বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২

উত্তর গাজার শেষ হাসপাতালটি জ্বালিয়ে দিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী

হাসপাতাল পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা 'সুস্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ':হামাস
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
উত্তর গাজার শেষ হাসপাতালটি জ্বালিয়ে দিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী
ইসরাইলি হামলার পর গাজার কামাল আদওয়ান হাসপাতাল। ছবি: মানবাধিকার সংস্থা

ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় উত্তর গাজার সর্বশেষ হাসপাতালের কার্যক্রমও বন্ধ হয়ে গেছে। শুক্রবার কামাল আদওয়ান হাসপাতালের কাছে হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। এক বিবৃতিতে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী দাবি করেছে যে, হামাসকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে। উত্তর গাজায় প্রায় সব হাসপাতালের কার্যক্রমই বন্ধ রয়েছে। সর্বশেষ কামাল আদওয়ান হাসপাতালেও হামলা চালানোর কারণে এর কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। সামাজিক মাধ্যমে এক পোস্টে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, প্রাথমিক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে ইসরাইলি বাহিনীর অভিযানের সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ মারাত্মকভাবে পুড়ে গেছে এবং ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে ইসরাইলি বাহিনী এক বিবৃতিতে দাবি করেছে যে, অক্টোবরে ইসরাইলি বাহিনী উত্তর গাজায় বিস্তৃত অভিযান শুরু করার পর থেকে হাসপাতালটি হামাসের মূল ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে এবং সেখানে হামাসের কার্যক্রম চলছিল। এমন অভিযোগ এনেই সেখানে বেসামরিকদের ওপর হামলা চালিয়েছে দখলদার বাহিনী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, ইসরাইলি হামলার সময় ৬০ জন স্বাস্থ্য কর্মী এবং ২৫ জন গুরুতর রোগী হাসপাতালে অবস্থান করছিল। জাতিসংঘের স্বাস্থ্য বিষয়ক সংস্থাটি জানিয়েছে, মাঝারি থেকে গুরুতর অবস্থায় রোগীদের বাধ্য হয়ে ধ্বংসপ্রাপ্ত এবং অকার্যকর ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতালে সরিয়ে নিতে হয়েছে। এসব রোগীর নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

1

উত্তর গাজার শেষ হাসপাতালটি পুড়িয়ে দেয়ার আগে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী শুক্রবার কামাল আদওয়ান হাসপাতালটিতে ব্যাপক অভিযান চালায়। এতে হাসপাতালটির বেশিরভাগ ওয়ার্ড ধ্বংস হয়ে যায়। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এই অভিযানকে 'বর্বর' বলে বর্ণনা করেছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরাইলি সামরিক বাহিনী কামাল আদওয়ান হাসপাতালের পরিচালক হুসাম আবু সাফিয়াসহ বেশ কয়েকজন কর্মচারীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে গেছে। অনেক রোগীর ভাগ্য অজানা। কারণ সেনারা জোরপূর্বক হাসপাতালটি খালি করেছে।

জাতিসংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডবিস্নউএইচও) বলেছে, গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পদ্ধতিগত ধ্বংস হাজার হাজার ফিলিস্তিনির জন্য মৃতু্যদন্ড স্বরূপ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে ডবিস্নউএইচও বলেছে, প্রাথমিক খবরে এ অভিযানে হাসপাতালের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ মারাত্মকভাবে পুড়ে গেছে এবং ধ্বংস হয়ে গেছে বলে ইঙ্গিত মিলেছে। এর আগে উত্তর গাজার বেইত লাহিয়া এলাকার কামাল আদওয়ান হাসপাতালে অভিযান চালানোর কথা জানায় ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। তাদের দাবি, হাসপাতালটির হামাসের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল। এ অভিযোগ অস্বীকার করে হাসপাতাল পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনাকে 'সুস্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ' বলে মন্তব্য করেছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। বার্তা আদান-প্রদানের অ্যাপ টেলিগ্রামে সংগঠনটি বলেছে, 'যুক্তরাষ্ট্র ও কিছু পশ্চিমা দেশের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে গাজায় যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত করছে দখলদার ইসরায়েলি সরকার। জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা (ইউএনআরডবিস্নউএ) অবিলম্বে গাজায় মানবিক সহায়তার প্রবাহ দাবি করেছে। কারণ শিশুরা ঠান্ডায় মারা যাচ্ছে।

কামাল আদওয়ান হাসপাতালের নার্সিং বিভাগের প্রধান ঈদ সাব্বাহ বিবিসিকে বলেন, শুক্রবার সকাল ৭টার দিকে সেনাবাহিনী তাদের হাসপাতালে রোগী ও কর্মীদের সরিয়ে নিতে প্রশাসনকে ১৫ মিনিট সময় দেয়। পরে ইসরাইলি সেনারাই হাসপাতালে প্রবেশ করে বাকি রোগীদের সরিয়ে দিয়েছে বলে জানান তিনি। ইসরাইলি সামরিক বাহিনী শুক্রবার বিকেলে জানায়, তারা হাসপাতাল এলাকায় অভিযান চালাচ্ছে। তারা ্তুহাসপাতালকে হামাসের শক্ত ঘাঁট্থি বলে অভিহিত করেছে।

বিবিসি লিখেছে, অভিযান শুরুর আগে ইসরাইলি সেনারা হাসপাতাল থেকে বেসামরিক, রোগী ও চিকিৎসাকর্মীদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করে। তবে রোগীদের কোথায় নিয়ে যাওয়া হবে তা জানায়নি সেনাবাহিনী। সপ্তাহের শুরুতে এক ইসরাইলি কর্মকর্তা জানান, তারা কামাল আদওয়ান হাসপাতালের আহতদের নিকটবর্তী ইন্দোনেশিয়ার হাসপাতালে স্থানান্তরের পরিকল্পনা করেছেন। চিকিৎসক সাব্বাহ বলেন, "এটি বিপজ্জনক কারণ অনেক রোগী কোমায় রয়েছেন। তাদের ভেন্টিলেশন মেশিনের প্রয়োজন হয়। মুমূর্ষু রোগীদের স্থানান্তরিত করা খুবই বিপদজনক। "সেনাবাহিনী যদি এসব রোগীকে সরিয়ে নিতে চায়, তাহলে তাদের বিশেষায়িত গাড়ির প্রয়োজন হবে", বলেন তিনি।

তার কিছুক্ষণ পর গাজার উপ-স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইউসুফ আবু-আল রিশ বিবিসিকে বলেন, "আশঙ্কাজনক অবস্থায় রোগীদের ইন্দোনেশিয়ার একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।" তিনি বলেন, "ঠিক হাসপাতাল বলা যায় না। এটি একটি আশ্রয়স্থল। রোগীদের জন্য প্রস্তুত নয়।' ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) আন্তর্জাতিক মুখপাত্র নাদাভ শোশানি শুক্রবার সন্ধ্যায় এক্স পোস্টে বলেন, 'প্রাথমিক তদন্ত অনুযায়ী, অভিযানের সময় হাসপাতালের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিভাগ মারাত্মকভাবে পুড়ে গেছে।'

আইডিএফ সৈন্যরা যখন হাসপাতালের ভিতরে ছিল না তখন আগুন লাগে জানিয়ে তিনি বলেন, "প্রাথমিক তদন্তে আইডিএফের ক্রিয়াকলাপের সঙ্গে আগুনের কোনও সংযোগ পাওয়া যায়নি।" এর কয়েক ঘণ্টা আগে কামাল আদওয়ান হাসপাতালের পরিচালক জানান, হাসপাতালের আশপাশের এলাকা লক্ষ্য করে চালানো ইসরায়েলি বিমান হামলায় পাঁচ মেডিকেল স্টাফসহ প্রায় ৫০ জন নিহত হয়েছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে