নির্দেশ করছে, ইসরাইলি সেনারা মানবতা-বিরোধী অপরাধ করেছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে