পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে নতুন করে ছড়িয়ে পড়া সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় কমপক্ষে ৩২ জন নিহত ও ৪৭ জন আহত হয়েছে। দেশটির এই প্রদেশে শিয়া যাত্রীবাহী গাড়িতে বন্দুকধারীদের হামলায় ৪৩ জনের প্রাণহানির দুদিন পর নতুন সহিংসতায় হতাহতের এ ঘটনা ঘটেছে। তথ্যসূত্র : এএফপি

আফগানিস্তান সীমান্তসংলগ্ন পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে সুন্নি ও শিয়া মুসলমানদের মধ্যে গত কয়েক মাস ধরে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। সাম্প্রদায়িক এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত প্রায় দেড়শ জন নিহত হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন দেশটির জ্যেষ্ঠ এক প্রশাসনিক কর্মকর্তা বলেছেন, 'প্রদেশের একাধিক স্থানে শিয়া ও সুন্নি সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘাত চলছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এতে ৩২ জন নিহত হয়েছেন। যাদের মধ্যে ১৪ জন সুন্নি এবং ১৮ জন শিয়া মতাবলম্বী।'

এর আগে গত বৃহস্পতিবার কুররাম জেলায় পুলিশি পাহারায় ভ্রমণের সময় শিয়া মুসলমানদের দুটি যাত্রীবাহী ভ্যানে হামলা চালান সশস্ত্র বন্দুকধারীরা। এ হামলায় অন্তত ৪৩ জন নিহত ও ১১ জন আহত হয়। আহতদের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে প্রদেশের সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

বৃহস্পতিবারের হামলার প্রতিশোধে শুক্রবার সন্ধ্যায় শিয়া মুসলমানরা কুররাম জেলার সুন্নি অধু্যষিত কয়েকটি স্থানে হামলা চালান। অতীতে খাইবার পাখতুনখোয়ার এই জেলা আধা-স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হিসেবে ছিল; যেখানে বছরের পর বছর ধরে চলা সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় শত শত মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে।

কুররাম পুলিশের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা বলেন, 'সন্ধ্যা ৭টার দিকে শিয়া মতাবলম্বী একদল ক্ষুব্ধ ব্যক্তি সুন্নি অধু্যষিত বাগান বাজারে হামলা চালায়।' তিনি বলেন, গুলি চালানোর পর তারা পুরো মার্কেটে আগুন ধরিয়ে দেন। আশপাশের বাড়িতে ঢুকেও পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় হামলাকারীরা। প্রাথমিক তদন্তে দেখা যায়, তিন শতাধিক দোকান ও ১০০টির বেশি বাড়ি পুড়ে গেছে।

পুলিশ জানায়, সংঘর্ষের সময় স্থানীয় সুন্নিরাও হামলাকারীদের লক্ষ্য করে পাল্টা গুলি চালিয়েছে। কুররামের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জাভেদুলস্নাহ মেহসুদ বলেন, স্থানীয় প্রবীণদের সহায়তায় নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েনের মাধ্যমে সেখানে শান্তি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।

সুন্নি-সংখ্যাগরিষ্ঠ পাকিস্তানে উপজাতীয় ও পারিবারিক বিবাদের ঘটনা প্রায়ই ঘটে। দেশটিতে শিয়া সম্প্রদায় সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে বৈষম্য ও সহিংসতার শিকার হয়ে আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রদেশে পৃথক ঘটনায় সেনাবাহিনীর অন্তত ২০ সেনার প্রাণহানির মাত্র কয়েকদিন পর সর্বশেষ এই সাম্প্রদায়িক সংঘাতের সূত্রপাত হয়েছে।