বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২
আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তীব্র নিন্দা

আফগানিস্তানে পাকিস্তানের বিমান হামলা:নারী ও শিশুসহ নিহত ৪৬

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
আফগানিস্তানে পাকিস্তানের বিমান হামলা:নারী ও শিশুসহ নিহত ৪৬
আফগানিস্তানে পাকিস্তানের নজিরবিহীন বিমান হামলা:প্রতীকী ছবি

আফগানিস্তানের পাকতিকা প্রদেশে পাকিস্তানের বিমান হামলায় ৪৬ জন নিহত হয়েছে। তালেবান প্রশাসনের মুখপাত্রের বরাতে বুধবার এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি। মুখপাত্র জাবিহুলস্নাহ মুজাহিদ বলেন, মঙ্গলবার রাতে পাকতিকা প্রদেশের বারমাল জেলায় চারটি পয়েন্টে বোমাবর্ষণ করেছে পাকিস্তান। এতে মোট মৃতের সংখ্যা ৪৬ জন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।

এর আগে, বার্তা সংস্থা এপি জানায়, আফগানিস্তানের পাকতিকা প্রদেশে সন্দেহভাজন পাকিস্তানি তালেবানদের একাধিক ঘাঁটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান। এতে একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ধ্বংস এবং কিছু বিদ্রোহী নিহত হয়েছেন বলে নিরাপত্তা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

1

নিরাপত্তা সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার পাকিস্তানের সঙ্গে সীমান্তবর্তী পার্বত্য এলাকায় এই হামলাগুলো চালানো হয়। তবে যুদ্ধবিমানগুলো কতটা গভীরে প্রবেশ করেছিল এবং কীভাবে এই হামলা পরিচালিত হয়েছিল তা এখনো পরিষ্কার নয়। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর কোনো মুখপাত্র এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্য করেননি।

তবে কাবুলে আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পাকিস্তানের এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তারা বলেছে, পাকিস্তানি হামলায় নারী ও শিশুসহ সাধারণ নাগরিকরা নিহত হয়েছেন। নিহতদের অধিকাংশই ওয়াজিরিস্তানের শরণার্থী।

মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আফগানিস্তান এই হামলাকে আন্তর্জাতিক নীতিমালার লঙ্ঘন এবং নির্লজ্জ আক্রমণ হিসেবে বিবেচনা করে এর তীব্র প্রতিবাদ জানায়।

এক্স পস্ন্যাটফর্মে আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, পাকিস্তানের এই একতরফা পদক্ষেপ কোনো সমস্যার সমাধান নয়। আমরা এই কাপুরুষোচিত হামলার জবাব দেবো এবং আমাদের ভূখন্ড রক্ষার অধিকারকে অগ্রাহ্য করবো না।

আফগানিস্তানে নজিরবিহীন বিমান হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান। মঙ্গলবার রাতে দেশটির পাকতিকা প্রদেশের বারমাল জেলায় এই হামলা করা হয়। এতে নারী ও শিশুসহ অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। হামলায় পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে একটি গ্রাম। আফগান সংবাদমাধ্যম খামা প্রেস এই খবর জানিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এদিন বারমাল জেলার অন্তত সাতটি গ্রামকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়। লামন গ্রামে নারী ও শিশুসহ এক পরিবারের পাঁচ সদস্য নিহত হয়েছে। একটি সূত্র খামা প্রেসকে জানিয়েছে, পাকতিকা প্রদেশের বারমাল জেলার 'মুর্গ বাজার' এলাকায় একটি গ্রাম পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে আরও মৃতদেহ উদ্ধারের কাজ চলছে। হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, পাকিস্তান যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে বোমা হামলা চালিয়েছে। তবে তালেবান বা পাকিস্তান কেউই এখন পর্যন্ত হতাহতের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও মন্তব্য করেনি। হামলায় পাকিস্তানি জেট বিমানের কথিত ব্যবহার এই অঞ্চলে উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত এই হামলার দায় স্বীকার করে কোনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়নি।

আফগানিস্তানে বিমান হামলা চালানোর কয়েক ঘণ্টা আগে দেশটির সরকারি প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছিল পাকিস্তানের একটি প্রতিনিধি দল। বৈঠকের মূল আলোচ্য বিষয় ছিল দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যকার বিভেদগুলো দূর করা এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নয়ন। আফগানিস্তানে নিযুক্ত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত এবং দেশটির আফগানিস্তান বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি মোহাম্মদ সাদিক এ তথ্য জানিয়েছেন। মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে একটি ছবি পোস্ট করেছেন তিনি। সেখানে দেখা যাচ্ছে, আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির সঙ্গে বৈঠক করছেন মোহাম্মদ সাদিকের নেতৃত্বাধীন একটি প্রতিনিধি দল।

ছবিটির সঙ্গে সংযুক্ত বার্তায় মোহাম্মদ সাদিক বলেন, "আমরা আজ (আফগানিস্তানের) পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির সঙ্গে বৈঠক করেছি। বিভিন্ন ইসু্যতে বিস্তারিত আলাপ-আলোচনা হয়েছে আমাদের। বৈঠকে আমরা দুই দেশের সম্পর্কোন্নয়ন ও দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এই অঞ্চলকে শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতে পথে নিয়ে যেতে ঐকমত্যে পৌঁছেছি।

আগের দিন আফগানিস্তানের ভারপ্রাপ্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সিরাজউদ্দিন হাক্কানির সঙ্গেও বৈঠক করেছেন মোহাম্মদ সাদিক। সে তথ্যও এক্সবার্তায় উলেস্নখ করেছেন তিনি। মোহাম্মদ সাদিক এবং আমির খান মুত্তাকির বৈঠকের ১২ ঘণ্টার মধ্যেই আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ পাকতিকায় ব্যাপক বিমান হামলা পরিচালনা করে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা বাহিনী।

প্রদেশের বারমাল জেলার লামানসহ ৭টি গ্রামকে লক্ষ্য করে চালানো এ হামলায় মুর্গ বাজার নামের একটি গ্রাম সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে আফগানিস্তানের সংবাদমাধ্যম খামা নিউজ। বাকি গ্রামগুলোরেও উলেস্নখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এনায়েতুলস্নাহ খারাজমি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা এক বার্তায় জানিয়েছেন, পাকিস্তানের বিমান হামলায় অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে কয়েকজন শিশুও রয়েছে।

দক্ষিণ এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে টানাপোড়েনের মূল কারণ আফগান তালেবানগোষ্ঠীর পাকিস্তান শাখা তেহরিক-ই তালেবান (টিটিপি)। সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গি তৎপরতার কারণে কয়েক বছর আগে টিটিপিকে নিষিদ্ধ করেছে পাকিস্তানের সরকার। দেশটির উত্তরপশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ খাইবার পাখতুনখোয়ায় টিটিপি বেশ সক্রিয়। এই প্রদেশটির সঙ্গে আফগানিস্তানের সীমান্ত রয়েছে।

আফগানিস্তানের তালেবানগোষ্ঠী টিটিপিকে নিয়মিত বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে আসছে বলে বেশ কয়েক বার অভিযোগ করেছে ইসলামাবাদ, তবে কাবুল সে অভিযোগ বরাবর প্রত্যাখ্যান করেছে। ২০২১ সালে আফগান তালেবানগোষ্ঠী কাবুল দখল করার পর খাইবার পাখতুনখোয়ায় টিটিপির সন্ত্রাসবাদী তৎপরতা কয়েক গুণ বৃদ্ধি পায়। এই গোষ্ঠীটিকে নির্মূল করতে সেখানে নিয়মিত অভিযান শুরু করে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। অভিযান থেকে বাঁচতে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আফগানিস্তানে আশ্রয় নেওয়া শুরু করেন পাকিস্তানের অনেক নাগরিক। আফগানিস্তানও তাদের প্রায় নাগরিকের মর্যাদা দিয়ে গ্রহণ করে। পাকিস্তানের অভিযোগ্ত কাবুলে ক্ষমতাসীন তালেবান সরকার আফগানিস্তানকে টিটিপি ও তার সমমনা গোষ্ঠীগুলোর 'নিরাপদ স্বর্গরাজ্যে' পরিণত করেছে। টিটিপিকে দমনের জন্য কাবুলকে যৌথ অভিযান পরিচালনার প্রস্তাবও দিয়েছে ইসলামাবাদ। এদিকে তালেবান সরকার টিটিপির সঙ্গে সম্পর্ক থাকার তথ্য পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করলেও যৌথ অভিযানের প্রস্তাবে অনীহা জানিয়েছে।

এদিকে, কাবুলে আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পাকিস্তানের এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তারা বলেছে, পাকিস্তানি হামলায় নারী ও শিশুসহ সাধারণ নাগরিকরা নিহত হয়েছেন। নিহতদের অধিকাংশই ওয়াজিরিস্তানের শরণার্থী।

মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আফগানিস্তান এই হামলাকে আন্তর্জাতিক নীতিমালার লঙ্ঘন এবং নির্লজ্জ আক্রমণ হিসেবে বিবেচনা করে এর তীব্র প্রতিবাদ জানায়।ৎ স্থানীয় বাসিন্দাদের বরাতে জানা গেছে, হামলায় অন্তত আটজন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে নারী ও শিশুরাও রয়েছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় এক্স পস্ন্যাটফর্মে আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, পাকিস্তানের এই একতরফা পদক্ষেপ কোনো সমস্যার সমাধান নয়। আমরা এই কাপুরুষোচিত হামলার জবাব দেবো এবং আমাদের ভূখন্ড রক্ষার অধিকারকে অগ্রাহ্য করবো না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে