শনিবার, ১০ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২
গাজায় আগ্রাসন

ইসরাইলের জয় নিয়ে সন্দিহান আমেরিকা

গাজার নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে হামলায় শিশুসহ নিহত ১৪ প্রাণ বাঁচাতে ছুটছেন রাফাহতে আশ্রয় নেওয়া ফিলিস্তিনিরা
যাযাদি ডেস্ক
  ১৫ মে ২০২৪, ০০:০০
ইসরাইলের জয় নিয়ে সন্দিহান আমেরিকা
মধ্য গাজার নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে বিমান হামলায় একটি ভবন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। হামলার পর সেই ধ্বংসস্তূপ থেকে এক শিশুর মরদেহ উদ্ধার করে উদ্ধারকারীরা। ছবিটি মঙ্গলবার তোলা -রয়টার্স অনলাইন

হামাসকে নির্মূলের লক্ষ্যে সাত মাস আগে গাজায় আগ্রাসন শুরু করলেও ইসরাইল 'সম্পূর্ণ বিজয়' অর্জন করতে পারবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে খোদ বাইডেন প্রশাসনেই। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে, গাজায় বিজয়ের তত্ত্ব কী, তা বুঝতেও কার্যত সংগ্রাম করছে ওয়াশিংটন। তথ্যসূত্র : রয়টার্স, এএফপি, আল-জাজিরা

যদিও মার্কিন কর্মকর্তারা ইসরাইলকে যুদ্ধ-পরবর্তী গাজা শাসনের জন্য একটি স্পষ্ট পরিকল্পনা তৈরিতে সাহায্য করার আহ্বান জানিয়েছেন। মার্কিন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী কার্ট ক্যাম্পবেল সোমবার জানিয়েছেন, বাইডেন প্রশাসন তথা শীর্ষস্থানীয় কোনো মার্কিন কর্মকর্তার কাছ থেকে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে পরিষ্কার স্বীকারোক্তি, ইসরাইলের বর্তমান সামরিক কৌশল এমন ফল আনবে না, যে লক্ষ্যে তারা লড়াই করছে।

আমেরিকার মিয়ামিতে 'ন্যাটো ইয়ুথ সামিটে' ক্যাম্পবেল বলেন, 'কিছু ক্ষেত্রে, আমরা বিজয়ের তত্ত্ব কী তা নিয়ে সংগ্রাম করছি। কখনো কখনো আমরা যখন ইসরাইলি নেতাদের কাছ থেকে শুনি, তারা বেশিরভাগ সময়ই...যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যাপক বিজয়, সম্পূর্ণ বিজয়ের ধারণা সম্পর্কে কথা বলেন।' তিনি বলেন, 'তবে আমি মনে করি না... আমরা বিশ্বাস করি, তেমন কিছুর (সম্পূর্ণ বিজয় অর্জন) সম্ভাবনা আছে বা তেমন কোনো কিছু সম্ভব। এবং এটি অনেকটা সেই পরিস্থিতির মতোই দেখায়, যেখানে আমরা ৯/১১-এর পর আফগানিস্তান ও ইরাকে নিজেদের পেয়েছি।'

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বারবার হামাসের বিরুদ্ধে 'সম্পূর্ণ বিজয়' অর্জনের প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছেন। তবে গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের নিরলস হামলায় ৩৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। বর্বর ইসরাইলি আগ্রাসনে ঘনবসতিপূর্ণ ক্ষুদ্র এই ভূখন্ডটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এ ছাড়া ক্যাম্পবেল এমন এক সময় এই মন্তব্য করলেন, যখন গাজা উপত্যকার দক্ষিণতম শহর রাফাহতে বড় ধরনের কোনো সামরিক আক্রমণ না করার জন্য ইসরাইলকে সতর্ক করছে ওয়াশিংটন। মূলত ইসরাইলি হামলায় এরই মধ্যে বাস্তুচু্যত হওয়া ১০ লাখের বেশি মানুষ এই শহরে আশ্রয় নিয়েছেন।

১১ সেপ্টেম্বরের হামলার পর আমেরিকা আফগানিস্তান এবং ইরাকে আক্রমণের পর যে পুনরাবৃত্তিমূলক বিদ্রোহের মুখোমুখি হয়েছিল, গাজার পরিস্থিতির সঙ্গে সেটির তুলনা করে ক্যাম্পবেল বলেন, এ ধরনের সংকটের রাজনৈতিক সমাধান প্রয়োজন। তিনি বলেন, 'আমি মনে করি, রাজনৈতিক সমাধানের প্রচেষ্টা আরও বেশি হওয়া উচিত...অনেক দেশ এমন একটি রাজনৈতিক সমাধানের দিকে অগ্রসর হতে চায়, যেখানে ফিলিস্তিনিদের অধিকারকে আরও সম্মান করা হবে।' তিনি আরও বলেন, 'আমি মনে করি না, এটি বর্তমান সময়ের চেয়ে বেশি কঠিন হয়ে গেছে।'

গাজার নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে

হামলায় শিশুসহ নিহত ১৪

গাজার মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরের একটি বাড়িতে মঙ্গলবার বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। এতে শিশুসহ কমপক্ষে ১৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। গাজায় বেসামরিকদের, বিশেষ করে শিশুদের নির্বিচারে হত্যা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের এক কর্মকর্তা।

এদিকে, রাফাহতে জাতিসংঘের একটি গাড়িতে ইসরাইলি বাহিনীর গুলিতে জাতিসংঘের এক কর্মী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘের প্রধান অ্যান্তোনিও গুতেরেস। একই সঙ্গে তিনি এ ঘটনার পূর্ণ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গত ৭ অক্টোবরের পর থেকে এ পর্যন্ত ১৯০ জন জাতিসংঘের ত্রাণকর্মী নিহত হয়েছেন।

এদিকে, আমেরিকাভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইট ওয়াচ (এইচআরডাবিস্নউ) এক প্রতিবেদনে বলেছে, ইসরাইল গাজায় ত্রাণকর্মীদের পরিকল্পিতভাবে হত্যা করছে। মানবাধিকার সংস্থাটি বলছে, গত বছরের অক্টোবর থেকে গাজায় অব্যাহতভাবে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এ পর্যন্ত কমপক্ষে আটবার গাজায় ত্রাণ বহর ও ত্রাণকর্মীদের বর্বর হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। সম্প্রতি এসব হামলায় কমপক্ষে ৩১ ত্রাণকর্মী এবং তাদের সহযোগী প্রাণ হারিয়েছেন। এইচআরডাবিস্নউর প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। মঙ্গলবার মানবাধিকার সংস্থাটি এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, গাজায় শুধু ত্রাণকর্মীদের ওপরই নয়, ত্রাণের গুদামেও হামলা চালিয়েছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইসরাইলের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের যে অভিযোগ উঠেছে- এইচআরডাবিস্নউ'র এই প্রতিবেদন তাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এইচআরডাবিস্নউর প্রতিবেদনে আরও উলেস্নখ করা হয়েছে, কোনো এলাকায় সামরিক অভিযান চালানোর আগে সেখানকার ত্রাণকর্মীদের বিষয়টি অবহিত করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও গাজায় ইসরাইল তা মানছে না।

নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ফিলিস্তিনিরা

ফিলিস্তিনিদের শেষ আশ্রয়স্থল ছিল রাফাহ শহরে ইসরাইল হামলা শুরু করায় প্রাণভয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যাচ্ছেন আশ্রয় নেওয়া ফিলিস্তিনিরা। কিন্তু কোথাও মিলছে না নিরাপদ আশ্রয়স্থল। রাফাহর এক বাসিন্দা বলেন, 'আমরা প্রতিদিনই নিরাপত্তার খোঁজে এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় যাচ্ছি। এভাবে কতদিন ভাগ্য আমাদের সহায় হবে আর আমরা প্রাণে বেঁচে থাকব কে জানে!' এক নারী বলেন, 'হামলার সময় আমরা একটি স্কুলে আশ্রয় নিয়েছিলাম। বোমার আঘাতে স্কুল ভবনটির ছাদ আমাদের মাথার ওপর ধসে পড়ে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে