দক্ষিণ-পূর্ব আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিকের একটি কারাগারে ভয়াবহ দাঙ্গার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় কমপক্ষে ৩৩ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও ১৫ জন। এছাড়া দাঙ্গার মধ্যে কারাগার থেকে ১৫০০ জনেরও বেশি বন্দি পালিয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার পৃথক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স এবং সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
মোজাম্বিকের রাজধানী মাপুতোতে একটি কারাগারের দাঙ্গায় ৩৩ জন নিহত এবং আরও ১৫ জন আহত হয়েছেন বলে দেশটির পুলিশ প্রধান বার্নার্ডিনো রাফায়েল জানান। মূলত গত অক্টোবরে বিতর্কিত নির্বাচনের পর থেকে দেশটিতে অস্থিরতা অব্যাহত রয়েছে।
নির্বাচনে দীর্ঘদিনের ক্ষমতাসীন দল ফ্রেলিমোর বিজয় নিশ্চিত করে মোজাম্বিকের শীর্ষ আদালতের দেওয়া গত সোমবারের একটি সিদ্ধান্তের জেরে বিরোধী দল এবং তাদের সমর্থকরা দেশব্যাপী নতুন করে বিক্ষোভ শুরু করেছে। তারা বলছে, অক্টোবরে অনুষ্ঠিত ওই ভোটে কারচুপি হয়েছে।
পুলিশ বলছে, বিতর্কিত নির্বাচনের ফলাফলকে ঘিরে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে মোজাম্বিকের একটি কারাগার থেকে ১৫০০ জনেরও বেশি বন্দি পালিয়ে গেছেন। পুলিশ প্রধান বার্নার্ডিনো রাফায়েল এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, রক্ষীদের সঙ্গে সংঘর্ষে ৩৩ জন নিহত ও আরও ১৫ জন আহত হয়েছেন। যদিও পালিয়ে যাওয়ার পর প্রায় ১৫০ জন পলাতক বন্দিকে পুনরায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। ১৯৭৫ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা ক্ষমতাসীন ফ্রেলিমো দল গত অক্টোবরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভ করেছে বলে মোজাম্বিকের সর্বোচ্চ আদালত নিশ্চিত করার পর সোমবার থেকেই দেশটিতে বিক্ষোভ শুরু হয়। রাফায়েল বলেন, বুধবার সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীরা রাজধানী মাপুতোর কারাগারের কাছে পৌঁছান। তিনি বলেন, অশান্তির মধ্যে বন্দিরা একটি দেওয়াল ভেঙে পালিয়ে যান। মূলত গত অক্টোবরের বিতর্কিত নির্বাচনের পর থেকে মোজাম্বিক অস্থিরতা বিরাজ করছে। অফিসিয়াল ফলাফলে দেখা গেছে, প্রেসিডেন্ট পদে ক্ষমতাসীন ফ্রেলিমোর প্রার্থী ড্যানিয়েল চ্যাপো বিজয়ী হয়েছে। কিন্তু গত সোমবার নতুন করে বিক্ষোভ শুরু হয়। মূলত সেদিনই দেশটির সাংবিধানিক আদালত চ্যাপো নির্বাচনে জয়ী হয়েছে বলে রায় দিয়েছিল। নির্বাচনের পর থেকে গত তিন মাসের বিক্ষোভে আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলীয় এই দেশটিতে প্রায় ১৫০ জন নিহত হয়েছেন বলেও জানিয়েছে বিবিসি।
নির্বাচনে দীর্ঘদিনের ক্ষমতাসীন দল ফ্রেলিমোর বিজয় নিশ্চিত করে সোমবার সিদ্ধান্ত জানায় মোজাম্বিকের শীর্ষ আদালত। এর পরই অক্টোবরে অনুষ্ঠিত ওই ভোটে কারচুপি হয়েছে এমন অভিযোগ এনে দেশব্যাপী নতুন করে বিক্ষোভ শুরু করে বিরোধী দল ও তাদের সমর্থকরা। আর রাজনৈতিক এই অস্থিরতার সুযোগ নিয়েই ওই কারাগারের দেয়াল ভেঙ্গে পালায় কারাবন্দিরা। মোজাম্বিকে অক্টোবরে অনুষ্ঠিত বিতর্কিত নির্বাচন নিয়ে শুরু হওয়া রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেই কারাগারে দাঙ্গার এ ঘটনা ঘটল।
\হঅভিযোগ করা হয়,কারাগারের বাইরে থেকে বন্দিদের দাঙ্গার বাঁধানোর জন্য উস্কানি দেয়া হয়। তবে দেশটির আইন ও বিচারমন্ত্রী হেলেনা কিডা স্থানীয় বেসরকারি সম্প্রচারমাধ্যম মিরামার টেলিভিশনকে বলেছেন, "কারাগারের ভেতরেই অস্থিরতা শুরু হয় আর এর সঙ্গে বাইরের বিক্ষোভের কোনো সম্পর্ক ছিল না।" গণমাধ্যমকে দেওয়া এক ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, "কারাগারটিতে দাঙ্গার কারণে ৩৩ জনের মৃতু্য হয়েছে আর আরও ১৫ জন আহত হয়েছেন।" কারাগারটিতে যারা হতাহত হয়েছেন তাদের পরিচয় স্পষ্ট নয়।
কারাগারটি থেকে ১৫৩৪ জন বন্দি পালিয়ে গেলেও পরে ১৫০ জনকে আবার আটক করা হয় এই কারাগারের পাশাপাশি আরও দুইটি কারাগার ভেঙে বন্দিরা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। মঙ্গলবার দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পর দেখা দেওয়া অস্থিরতায় অন্তত ২১ জন নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবারের আগে পর্যবেক্ষক গোষ্ঠী পস্ন্যাটাফর্মা ডিসাইড জানিয়েছিল, অস্থিরতা শুরু হওয়ার পর থেকে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভাকারীদের সংঘর্ষে অন্তত ১৩০ জন নিহত হয়েছেন।
গত সোমবার ক্ষমতাসীন দল ফ্রেলিমোকে নির্বাচনে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। দীর্ঘদিন ধরেই মোজাম্বিকে ক্ষমতায় রয়েছে ফ্রেলিমো। তবে শীর্ষ আদালতের ওই ঘোষণার পর বিরোধী দল এবং তাদের সমর্থকরা দেশজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু করে। এই নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ আনা হয়েছে। নির্বাচনের ফলাফলকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় ২১ জনের নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। নিহতদের মধ্যে দুজন পুলিশ কর্মকর্তাও রয়েছেন।