ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনা থেকে মুছে ফেলা হোক 'সমাজতন্ত্র' এবং 'ধর্মনিরপেক্ষতা' শব্দ দুটি। শীর্ষ আদালতে এমন আবেদন করেছিলেন রাজ্যসভার সাবেক সদস্য সুব্রহ্মণ্যম স্বামী। তার এই আবেদনের শুনানি আগামী আগস্ট পর্যন্ত স্থগিত করে দিয়েছে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। সেই সঙ্গে শীর্ষ আদালত বৃহস্পতিবার স্পষ্ট করে দিয়েছে, ধর্মনিরপেক্ষতা ভারতের সংবিধানের মূল কাঠামোর অঙ্গ। তথ্যসূত্র : এবিপি নিউজ, ইনডিয়া টাইমস
সুব্রহ্মণ্যম স্বামীর পেশ করা এই আবেদন স্থগিত রাখার আগে বিচারপতি সঞ্জীব খান্না বলেন, 'ধর্মনিরপেক্ষ শব্দটি যে সংবিধানের মূল কাঠামোর অন্তর্গত, তা একাধিক রায়ে আগেই জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সমাজতান্ত্রিক শব্দের সম্ভবত আমরা নিজস্ব সংজ্ঞা তৈরি করেছি। শব্দের অভিধানগত অর্থ মেনে আমরা চলছি না।'
উলেস্নখ্য, ১৯৭৬ সালে সংবিধানের ৪২তম সংশোধনী হিসেবে ২(এ) ধারা অনুযায়ী প্রস্তাবনায় এই শব্দ দুটি যোগ করা হয়েছিল। তার আগে থেকেই অবশ্য ভারত সব ধর্মের মানুষকে সমানাধিকার দেওয়ার চল ছিল। সংবিধানে যুক্ত হওয়ার পর থেকেই ধর্মনিরপেক্ষতা এই দেশের মূল ভিত্তিতে পরিণত হয়েছে। কিন্তু সংবিধান গ্রহণের তারিখ (১৯৪৯ সালের ২৯ নভেম্বর) একই রাখা হয়েছিল। এই প্রক্রিয়া সঠিক কি-না, তা কেবল আইনচর্চার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ভেবে দেখতে এই মামলার সঙ্গে যুক্ত আইনজীবীদের বলেছে সুপ্রিম কোর্ট।
আবেদনে সুব্রহ্মণ্যম স্বামী জানিয়েছেন, এভাবে সংবিধানের প্রস্তাবনা বদল পার্লামেন্টের এক্তিয়ারের বাইরে। সংবিধানপ্রণেতারা কখনই গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় 'সমাজতান্ত্রিক' ও 'ধর্মনিরপেক্ষ' শব্দগুলো যোগ করতে চাননি। বি আর আম্বেডকরও এই শব্দ দুটি যোগ করার বিরোধী ছিলেন। কারণ, তিনি মনে করতেন সংবিধান নাগরিকদের ওপরে কয়েকটি রাজনৈতিক মতাদর্শ চাপিয়ে দিতে পারে না।
এই বিষয়ে আবেদন করেছেন আরও কয়েকজন আবেদনকারী। তাদের আবেদনের সঙ্গেই আগস্টে সুব্রহ্মণ্যম স্বামীর আবেদনের শুনানি হবে। তার আবেদনের বিরোধিতা করে একটি আবেদন পেশ করেছেন সিপিএম এমপি বিনয় বিশ্বমও। আবেদনে তার বক্তব্য, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতান্ত্রিক আদর্শ ভারতীয় সংবিধানের মূল বৈশিষ্ট্যের অঙ্গ। ফলে প্রস্তাবনায় ওই দুটি শব্দযোগ হওয়ায় সংবিধানের প্রকৃতি বদলায়নি।
'কেশবানন্দ ভারতী' মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী, সংবিধানের মূল কাঠামো পরিবর্তনের এক্তিয়ার পার্লামেন্টের নেই। কিন্তু তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন উপ-রাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়। শীর্ষ আদালতের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে পার্লামেন্টে আলোচনা হওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেছিলেন তিনি। পার্লামেন্টের সিদ্ধান্তে অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপের অধিকার থাকা উচিত কি-না, সেই প্রশ্ন তোলেন তিনি। জবাবে কংগ্রেস নেতা ও আইনজীবী পি. চিদাম্বরম বলেন, ধনখড়ের বক্তব্য ঠিক নয়। পার্লামেন্ট নয়, সংবিধানই সর্বোচ্চ। সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার যাতে সংবিধানের মূল নীতি বদলাতে না পারে, সে জন্যই মূল কাঠামোর নীতি তৈরি হয়েছে। বিরোধীদের দাবি, নানা পথে সরকার সংবিধান বদলাতে চাইছে।