মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২
ভোটারের উপস্থিতি কম

ইরানে দ্বিতীয় দফা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ

কঠোর ইসলামী শাসন, ব্যাপক অর্থনৈতিক চাপ এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক স্বাধীনতার অভাবের কারণে জনগণের মধ্যে ভোট দেওয়ার আগ্রহ কমছে
যাযাদি ডেস্ক
  ০৬ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
ইরানে দ্বিতীয় দফা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ
ইরানে দ্বিতীয় দফা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ

মধ্যপ্রাচ্যের শিয়া মুসলিম অধু্যষিত দেশ ইরানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দ্বিতীয় দফা ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। এদিনের ভোটে মধ্যপন্থি আইনপ্রণেতা মাসুদ পেজেশকিয়ান ও কট্টরপন্থি সাবেক পারমাণবিক আলোচক সাইদ জালিলির মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে। উভয়েই দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুলস্নাহ আলি খামেনির (৮৫) ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। তথ্যসূত্র : রয়টার্স, এএফপি

শুক্রবার স্থানীয় সময় সকাল ৮টা থেকে দেশজুড়ে শুরু হয় ভোটগ্রহণ, চলে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। এরপর শুরু হয় ভোট গণনা, যার ফল পাওয়া যাবে আজ (শনিবার)। গত ২৮ জুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়েছিল। কিন্তু অধিকাংশ ভোটার ভোট না দেওয়ায় সেই নির্বাচন বাতিল করে দেশটির নির্বাচন কমিশন। কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, শতকরা হিসেবে মোট ভোটারের ৬০ শতাংশের কম ভোটার ভোট দিয়েছিলেন সেদিন, যা ১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপস্নবের পর ইরানের ইতিহাসে যে কোনো প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সর্বনিম্ন। শুক্রবারও ভোটারের উপস্থিতি কম ছিল বলে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো জানিয়েছে। অথচ তেহরানের প্রত্যাশা ছিল, গতবারের চেয়ে এবার বেশি ভোট পড়বে ব্যালট বাক্সে।

উলেস্নখ্য, প্রথম দফায় নিজেদের ভোটাধিকার প্রদান করেন ২ কোটি ৪৫ লাখ ৩৫ হাজার ১৮৫ জন। শুক্রবার হাজার হাজার মোবাইল কেন্দ্রসহ সারাদেশে প্রায় ৫৯ হাজার ভোট কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হয়। পাশাপাশি ইরানি প্রবাসীরা যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন, সেজন্য বিদেশেও শত শত ভোট কেন্দ্র স্থাপন করা হয়।

শুক্রবার ভোট শুরুর পর এক ভিডিও বার্তায় দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা খামেনি বলেন, 'আমি শুনেছি যে, প্রথমবারের (২৮ জুন) তুলনায় আজ জনগণের মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনা বেশি। আলস্নাহর কাছে প্রার্থনা, শেষ পর্যন্ত যেন আমরা সন্তোষজনক সংবাদ পাই।'

কট্টর ইসলামপন্থি দেশ ইরানে গত বেশ কয়েক বছর ধরে ভোটারদের ভোট প্রদানের প্রবণতা হ্রাস পাচ্ছে। ২০২১ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দিয়েছিলেন ৪৮ শতাংশ ভোটার। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর পার্লামেন্ট নির্বাচন হয়েছিল, সেখানে ভোটার 'টার্নআউটের' হার ছিল আরও কম, মাত্র ৪১ শতাংশ।

ইরানের প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা অন্যান্য দেশের প্রেসিডেন্সিয়াল সরকারের মতো নয়। দেশটির ক্ষমতা কাঠামোর শীর্ষে অবস্থান করেন সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা। প্রেসিডেন্ট মূলত তার প্রধান সহকারী। তবে সর্বোচ্চ নেতার উত্তরাধিকারী বাছাই সম্পর্কিত যে রাষ্ট্রীয় কমিটি রয়েছে, পদাধিকার বলে সেটির সদস্য প্রেসিডেন্ট।

রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, কঠোর ইসলামী শাসন, ব্যাপক অর্থনৈতিক চাপ এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক স্বাধীনতার অভাবের কারণে সাধারণ জনগণের মধ্যে ভোট দেওয়ার আগ্রহ দিন দিন কমছে। তার ওপর ২০২২ সালে হিজাব ঠিকমতো না পরায় ইরানি-কুর্দি তরুণী মাশাহ আমিনির গ্রেপ্তার ও কারাগারে নির্যাতনের জেরে নিহত হওয়া এবং তার জেরে দেশজুড়ে সৃষ্ট বিক্ষোভকে নির্মমভাবে দমনের পর থেকে দেশের ভেতর ইরানের ইসলামপন্থি শাসকদের জনপ্রিয়তা আরও হ্রাস পেয়েছে।

১৯ বছর বয়সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সেপিদেহ বলেন, 'আমি ভোট দেব না। মূলত মাশাহ আমিনির ঘটনার জেরেই আমি এই ইসলামী প্রজাতন্ত্রকে 'না' বলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি একটি মুক্ত দেশ চাই, মুক্ত জীবন চাই।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে