লেবাননের সশস্ত্র ইসলামি গোষ্ঠী হিজবুলস্নাহকে আর সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করা হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে আরব বিশ্বের দেশগুলোর জোট আরব লিগ। শনিবার আরব লিগের সহকারী মহাসচিব ও মিসরীয় কূটনীতিক হোসাম জাকি প্রতিরোধ গোষ্ঠী হিজবুলস্নাহর সংসদীয় উপদলের নেতা মোহাম্মদ রাদের সঙ্গে বৈরুতে এক বৈঠকের পর ওই ঘোষণা দিয়েছেন। তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা, রয়টার্স, এএফপি
আরবি ভাষার সংবাদমাধ্যম 'আল-আখবার'কে তিনি বলেন, হিজবুলস্নাহ গোষ্ঠীর ওপর থেকে সন্ত্রাসী তকমা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আরব লিগ। কারণ এই গোষ্ঠীটি বর্তমান রাজনীতি ও লেবাননের ভবিষ্যতের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
হিজবুলস্নাহকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর তালিকা থেকে আরব বিশ্বের বাদ দেওয়ার এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে পশ্চিমা গণমাধ্যম এখনো নীরব রয়েছে। আল-আখবার বলেছে, ২০১৬ সালের পর আরব লিগের সহকারী মহাসচিব জাকির সঙ্গে হিজবুলস্নাহর নেতা রাদ প্রথমবারের মতো বৈঠক করেন। ওই বছর সৌদি আরবের উদ্যোগে শিয়া মতাবলম্বী গোষ্ঠীটিকে 'সন্ত্রাসী সংগঠন' হিসেবে ঘোষণা দেয় আরব লিগ। একই সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যে ইরানি প্রভাব বিস্তারের পাশাপাশি ইরাক, ইয়েমেন, লেবানন, সিরিয়া ও আরব উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের জন্য হিজবুলস্নাহকে দায়ী করা হয়েছিল।
বৈরুতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মিসরীয় ওই কূটনীতিক বলেছেন, আরব লিগের মহাসচিব আহমেদ আবুল ঘেইতের পক্ষে লেবানন ও এর জনগণের প্রতি এই অঞ্চলের সম্প্রদায়গুলোর সংহতি প্রকাশের লক্ষ্যে তিনি বৈরুত সফর করছেন। আরব লীগের সহকারী মহাসচিব বলেন, দক্ষিণে সামরিক উত্তেজনা বৃদ্ধি কেবল লেবাননেই নয়, বরং পুরো মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য গুরুতর চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। বিশেষ করে সংঘাত যদি ছড়িয়ে পড়ে, তখন সেটি মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে পড়বে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে মিসরীয় এই কূটনীতিক জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবনা ১৭০১ মেনে চলার জন্য সব পক্ষের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে গাজা উপত্যকায় যুদ্ধের অবসানের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে; যা দক্ষিণ লেবাননে সংঘাত বন্ধ করবে।
২০১৬ সালের ১১ মার্চ হিজবুলস্নাহকে 'সন্ত্রাসী সংগঠন' হিসেবে তালিকাভুক্ত করে আরব লিগ। ইসরাইলের ইহুদিবাদী শাসকের মিত্র পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর চাপের ফলে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। ইসরাইলের জায়নবাদী শাসক গোষ্ঠীর মোকাবিলায় এবং গাজায় গণহত্যা বন্ধে ফিলিস্তিনেদের পাশে দাঁড়িয়ে হিজবুলস্নাহ যেভাবে লড়ে যাচ্ছে, তা আরব দেশগুলোর জনগণের মাঝে ব্যাপক ইতিবাচক সাড়া ফেলেছে। এটিই হয়তো আরব লিগের দেশগুলোকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর তালিকা থেকে হিজবুলস্নাহকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে উদ্বুদ্ধ করেছে।
সাত দেশের নাগরিকদের লেবানন ছাড়ার নির্দেশ
মধ্যপ্রাচ্যে শুরু হয়েছে নতুন আরেক যুদ্ধের দামামা। টানা প্রায় ৯ মাস ধরে ফিলিস্তিনের গাজা ভূখন্ডে আগ্রাসন চালাচ্ছে ইসরাইল। আর এই আগ্রাসনের শুরু থেকেই লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুলস্নাহ ও ইসরাইলের মধ্যে উত্তেজনা চলছে। সম্প্রতি সেই উত্তেজনা চরম আকার নিয়েছে। হিজবুলস্নাহ ও ইসরাইলের মধ্যকার এই উত্তেজনার মধ্যেই সাতটি দেশ তাদের নাগরিকদের লেবানন ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে। এর মধ্যে লেবাননে অবস্থানরত সৌদি নাগরিকদের অবিলম্বে দেশটি ছাড়তে বলা হয়েছে।
ইসরাইল এবং লেবাননের সশস্ত্র গ্রম্নপ হিজবুলস্নাহর মধ্যে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের ক্রমবর্ধমান আশঙ্কার মধ্যে সাতটি দেশ তাদের নাগরিকদের লেবানন ছেড়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। এছাড়া আরও পাঁচটি দেশ তাদের নাগরিকদের এই সময়ে লেবাননে ভ্রমণ থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছে।
বৈরুতের সৌদি দূতাবাস শনিবার লেবাননে অবস্থানরত তার নাগরিকদের 'অবিলম্বে লেবানিজ ভূখন্ড ত্যাগ করার' আহ্বান জানিয়েছে এবং 'যে কোনো জরুরি পরিস্থিতিতে তাদের দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার' প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছে।
অন্যদিকে, গত শুক্রবার অত্যন্ত অস্থিতিশীল নিরাপত্তা পরিস্থিতির কথা উলেস্নখ করে অস্ট্রেলিয়া তার নাগরিকদের লেবাননে ভ্রমণ না করতে 'দৃঢ়ভাবে পরামর্শ' দিয়েছে। অস্ট্রেলীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং লেবাননে অবস্থানরত অস্ট্রেলিয়ানদের অবিলম্বে দেশটি ছেড়ে চলে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।