শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ২৬ আশ্বিন ১৪৩১
নিহত ৪০ ফিলিস্তিনি

গাজার 'মানবিক অঞ্চল' ফের রক্তাক্ত

হামলার ভয়াবহতা দেখে হতবাক হয়ে যান অনেকে হামাসের সাময়িক যুদ্ধবিরতি সম্ভবের কথা বললেন ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী
যাযাদি ডেস্ক
  ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
ফিলিস্তিনের গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিসের আল-মাওয়াসি এলাকায় বাস্তুচু্যতদের একটি তাঁবু ক্যাম্পে মঙ্গলবার হামলা চালায় ইসরাইল। এতে ৪০ জন নিহত হন। অথচ এই এলাকাকে ইসরাইল 'নিরাপদ এলাকা' ঘোষণা করেছিল। হামলার পর ধ্বংসস্তূপের মধ্য দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে দুই শিশু -আল-জাজিরা অনলাইন

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখন্ডে বাস্তুচু্যতদের ক্যাম্পে আবারও হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। এতে অন্তত ৪০ জন নিহত হয়েছেন। হামলায় আহত হয়েছেন আরও অর্ধশতাধিক মানুষ। মঙ্গলবার গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় এলাকায় 'নিরাপদ এলাকা' বলে ঘোষিত বাস্তুচু্যতদের একটি তাঁবু ক্যাম্পে ইসরাইল হামলা চালালে হতাহতের এ ঘটনা ঘটে। তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা, বিবিসি, রয়টার্স

গাজার সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, মঙ্গলবার ভোরের আগে হওয়া এই হামলায় খান ইউনিসের আল-মাওয়াসি এলাকায় অন্তত ২০টি তাঁবুকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়। বাস্তুচু্যত ফিলিস্তিনিদের চাপে আল-মাওয়াসি কার্যত উপচে পড়ছে। মূলত ইসরাইলি সেনাবাহিনী খান ইউনিস এবং নিকটবর্তী রাফাহতে স্থল আক্রমণের সময় উপকূলীয় এই অঞ্চলটিকে 'নিরাপদ অঞ্চল' হিসেবে ঘোষণা করার পর থেকে আল-মাওয়াসির এই তাঁবু ক্যাম্পেই থাকতে বাধ্য হচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা।

জীবিতদের সন্ধানকারী উদ্ধারকারীরা বলেছেন, হামলার পর তারা তাঁবুর শিবিরে ৯ মিটার (৩০ ফুট) পর্যন্ত গভীর গর্ত খুঁজে পেয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা ওই এলাকায় বিশৃঙ্খল দৃশ্য বর্ণনা করেছেন। গাজার সিভিল ডিফেন্সের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ঘটনাস্থলের প্রাথমিক মূল্যায়নে যে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, তা হচ্ছে- আক্রমণটি 'এই উন্মত্ত যুদ্ধের সবচেয়ে জঘন্য গণহত্যাগুলোর একটি'। মুখপাত্র বলেন, হামলায় নিহত ব্যক্তিদের লাশ উদ্ধার করতে অ্যাম্বুলেন্স এবং সিভিল ডিফেন্স ক্রুদের সমস্যা হচ্ছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মধ্যরাতের পরপরই আল-মাওয়াসি এলাকায় বড় ধরনের বিস্ফোরণ ঘটে এবং আগুনের শিখা আকাশে উঠতে দেখা যায়। হামলার স্থানের কাছাকাছি বাস করা একটি দাতব্য সংস্থার স্বেচ্ছাসেবক খালেদ মাহমুদ বলেন, হামলার পরপরই তিনিসহ অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবকরা সাহায্যের জন্য ছুটে যান। কিন্তু হামলার ভয়াবহতা দেখে তারা হতবাক হন।

এদিকে, ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ বলেছে, তারা 'উলেস্নখযোগ্য সংখ্যক হামাস সন্ত্রাসীকে' আঘাত করেছে, যারা খান ইউনিসের মানবিক অঞ্চলের ভেতর একটি কমান্ড এবং নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রে কাজ করছিল। ইসরাইলের দাবি, 'হামলার আগে, সুনির্দিষ্ট যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহার করে ওপর থেকে নজরদারির পাশাপাশি অতিরিক্ত অন্যান্য উপায় অবলম্বনসহ বেসামরিকদের ক্ষতির ঝুঁকি কমানোর জন্য অনেক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল।'

উলেস্নখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরাইল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরাইলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া ইসরাইলি আগ্রাসনের কারণে ২০ লাখের বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরাইলি এই আক্রমণের ফলে গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ৪১ হাজার মানুষ নিহত এবং আরও ৯৪ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।

হামাসের সঙ্গে সাময়িক যুদ্ধবিরতি সম্ভব

বললেন ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী

এদিকে, ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে সায় দেয়নি ইসরাইল। হামাসকে তেল আবিব সাময়িক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে। ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ত বলেছেন, হামাসের সঙ্গে সাময়িক যুদ্ধবিরতির জানালাও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তিনি বিশ্বাস করেন, এই অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে লেবাননের দক্ষিণ সীমান্তের অস্থির পরিস্থিতিও নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। সোমবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা জানিয়েছেন ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইয়োভ গ্যালান্ত বলেন, গাজায় জিম্মিদের মুক্তির জন্য ছয় সপ্তাহব্যাপী একটি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির দিকে এগোনো যেতে পারে। গাজায় ক্রমবর্ধমান প্রাণহানির মধ্যে হামাসের স্থায়ী যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব সত্ত্বেও ইসরাইল এতে রাজি নয়।

ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, গাজায় জিম্মিদের মুক্তির লক্ষ্যে ইসরাইল ছয় সপ্তাহের অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির চুক্তি করতে আগ্রহী। চুক্তির সময় পার হওয়ার পর তেল আবিব যথারীতি গাজায় তাদের কার্যক্রম পুনরায় শুরু করবে বলে জানিয়েছেন ইয়োভ গ্যালান্ত। তিনি বলেছেন, 'আমরা লক্ষ্য অর্জনে আমাদের অধিকার অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করব।' এর মাধ্যমে তিনি গাজা থেকে হামাসকে নির্মূলের বিষয়টি উলেস্নখ করেছেন।

হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে চলমান ভয়াবহ যুদ্ধের ইতি টানতে মিসর এবং কাতারের মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে আমেরিকা গত এক মাসের বেশি সময় ধরে কাজ করছে। মার্কিন হস্তক্ষেপ সত্ত্বেও গাজায় যুদ্ধ বিরাজমান। হামাসের দাবি হচ্ছে, অনতিবিলম্বে গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে হবে এবং উপত্যকা থেকে ইসরাইলি সেনাদের প্রত্যাহার করে নিতে হবে। তবে ইসরাইল মাত্র দেড় মাসের জন্য অস্থায়ীভাবে তাদের সেনা প্রত্যাহারের কথা জানিয়েছে। উভয়পক্ষের ভিন্ন দাবির ফলে মধ্যস্থতাকারী দেশগুলোর আলোচনা বাস্তবে রূপ পাচ্ছে না।

ইসরাইলের অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে আমেরিকা। দেশটি তিন পর্বে এই যুদ্ধবিরতি কার্যকরের একটি খসড়া প্রস্তুত করেছে। সেখানে ছয় সপ্তাহের মধ্যে ৭০ জন জিম্মির মুক্তির কথা উলেস্নখ করা হয়েছে। ইসরাইলের ধারণা, এসব জিম্মি এখনো জীবিত রয়েছেন। বিনিময় ইসরাইলের কারাগার থেকে কয়েক ডজন ফিলিস্তিনিকে মুক্তির পাশাপাশি দেশটির জনবহুল এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহারের কথা জানিয়েছে ইসরাইল।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে