ভারতে গত লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে দফায় দফায় সভা করেও পরে আম আদমি পার্টি (আপ) একসঙ্গে ভোট করেনি। কিন্তু এবার প্রেক্ষাপট ভিন্ন, তাই জেল থেকে জামিনে বের হয়েই কংগ্রেসের নির্বাচনী প্রচারণায় নেমে পড়েছেন দিলিস্নর মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। মূলত কংগ্রেসের দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করে দিলিস্নতে ক্ষমতায় এসেছিলেন কেজরিওয়াল। বুধবার সেই অরবিন্দ কেজরিওয়াল দিলিস্নর চাঁদনি চক আসনে কংগ্রেস প্রার্থী জেপি আগরওয়ালের সমর্থনে প্রচারে নামেন। তথ্যসূত্র : এবিপি নিউজ, ইনডিয়ান এক্সপ্রেস
বিজেপি বলছে, সততার কথা বলে ক্ষমতায় আসা কেজরিওয়াল এখন 'দুর্নীতিগ্রস্ত' ইনডিয়া জোটকে আঁকড়ে বাঁচতে চাইছেন। পাশাপাশি প্রচারে নামার জন্য সুপ্রিম কোর্টের কেজরিওয়ালের জামিনকে 'স্পেশাল ট্রিটমেন্ট' বা বিশেষ সুবিধা হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিজেপির শীর্ষ নেতা অমিত শাহ।
দুর্নীতি মামলায় গত শুক্রবার অন্তর্র্বর্তী জামিনে মুক্তি পেয়েছেন কেজরিওয়াল। মঙ্গলবার পাঞ্জাবের পর বুধবার প্রথমবার দিলিস্নতে কংগ্রেস প্রার্থীর হয়ে প্রচারে নামেন তিনি।
দিলিস্নতে গত ১০ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকলেও, গত দুটি লোকসভায় রাজধানীতে একটি আসনেও জিততে পারেনি কেজরিওয়ালের দল আম আদমি পার্টি। এ যাত্রায় কংগ্রেসের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি করে লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুই দল। বুধবার চাঁদনি চক লোকসভা কেন্দ্রে গিয়ে কেজরিওয়াল বলেন, 'আপনারা যদি পদ্ম প্রতীকে ভোট দেন, তা হলে আমাকে ফের জেলে যেতে হবে। আর কংগ্রেসকে ভোট দিলে আমায় জেলে যেতে হবে না।'
আগামী ১ জুন পর্যন্ত অন্তর্র্বর্তী জামিন পেয়েছেন কেজরিওয়াল। একজন রাজনীতিক হিসেবে কেন তাকে প্রচারের জন্য বাড়তি সুবিধা দিল সুপ্রিম কোর্ট, তা নিয়ে ঘরোয়াভাবে নিজেদের অসন্তোষ চাপা রাখেননি বিজেপি নেতৃত্ব। বুধবার একটি সংবাদমাধ্যমে কেজরিওয়ালের জামিন প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে অমিত শাহ বলেন, সুপ্রিম কোর্টের নিজেদের মতো করে আইন ব্যাখ্যা করার ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু আমি মনে করি, এটি কোনো সাধারণ বা দৈনন্দিন রায় নয়। দেশের অনেকেই মনে করছেন, কেজরিওয়ালকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছে।' বিজেপি নেতারা প্রশ্ন তুলেছেন, স্রেফ ভোটে প্রচার করবেন বলে এভাবে বাড়তি সুবিধা কি আদৌ পেতে পারেন কোনো রাজনীতিক? আর রাজনীতিকরা যদি সেই সুবিধা পান, তা হলে আমজনতা কেন পাবে না?
কেজরিওয়াল জেল থেকে বেরিয়েই দাবি করেছিলেন, যদি বিজেপি ৪ জুন লোকসভা নির্বাচনে হেরে যায়, তা হলে তিনি মুক্তি পেয়ে যাবেন। কেজরিওয়ালের ওই মন্তব্য আদালতের অবমাননা বলে মন্তব্য করেছেন অমিত শাহ। তিনি বলেন, কেজরিওয়াল বোঝাতে চেয়েছেন, তিনি দোষী হলেও যদি ভোটে জিতে যান, তা হলে সুপ্রিম কোর্ট তাকে জেলে পাঠাবে না। যে বিচারপতিরা কেজরিওয়ালকে জামিন দিয়েছিলেন, তাদের এখন ভাবা উচিত, কীভাবে তাদের রায়ের অপব্যবহার করা হচ্ছে।
কেজরিকে খাতির করা হয়নি : সুপ্রিম কোর্ট
এদিকে, বৃহস্পতিবার আবগারি মামলার শুনানি ছিল সুপ্রিম কোর্টে। সেই শুনানি চলাকালীনই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের মন্তব্য নিয়ে পাল্টা প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন দুই বিচারপতি অভয় এস ওকা এবং উজ্জ্বল ভুঁইয়া। তাদের কথায়, 'আলাদা করে কাউকে কোনো সুবিধা দেওয়া হয়নি। আমাদের যা ঠিক বলে মনে হয়েছিল, সে রকমই রায় দেওয়া হয়েছে।' তাদের মতে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মুখে এ কথা অত্যন্ত আপত্তিকর।