২০১২ সালের ওবামা-রমনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রচলিত রাজনৈতিক ধারা অনুযায়ী সর্বশেষ নির্বাচন। এরপর থেকে মার্কিন রাজনীতিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের রক্ষণশীল পপুলিজম নতুন মাত্রা এনে দিয়েছে। ২০১২ সালে বারাক ওবামার পুননির্বাচন দেখে মনে হয়েছিল, এটি ডেমোক্র্যাটিক আধিপত্যের একটি নতুন যুগের সূচনা। তরুণ, ধর্মনিরপেক্ষ ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের সমর্থন ছিল সেই সময়ের চালিকাশক্তি। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে সেই নির্বাচন ছিল একটি যুগের সমাপ্তি। ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে ২০১৬, ২০২০ ও ২০২৪ সালের নির্বাচন প্রমাণ করেছে যে যুক্তরাষ্ট্রে একটি নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতা তৈরি হয়েছে। ট্রাম্পের নেতৃত্বে রিপাবলিকান পার্টি ঐতিহ্যবাহী ছোট সরকার, ধর্মীয় রক্ষণশীলতা ও পররাষ্ট্রনীতির অবস্থান থেকে সরে এসে শ্রমজীবী মানুষের প্রতিনিধিত্ব, অভিবাসন নীতি ও অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদের দিকে ঝুঁকেছে।
ট্রাম্পের পূর্বে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট পার্টির মূল এজেন্ডাগুলো ছিল পূর্বানুমেয়। রিপাবলিকানরা অর্থনৈতিক রক্ষণশীলতা, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও পররাষ্ট্রনীতির ওপর জোর দিত। অন্যদিকে, ডেমোক্র্যাটরা শ্রমজীবী শ্রেণি ও সামাজিক পরিবর্তনের পক্ষে অবস্থান নিতো।
তবে ট্রাম্প রাজনীতিতে আসার পর এই বিভাজন পাল্টে যায়। তিনি শ্রমজীবী শ্রেণির স্বার্থরক্ষায় সরব হন, অভিজাতদের সমালোচনা করেন এবং পররাষ্ট্রনীতির প্রচলিত ধারণাগুলোর বিরোধিতা করেন। অন্যদিকে, ডেমোক্র্যাটরা প্রতিষ্ঠান ও পুরোনো নীতি আদর্শের পক্ষ নিয়ে ট্রাম্পের বিরোধিতা শুরু করেন। ট্রাম্প যুগে অভিবাসন, মুক্তবাণিজ্য, যুদ্ধপরবর্তী মিত্রতা ও গণতন্ত্রের মতো বিষয়গুলো দ্বিদলীয় ঐকমত্যের জায়গা থেকে সরে গিয়ে প্রধান বিরোধের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একই সঙ্গে ২০০৪ বা ২০১২ সালের মতো বিভাজনমূলক বিষয় বিশেষ করে ইরাক যুদ্ধ, সামাজিক নিরাপত্তা বা সমকামী বিবাহ, এখন আর তেমন আলোচিত নয়।
ট্রাম্পের রক্ষণশীল পপুলিজম মার্কিন রাজনীতিতে নতুন ধরনের ভোটার জোট তৈরি করেছে। তিনি স্নাতক ডিগ্রিহীন শ্বেতাঙ্গ ভোটারদের মধ্যে জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছেন, যা রিপাবলিকান পার্টির জন্য আগে বিরল ছিল। এ ছাড়া তিনি কৃষ্ণাঙ্গ, হিস্পানিক ও এশীয় ভোটারদের উলেস্নখযোগ্য সমর্থন পেয়েছেন। ২০২৪ সালের নির্বাচনের পর দেখা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রে স্নাতক ডিগ্রিধারী ও ডিগ্রিহীন ভোটারদের মধ্যে বিভাজন এখন সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক ফারাক।