মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২
গাজায় আগ্রাসন

মার্কিন অস্ত্রে সয়লাব ইসরাইল

কিছুদিন আগ পর্যন্ত অন্তত ১৪ হাজার এমকে-৮৪ বোমা দিয়েছে বাইডেন প্রশাসন
যাযাদি ডেস্ক
  ৩০ জুন ২০২৪, ০০:০০
মার্কিন অস্ত্রে সয়লাব ইসরাইল

গাজায় হামাস নিধনের নামে সাধারণ মানুষকে হত্যায় ইসরাইলকে অস্ত্রে সয়লাব করে দিয়েছে আমেরিকা। বাইডেন প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আমেরিকা বিপুল পরিমাণ সামরিক রসদ ইসরাইলকে দিয়েছে। হালনাগাদ তথ্যের ভিত্তিতে তিনি জানিয়েছেন, গত অক্টোবরে গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে কিছু দিন আগ পর্যন্ত অন্তত ১৪ হাজার এমকে-৮৪ বোমা দিয়েছে। ২০০০ পাউন্ডের এসব বোমাকে অত্যাধিক ধ্বংসাত্মক বলে বিবেচনা করা হয়। তথ্যসূত্র : রয়টার্স

আমেরিকার সরবরাহ করা অস্ত্রের তালিকায় আছে- সাড়ে ছয় হাজার ৫০০ পাউন্ড বোমা, তিন হাজার হেলফায়ার প্রিসিশন গাইডেড এয়ার-টু-গ্রাউন্ড ক্ষেপণাস্ত্র, এক হাজার বাঙ্কার-বস্নাস্টার বোমা, ছোট ব্যাসের এয়ার-ড্রপড দুই হাজার ৬০০ বোমা এবং অন্যান্য যুদ্ধাস্ত্র। ওই কর্মকর্তারা নিজের নাম প্রকাশ করতে চাননি।

অস্ত্রের চালান পাঠানোর সময় সম্পর্কে তারা স্পষ্ট ধারণা না দিলেও মোট অস্ত্রের পরিমাণ দেখে বোঝাই যায়, আমেরিকা তার মিত্রকে অস্ত্র সরবরাহ তেমন কমায়নি। অর্থাৎ, অস্ত্র সরবরাহ সীমিত করার আন্তর্জাতিক আহ্বান এবং শক্তিশালী বোমা না পাঠাতে আমেরিকা সম্প্রতি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা বাস্তবে প্রতিফলিত হয়নি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গাজায় গত আট মাসের অভিযানে ব্যবহৃত অস্ত্রের সরবরাহ পূরণ করতে যা প্রয়োজন, এর সঙ্গে মার্কিন অস্ত্রের চালান সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে হচ্ছে। 'সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ'র অস্ত্র বিশেষজ্ঞ টম কারাকো বলেন, 'যদিও এই সংখ্যক (অস্ত্র) একটি বড় সংঘাতে তুলনামূলকভাবে কম সময় খরচ হতে পারে, তবে এই তালিকা আমাদের ইসরাইলি মিত্রদের ওপর আমেরিকার সমর্থনের স্পষ্ট প্রতিফলন দেখাচ্ছে।'

হামাস বা হিজবুলস্নাহর সঙ্গে সংঘাতে ইসরাইল যাতে ব্যবহার করতে পারে- এমন অস্ত্রই তালিকায় দেখা যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ইসরাইলে পাঠানো সামরিক রসদের এত বিস্তৃত ও হালনাগাদ তথ্য এর আগে প্রকাশ হয়নি। গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরাইল এবং ইরান সমর্থিত হিজবুলস্নাহর মধ্যে গোলাগুলি চলে আসছে। যে কোনো সময় তাদের মধ্যে যুদ্ধ বাধতে পারে বলেও উদ্বেগ আছে।

অস্ত্র সরবরাহের বিষয়ে হোয়াইট হাউস কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। ওয়াশিংটনে ইসরাইলি দূতাবাসের বক্তব্য জানার চেষ্টা করা হলেও তাৎক্ষণিকভাবে তারা সাড়া দেয়নি।

এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর অস্ত্রের বড় তালিকার অংশ হিসেবে এসব চালান পাঠানো হয়েছে। বাইডেন প্রশাসনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, ৭ অক্টোবরের পর থেকে ইসরাইলকে ৬৫০ কোটি ডলারের নিরাপত্তা সহায়তা দিয়েছে ওয়াশিংটন।

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে দাবি করেছেন, ওয়াশিংটন অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ রেখেছে। যদিও মার্কিন কর্মকর্তারা কিছু 'বাধা'র কথা স্বীকার করলেও নেতানিয়াহুর দাবি অস্বীকার করেছেন।

গাজার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে- এমন আশঙ্কায় দুই হাজার পাউন্ড বোমার একটি চালান পাঠানোর উদ্যোগ থামিয়ে দিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। তবে মার্কিন কর্মকর্তারা জোর দিয়েই বলেছেন, অন্যান্য অস্ত্র সরবরাহ স্বাভাবিকই থাকবে। দুই হাজার পাউন্ডের একটি বোমা কংক্রিট ও ধাতব ভেদ করতে পারে, সৃষ্টি করতে পারে বিস্তৃত ব্যাসার্ধের বিস্ফোরণ।

রাফাহতে সামরিক অভিযান নিয়ে উদ্বেগের কারণে বোমার যে চালান পাঠানোর উদ্যোগ গত মে মাসে স্থগিত করা হয়, সেই সিদ্ধান্ত পাল্টাতে ইসরাইলের সঙ্গে আলোচনা করছে আমেরিকা। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, যুদ্ধে ফিলিস্তিনি নিহতের সংখ্যা ৩৭ হাজার ছাড়িয়ে যাওয়ায় এবং ওই ভূখন্ড ধ্বংসস্তূপে পরিণত করায় ইসরাইলের সামরিক অভিযান নিয়ে আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি আরও জোরাল হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে