মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২
ইসরাইলি আগ্রাসন

গাজা সিটির সব বাসিন্দাকে সরে যেতে বলল ইসরাইল

গাজার নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দিতে রাজি হামাস : ওয়াশিংটন পোস্ট
যাযাদি ডেস্ক
  ১২ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
গাজা সিটির সব বাসিন্দাকে সরে যেতে বলল ইসরাইল
ফিলিস্তিনের গাজার পূর্ব অংশে আগ্রাসনের পর ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহার করা হলে যেদিকেই চোখ যায়, শুধু দেখা মেলে ধ্বংসস্তূপের। ছবিটি বুধবার শেজাইয়া এলাকা থেকে তোলা -রয়টার্স অনলাইন

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখন্ডের উত্তরে তীব্র অভিযানের মধ্যে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী গাজা সিটির সব বাসিন্দাকে মধ্য দক্ষিণাঞ্চলে সরে যেতে বলেছে। বুধবার বিমান থেকে লিফলেট ফেলে এই নির্দেশ দিয়েছে ইসরাইল। এসব লিফলেটে গাজাকে 'বিপজ্জনক যুদ্ধ অঞ্চল' হিসেবে বর্ণনা করে 'গাজা শহরের প্রত্যেককে' নির্দিষ্ট নিরাপদ রুটের মাধ্যমে এলাকা ছেড়ে যেতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ইসরাইলি বাহিনী দুটি রাস্তাও উলেস্নখ করেছে, যা দেইর আল-বালাহ এবং আল-জাওয়াইদাতে আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে গেছে। মূলত গাজা শহরে এখনো আড়াই লাখ ফিলিস্তিনি অবস্থান করছেন। তথ্যসূত্র : বিবিসি, ওয়াশিংটন পোস্ট

গাজার আল-আওদাহ নামের একটি বিদ্যালয়ে ইসরাইলি বিমান হামলার এক দিন পরই গাজা সিটি খালি করার নির্দেশ এলো। এই হামলায় অন্তত ৩০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৫৩ জন।

এদিকে, জাতিসংঘ বলেছে, ফিলিস্তিনিদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়ায় তারা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো গাজা সিটিকে সম্পূর্ণভাবে খালি করতে নির্দেশ দিলো ইসরাইল।

গত দুই সপ্তাহে ইসরাইলি বাহিনী কয়েকটি এলাকায় পুনরায় প্রবেশ করেছে। ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর বিশ্বাস, হামাস ও ইসলামিক জিহাদের যোদ্ধারা চলতি বছরের শুরু থেকে সেখানে পুনরায় সংগঠিত হয়েছে।

হামাস বলেছে, গাজা শহরে ইসরাইলের নতুন এসব কার্যকলাপ সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি এবং বন্দি মুক্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনাকে ব্যর্থ করার হুমকি দিচ্ছে। যুদ্ধবিরতি এবং বন্দি মুক্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা বুধবার কাতারে পুনরায় শুরু হয়েছে। আলোচনায় মিসর, আমেরিকা ও ইসরাইলের গোয়েন্দা প্রধানের পাশাপাশি কাতারের প্রধানমন্ত্রীও অংশ নিয়েছেন।

গাজার নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দিতে রাজি

হামাস : ওয়াশিংটন পোস্ট

ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ও দখলদার ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধবিরতির চুক্তির একটি কাঠামো তৈরি করা হয়েছে। আমেরিকার প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম 'ওয়াশিংটন পোস্ট' জানিয়েছে, চুক্তির এই কাঠামোতে রাজি হয়েছে উভয়পক্ষ। এখন চুক্তিটি কীভাবে কার্যকর করা হবে, সেটি নিয়ে আলোচনা করছে তারা।

সংবাদমাধ্যমটি আরও জানিয়েছে, চুক্তি অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপে গাজার নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দিতে রাজি হয়েছে হামাস। ওই সময় উপত্যকাটির নিয়ন্ত্রণ নিজেদের কাছে রাখবে না ইসরাইলও। এর বদলে গাজায় প্রতিষ্ঠিত হবে একটি অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার। আর এর নিয়ন্ত্রণে থাকবে ফিলিস্তিনি অথরিটির (পিএ) সমর্থিত বাহিনী।

মার্কিন এক কর্মকর্তার বরাতে ওয়াশিংটন পোস্টে মার্কিন সাংবাদিক ডেভিড ইগনাটিয়াস লিখেছেন, 'চুক্তির কাঠামোতে দুই পক্ষ সম্মত। কীভাবে এটি কার্যকর করা হবে, এ নিয়ে তারা আলোচনা করছেন।' তবে চুক্তির কাঠামো তৈরি হলেও চুক্তি যে এখনই হয়ে যাবে, এমন কিছু নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ওই কর্মকর্তা।

এই সাংবাদিক লিখেছেন, 'চুক্তির মূল প্রতিবন্ধক হলো দ্বিতীয় ধাপ। এই ধাপে হামাস ইসরাইলি পুরুষ সেনাদের মুক্তি দেবে এবং দুই পক্ষ একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে রাজি হবে। আর ইসরাইল তাদের সব সেনাকে গাজা থেকে প্রত্যাহার করে নেবে।' তিনি আরও জানিয়েছেন, আলোচনায় বড় যে বিষয়টি পরিলক্ষিত হয়েছে, সেটি হলো- হামাস ও ইসরাইল উভয়ই গাজায় 'অন্তর্বর্তীকালীন সরকার' প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে রাজি হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে। যেটি যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপে শুরু হবে। ওই সময় হামাস ও ইসরাইল কেউই গাজার নিয়ন্ত্রণে থাকবে না। তিনি আরও জানিয়েছেন, গাজার নিরাপত্তা দেবে আমেরিকার প্রশিক্ষিত বাহিনী। আর এতে সমর্থন দেবে মধ্যপন্থি আরব দেশগুলো। এই বাহিনীর সদস্যদের নেওয়া হবে ফিলিস্তিনি অথরিটির দুই হাজার ৫০০ শক্তিশালী সদস্যদের মধ্য থেকে। যাদের ব্যাপারে ইসরাইল জানে।

ওয়াশিংটন পোস্টকে মার্কিন এক কর্মকর্তা বলেছেন, হামাস মধ্যস্থতাকারী দেশগুলোকে জানিয়েছে, তারা অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের কাছে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে প্রস্তুত আছে।

২০০৭ সালে ফাতাহ সমর্থিত ফিলিস্তিনি অথরিটির কাছ থেকে ক্ষমতা দখল করে হামাস। এরপর থেকে গাজার নিয়ন্ত্রণ তাদের কাছেই রয়েছে। প্রায় দুই যুগ আগের ওই রক্তক্ষয়ী অভু্যত্থানের পর ফিলিস্তিনি অথরিটি ও হামাসের মধ্যে তীক্ত সম্পর্ক বিরাজ করছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুই পক্ষই চায় যুদ্ধ শেষ করতে। কারণ, এখন ইসরাইলের লক্ষ্য হলো, ওই অঞ্চলে ইরানপন্থি যেসব সশস্ত্র গোষ্ঠী আছে, তাদের মোকাবিলা করার প্রস্তুতি নেওয়া। অপরদিকে, হামাসের অস্ত্র ফুরিয়ে আসায় তারা চায়, যুদ্ধ বন্ধ হয়ে যাক।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে