ইউরোপজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে ভয়াবহ তাপপ্রবাহ। নজিরবিহীন এই পরিস্থিতিতে ফ্রান্স, ইতালি, স্পেন, জার্মানি, পর্তুগাল, গ্রিস, যুক্তরাজ্যসহ একাধিক দেশে জারি করা হয়েছে সর্বোচ্চ সতর্কতা। দেশে শিক্ষ প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। জনজীবনে নেমে এসেছে বিপর্যয়।
ফ্রান্সের প্যারিসসহ ১৬টি অঞ্চলে জারি হয়েছে 'রেড অ্যালার্ট', আরও ৬৮ অঞ্চলে ‘অরেঞ্জ অ্যালার্ট’ জারি রয়েছে।
ফ্রান্সের জলবায়ু মন্ত্রণালয় একে ‘নজিরবিহীন পরিস্থিতি’ আখ্যা দিয়েছে। সোমবার পর্যন্ত দেশটির মূল ভূখণ্ডের ৯৬টির মধ্যে ৮৪টি অঞ্চলেই তাপপ্রবাহজনিত সতর্কতা ছিল।
তীব্র গরমে দেশটির দক্ষিণ কর্বিয়েরেস অঞ্চলের বনে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। বেশ কয়েকটি গ্রাম খালি করে দেওয়া হয় এবং একটি মহাসড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তাপদাহের কারণে দেশজুড়ে প্রায় ২০০টি স্কুল আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।
ইতালিতে জরুরি সতর্কতা: ইতালির রোম, মিলান, ভেনিস ও সার্ডিনিয়াসহ ২১টি শহরে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি হয়েছে। জরুরি চিকিৎসা সেবা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। হিটস্ট্রোক ও গরমজনিত রোগ ১০ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ইতালির জরুরি চিকিৎসা বিভাগের এক উপ-সভাপতি।
যুক্তরাজ্য ও স্পেনে রেকর্ড গরম: সোমবার যুক্তরাজ্যের হিথ্রো বিমানবন্দরে রেকর্ড ৩৩.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়। টেনিস টুর্নামেন্ট উইম্বলডনেও দেখা গেছে ইতিহাসের উষ্ণতম দিন।
স্পেনের সেভিলে এক তরুণী জানান, “গরমে ঘুমাতে পারছি না, খাওয়াও বন্ধ হয়ে গেছে।” দেশটির বিভিন্ন অঞ্চল জুড়ে গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন।
পর্তুগাল, জার্মানি, তুরস্ক ও বলকান অঞ্চলেও বিপর্যয়: পর্তুগালের রাজধানী লিসবনসহ ৭টি জেলায় জারি রয়েছে সর্বোচ্চ সতর্কতা। জার্মানির রাইন নদীর পানি কমে যাওয়ায় পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।
তুরস্কে দাবানলে ঘরবাড়ি পুড়ে গেছে, ৫০ হাজারের বেশি মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে দমকল বাহিনী নিরন্তর চেষ্টা চালাচ্ছে।
ক্রোয়েশিয়া, মন্টিনেগ্রো, গ্রিস, সার্বিয়া, বসনিয়া, স্লোভেনিয়া ও উত্তর ম্যাসেডোনিয়াতেও রেকর্ড তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। কোথাও ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসও ছুঁয়ে গেছে।
শুধু মানুষ নয়, বিপর্যস্ত প্রকৃতিও: বিভিন্ন দেশে পাহাড়ি হিমবাহ দ্রুত গলছে। এড্রিয়াটিক সাগরে বিষাক্ত ‘লায়নফিশ’ দেখা যাচ্ছে। শুকনো বাতাসের কারণে মাটির আর্দ্রতা কমে যাচ্ছে, এতে মাঝারি গরমও রূপ নিচ্ছে ভয়ংকর তাপপ্রবাহে।
বিশেষজ্ঞ ও জাতিসংঘের উদ্বেগ: জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার টুর্ক হুঁশিয়ার করে বলেছেন, “এই তাপপ্রবাহ প্রমাণ করছে—জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে আমাদের প্রস্তুত হতে হবে।”
জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক জাতিসংঘ প্যানেল জানিয়েছে, গ্রিনহাউস গ্যাস বৃদ্ধির কারণে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বাড়ছে। ভবিষ্যতে এই ধরনের তাপপ্রবাহ আরও ঘন ঘন ও ভয়াবহ হয়ে উঠবে।
এই তীব্র গরম ইউরোপের জনজীবনের পাশাপাশি পরিবেশকেও মারাত্মক হুমকির মুখে ফেলছে। জীবাশ্ম জ্বালানি কমিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে যাওয়ার ওপরই জোর দিচ্ছেন পরিবেশ বিজ্ঞানীরা।